কদম ফুল বর্ষায় হয় বলেই জানতাম। নাকি এদের মাথাও আমাদের মত এলোমেলো হয়ে গেছে? এই দেশে কি এখন অনিয়মটাই নিয়ম হয়ে গেছে?
স্টেশনের স্কুলটায় এক ছাত্রের হাতে দেখি এক গোছা কদম ফুল। আমি হাঁ করে তাকিয়ে আছি! ঘটনা কী? বাংলা-বাংলা বলে আমরা মুখে ফেনা তুলে ফেলি কিন্তু বাংলা মাস কোনটা চলছে এটা বলতে পারি না। এই দোষে আমি নিজেও দুষ্ট। কেবল পত্রিকায় নিয়ম করে ছাপানো হয়। কার্তিক মাস প্রায় শেষ।
আমি বলেছিলাম, আমাকে দুইটা দিবা? এ সবগুলোই আমার হাতে ধরিয়ে দিল। ছোট-ছোট সুখ সারায় অসুখ...।
ডোবার গভীরতা যেমন খুঁজে লাভ নাই, তেমনি এখানেও। ভারী ভারী লেখা লিখে ক্লান্ত লাগে। এখানে হালকা চালের লেখা লিখে চেপে রাখা শ্বাস ফেলতে পারি। মূলত এই সাইটটা আমার নিজের জন্য এবং অল্প কিছু পছন্দের মানুষদের জন্য। বিচিত্র কারণে যারা আমার দোষ খুঁজে পান না...।
Sunday, 14 November 2010
Tuesday, 19 October 2010
শৈশব ফিরে আসে, বারবার
কিছু লোকজন এসেছেন আমার এখানে বেড়াতে। স্কুল দেখাটাও এই বেড়াবার সঙ্গে যুক্ত। এদের একজন হচ্ছেন, 'স্বরহীন'। একটা ওয়েব সাইটে আমি যখন 'শুভ' নামে লেখালেখি করতাম ওখানে এই ভদ্রমহিলার নিক ছিল স্বরহীন। আমি ফাজলামী করে বলতাম, স্বরহীন দিদির গলায় স্বর নাই, চিঁ চিঁ করে কি বলেন কিছুই তো বুঝি না!
সম্প্রতি ইনি পিএইচডি করে আমেরিকা থেকে ফিরেছেন। সুখের বিষয় হচ্ছে, দেশেই থিতু হবেন বলে স্থির করেছেন। পুরনো দিনের হাবিজাবি কথায় দিন পার হয়। এক ফাঁকে এখানে আসা হয়!
আমার শৈশবের একটা বড়ো অংশ কেটেছে এই জায়গাটায়, বছরের-পর-বছর। অজস্র স্মৃতিতে মাখামাখি হয়ে আছে জায়গাটা। হায় স্মৃতি, এই স্মৃতিই একজন মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে নইলে মানুষ কবে মরে ভূত হয়ে যেত!
এটা খাদ্য গুদামের একটা বাংলো। এখন এখানে কেউ থাকে না। আমার বাসা থেকে খুব একটা দূরে না কিন্ত আসা হয়নি বহু বছর! আজ এদের কল্যাণে আসা হলো, কত বছর পর! কেবলই মনে হচ্ছিল শৈশবটাকে হাত বাড়ালেই যেন ছুঁতে পারি...।
সম্প্রতি ইনি পিএইচডি করে আমেরিকা থেকে ফিরেছেন। সুখের বিষয় হচ্ছে, দেশেই থিতু হবেন বলে স্থির করেছেন। পুরনো দিনের হাবিজাবি কথায় দিন পার হয়। এক ফাঁকে এখানে আসা হয়!
আমার শৈশবের একটা বড়ো অংশ কেটেছে এই জায়গাটায়, বছরের-পর-বছর। অজস্র স্মৃতিতে মাখামাখি হয়ে আছে জায়গাটা। হায় স্মৃতি, এই স্মৃতিই একজন মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে নইলে মানুষ কবে মরে ভূত হয়ে যেত!
এটা খাদ্য গুদামের একটা বাংলো। এখন এখানে কেউ থাকে না। আমার বাসা থেকে খুব একটা দূরে না কিন্ত আসা হয়নি বহু বছর! আজ এদের কল্যাণে আসা হলো, কত বছর পর! কেবলই মনে হচ্ছিল শৈশবটাকে হাত বাড়ালেই যেন ছুঁতে পারি...।
Friday, 15 October 2010
ছাত্র আছে, শিক্ষক আছে- স্কুল নাই!
স্কুলে ভর্তি হওয়ার জন্য যে কেউ আসলে আমি না করি না। বাচ্চার মা মদ বিক্রি করে নাকি আলকাতরার হালুয়া তাতে আমার কী আসে যায়!
স্টেশনের স্কুলটায় নিয়ম করে আমার থাকা হয়। একে দেখি সুড় সুড় করে স্কুলে ঢুকছে। আহা, বেচারা বড়ো আশা নিয়ে এসেছে কিন্তু একে শেখাবার মত জ্ঞান আমার নাই।
ব্লগ-ভুবনে স্বঘোষিত এমন বেশ কিছু ডাক্তার টাইপের লোকজন আছেন যাদেরকে আমি প্রকৃত জ্ঞানী মনে করি। ওইসব স্যাররা শেখান কে কেমন করে হাঁটবে, কে কেমন নাচবে ইত্যাদি। এরা আবার ভয়ে কাত হন না যদি জ্ঞান গড়িয়ে পড়ে।
স্যাররা যেদিন এদের জন্য স্কুল খুলবেন সেদিন এই বেচারাকে ওখানে পড়তে বলব। এই মুহূর্তে একে না বলতে খানিকটা দুঃখিতই হলাম...।
স্টেশনের স্কুলটায় নিয়ম করে আমার থাকা হয়। একে দেখি সুড় সুড় করে স্কুলে ঢুকছে। আহা, বেচারা বড়ো আশা নিয়ে এসেছে কিন্তু একে শেখাবার মত জ্ঞান আমার নাই।
ব্লগ-ভুবনে স্বঘোষিত এমন বেশ কিছু ডাক্তার টাইপের লোকজন আছেন যাদেরকে আমি প্রকৃত জ্ঞানী মনে করি। ওইসব স্যাররা শেখান কে কেমন করে হাঁটবে, কে কেমন নাচবে ইত্যাদি। এরা আবার ভয়ে কাত হন না যদি জ্ঞান গড়িয়ে পড়ে।
স্যাররা যেদিন এদের জন্য স্কুল খুলবেন সেদিন এই বেচারাকে ওখানে পড়তে বলব। এই মুহূর্তে একে না বলতে খানিকটা দুঃখিতই হলাম...।
Thursday, 14 October 2010
ব্ল্যাকবোর্ড!
আমি পূর্বের এক লেখায় লিখেছিলাম, স্কুল-বেলায় ব্ল্যাকবোর্ড [১] আমার জন্য কেমন ভীতিকর ছিল। আমার সাবকনশাস মাইন্ডে এর ছাপ রয়ে গিয়েছিল কি না আমি জানি না, বাসায় কয়েকটা জায়গায় ব্ল্যাকবোর্ড লাগিয়ে রেখেছি। দস্তুরমতো চক-ডাস্টার সবই থাকে। আমার নিজেরটা এখন অন্য কাজে ব্যবহার হয়, পিন দিয়ে জরুরি কাগজ-টাগজ ঝোলাই।
বাচ্চাদেরটায় এরা স্কুলের লেখা লিখতে এখন আর আগ্রহ বোধ করে না। মেয়েটা এক কাঠি সরেস, এ আঁক না কষে আঁকাআঁকি করে। সচরাচর ছয় বছরের বাচ্চাদের আঁকার বিষয় থাকে ছাতা-আম-গ্রামের দৃশ্য। এ এর ধারেকাছেও নেই। এ আঁকে জটিল ডিজাইন, অন্তত এর বয়স বিচার করলে। পরে এটা নাকি কাপড়ে ব্লক-প্রিন্ট করবে।
আমাদের কারও কোন সমস্যা নাই, সমস্যা বাচ্চাদের মাতাজির। বাসায় ব্ল্যাকবোর্ড লাগানো দেখে তিনি চিড়বিড় করে বলেছিলেন, বাসাটা আর বাসা থাকল না। ব্ল্যাকবোর্ডে বাচ্চারা আঁকে, লাফায় আর বাচ্চাদের মাতাজি হিসহিস করেন, নিজে উচ্ছন্নে গেছে এখন বাচ্চাদেরও...।
*ব্ল্যাকবোর্ড: http://www.ali-mahmed.com/2010/10/blog-post_13.html
বাচ্চাদেরটায় এরা স্কুলের লেখা লিখতে এখন আর আগ্রহ বোধ করে না। মেয়েটা এক কাঠি সরেস, এ আঁক না কষে আঁকাআঁকি করে। সচরাচর ছয় বছরের বাচ্চাদের আঁকার বিষয় থাকে ছাতা-আম-গ্রামের দৃশ্য। এ এর ধারেকাছেও নেই। এ আঁকে জটিল ডিজাইন, অন্তত এর বয়স বিচার করলে। পরে এটা নাকি কাপড়ে ব্লক-প্রিন্ট করবে।
আমাদের কারও কোন সমস্যা নাই, সমস্যা বাচ্চাদের মাতাজির। বাসায় ব্ল্যাকবোর্ড লাগানো দেখে তিনি চিড়বিড় করে বলেছিলেন, বাসাটা আর বাসা থাকল না। ব্ল্যাকবোর্ডে বাচ্চারা আঁকে, লাফায় আর বাচ্চাদের মাতাজি হিসহিস করেন, নিজে উচ্ছন্নে গেছে এখন বাচ্চাদেরও...।
*ব্ল্যাকবোর্ড: http://www.ali-mahmed.com/2010/10/blog-post_13.html
Friday, 8 October 2010
নৌকা ডুবে যায়, আমাকে ভাসিয়ে
আজ সকাল থেকেই ঝুম বৃষ্টি। সকাল থেকে বৃষ্টি, কথাটা খানিক ভুল বললাম, রাতভর, দিনভর- মনে হচ্ছে আকাশ ফুটো হয়ে গেছে!
আগেও লিখেছিল, এমন বৃষ্টির দিনে আমি কোথাও যেতে চাই না, এমন কি মরতেও চাই না [১]। কাদায় মাখামাখি হয়ে শব নিয়ে টানাটানি বড়ো বিচ্ছিরি, ছি!
লেখক-টেখকরা বৃষ্টি নিয়ে অনেক কেরামতি করেন। আমাদের হুমায়ূন আহমেদ সাহেবের একটা লেখা ক-দিন আগে পড়লাম, বৃষ্টি হচ্ছে অথচ তিনি বৃষ্টিতে ভিজছেন না এমনটা নাকি অচিন্তনীয়! এমন কি তিনি নাকি বসে বসে বজ্রপাতও দেখেন! মাগো!
যাগ গে, লেখকদের লেখক হওয়ার অনেক হ্যাপা। তারা বৃষ্টি গুলে সরবত বানিয়ে খাক এতে আমার কী!
বৃষ্টি আমার জন্য বড়ো যন্ত্রণার! আকাশ ক্রমশ অন্ধকার হয়, তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ে আমার অস্থিরতা! প্রকৃতির প্রভাব তার এই দুর্বল সন্তানের উপর দানবীয়! কী কান্ড, পুরুষ মানুষ কী একটা কুত্তা যে ভেউ ভেউ করে কাঁদবে? পাগল!
উঁচু রেললাইন থেকে বিপুল পানি নেমে উঠোনটা দেখি পানিতে ছয়লাব- ছোটখাটো একটা পুকুর হয়ে আছে। আমি হাতে কিল মেরে আমার দু-সন্তানকে বলি, চল, কাগজের নৌকা বানিয়ে ভাসাই।
আমার উল্লাস এদের তেমন স্পর্শ করে না। বড়োটা বলে, নাহ, থাক। ছোটটারও অগ্রজের মত অবিকল ভঙ্গি, নাহ...।
কাগজের নৌকা বানাতে গিয়ে দেখি এখনও ভুলিনি! আমার নিজের মস্তিষ্ক নামের জিনিসটার প্রতি তেমন একটা ভক্তি নাই! আশ্চর্য, কত প্রয়োজনীয় তথ্য হারামজাদা মনে রাখতে পারে না অথচ এই অপ্রয়োজনীয় জিনিসটা ঠিকই মনে রেখেছে! মানে কী এর? মস্তিষ্ক নামের জিনিসটা কী হাবিজাবি-গার্বেজ সব জমিয়ে রেখেছে?
আমার এই সব নিয়ে ভাবার সময় কোথায়, আমার নৌকা যে তরতর করে এগিয়ে যাচ্ছে- সটান, ঋজু। আমি দিব্য চোখে দেখতে পাচ্ছি, আমার সন্তানরা চোখ বড় বড় করে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে, বাবা নামের এমন একজন এমনটা করছে কেন? কাগজের নৌকা নিয়ে এতোটা উল্লসিত হওয়ার কী আছে! ব্যাটাদের এই সব বুঝিয়ে বলতে বয়েই গেছে আমার। বড় হয়ে পারলে বুঝবে, না পারলে বুঝবে না।
সহসাই আমার নৌকার আয়ু ফুরিয়ে আসে। ডুবে যায়, আমার আয়ু বাড়িয়ে দিয়ে...।
*ছবি স্বত্ব: সংরক্ষিত
সহায়ক লিংক:
১. আমি কোথাও...: http://www.ali-mahmed.com/2009/07/blog-post.html
আগেও লিখেছিল, এমন বৃষ্টির দিনে আমি কোথাও যেতে চাই না, এমন কি মরতেও চাই না [১]। কাদায় মাখামাখি হয়ে শব নিয়ে টানাটানি বড়ো বিচ্ছিরি, ছি!
লেখক-টেখকরা বৃষ্টি নিয়ে অনেক কেরামতি করেন। আমাদের হুমায়ূন আহমেদ সাহেবের একটা লেখা ক-দিন আগে পড়লাম, বৃষ্টি হচ্ছে অথচ তিনি বৃষ্টিতে ভিজছেন না এমনটা নাকি অচিন্তনীয়! এমন কি তিনি নাকি বসে বসে বজ্রপাতও দেখেন! মাগো!
যাগ গে, লেখকদের লেখক হওয়ার অনেক হ্যাপা। তারা বৃষ্টি গুলে সরবত বানিয়ে খাক এতে আমার কী!
বৃষ্টি আমার জন্য বড়ো যন্ত্রণার! আকাশ ক্রমশ অন্ধকার হয়, তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ে আমার অস্থিরতা! প্রকৃতির প্রভাব তার এই দুর্বল সন্তানের উপর দানবীয়! কী কান্ড, পুরুষ মানুষ কী একটা কুত্তা যে ভেউ ভেউ করে কাঁদবে? পাগল!
উঁচু রেললাইন থেকে বিপুল পানি নেমে উঠোনটা দেখি পানিতে ছয়লাব- ছোটখাটো একটা পুকুর হয়ে আছে। আমি হাতে কিল মেরে আমার দু-সন্তানকে বলি, চল, কাগজের নৌকা বানিয়ে ভাসাই।
আমার উল্লাস এদের তেমন স্পর্শ করে না। বড়োটা বলে, নাহ, থাক। ছোটটারও অগ্রজের মত অবিকল ভঙ্গি, নাহ...।
কাগজের নৌকা বানাতে গিয়ে দেখি এখনও ভুলিনি! আমার নিজের মস্তিষ্ক নামের জিনিসটার প্রতি তেমন একটা ভক্তি নাই! আশ্চর্য, কত প্রয়োজনীয় তথ্য হারামজাদা মনে রাখতে পারে না অথচ এই অপ্রয়োজনীয় জিনিসটা ঠিকই মনে রেখেছে! মানে কী এর? মস্তিষ্ক নামের জিনিসটা কী হাবিজাবি-গার্বেজ সব জমিয়ে রেখেছে?
আমার এই সব নিয়ে ভাবার সময় কোথায়, আমার নৌকা যে তরতর করে এগিয়ে যাচ্ছে- সটান, ঋজু। আমি দিব্য চোখে দেখতে পাচ্ছি, আমার সন্তানরা চোখ বড় বড় করে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে, বাবা নামের এমন একজন এমনটা করছে কেন? কাগজের নৌকা নিয়ে এতোটা উল্লসিত হওয়ার কী আছে! ব্যাটাদের এই সব বুঝিয়ে বলতে বয়েই গেছে আমার। বড় হয়ে পারলে বুঝবে, না পারলে বুঝবে না।
সহসাই আমার নৌকার আয়ু ফুরিয়ে আসে। ডুবে যায়, আমার আয়ু বাড়িয়ে দিয়ে...।
*ছবি স্বত্ব: সংরক্ষিত
সহায়ক লিংক:
১. আমি কোথাও...: http://www.ali-mahmed.com/2009/07/blog-post.html
Friday, 1 October 2010
কাটাকাটি-কাটাকুটি
বাসার লোকজনরা আমার উপর বিরক্ত কারণ কোন দিন কোন পত্রিকা রাখব এটা আমি নিজেও আগাম জানি না। যেটায় মনে হয় আমার কাজের খবর আছে সেটাই সচরাচর আনা হয়। আমার কাজের খবর দিয়ে অন্যদের কাজ কী!
এবং রাতের মধ্যে কেউ পত্রিকা না-পড়ে থাকলে সেই পত্রিকা পরের দিন পড়ার কোন যো থাকে না। কেবল এক পাতারই নমুনা দাঁড়ায় অনেকটা এই রকম:
আমার অনেক বছরের অভ্যাস, দরকারী খবরটা কেটে রেখে দেই, কখনও চোখ বুলিয়ে, কখনও-বা মনোযোগ সহকারে পড়ে। যা আমার জানার জন্য বা লেখালেখির জন্য কাজে লাগে।
যেদিন কাটাকাটি করার জন্যে একটা খবরও থাকে না সেদিন সরোষে পত্রিকাটা ছুঁড়ে ফেলি, অনেকটা, 'হাওয়া মে উড়তা যায়ে...'।
এখনও লেখা হয়নি এমন পেপার কাটিংয়ের বস্তা জমে গেছে। এগুলো দেখে দেখে প্রায়শ বুক থেকে চাপা কষ্ট উঠে আসে, আহ, হাত আর দু-চারটা থাকলে মন্দ হতো না। আসলে হাতের দোহাই দিয়ে লাভ নাই- মানুষটাই আমি অনেকটা অলস প্রকৃতির।
এবং রাতের মধ্যে কেউ পত্রিকা না-পড়ে থাকলে সেই পত্রিকা পরের দিন পড়ার কোন যো থাকে না। কেবল এক পাতারই নমুনা দাঁড়ায় অনেকটা এই রকম:
আমার অনেক বছরের অভ্যাস, দরকারী খবরটা কেটে রেখে দেই, কখনও চোখ বুলিয়ে, কখনও-বা মনোযোগ সহকারে পড়ে। যা আমার জানার জন্য বা লেখালেখির জন্য কাজে লাগে।
যেদিন কাটাকাটি করার জন্যে একটা খবরও থাকে না সেদিন সরোষে পত্রিকাটা ছুঁড়ে ফেলি, অনেকটা, 'হাওয়া মে উড়তা যায়ে...'।
এখনও লেখা হয়নি এমন পেপার কাটিংয়ের বস্তা জমে গেছে। এগুলো দেখে দেখে প্রায়শ বুক থেকে চাপা কষ্ট উঠে আসে, আহ, হাত আর দু-চারটা থাকলে মন্দ হতো না। আসলে হাতের দোহাই দিয়ে লাভ নাই- মানুষটাই আমি অনেকটা অলস প্রকৃতির।
Sunday, 26 September 2010
তোমায় করুণা করি
গত বৃহস্পতিবারে হুট করেই ঢাকা যেতে হলো। আমার এক প্রিয় মানুষ হাসপাতালে ভর্তি। যথারীতি আমার পাগলা বন্ধু এবং তার ব্ল্যাক স্ট্যালিয়ন, মতান্তরে 'ফাটফাটিয়া' ওরফে মটর সাইকেল। অন্য এক লেখায় বলেছিলাম, এ হাইওয়েতে ১০০ কিলোমিটারের নীচে চালাতে পারে না! পেছনে আমি কোনক্রমে ঝুলে অনবরত বকা দিতে থাকি।
বেশ অনেকটা পথ সামনে একটা এমবুলেন্স ছিল। আমি একে বলি, দেখ, এইবার আর কোন চিন্তা নাই, এমবুলেন্স আছে। দেখ-দেখ, এর গায়ে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিতও লেখা আছে। এমবুলেন্সে ঠান্ডা বাতাস খেতে খেতে যেতে থাকবি। 'জিন্দা অর মুর্দা' সেটা পরের বিষয়। কে শোনে কার কথা!
স্পর্শ কি মানুষকে স্পর্শ করে? আমি জানি না! হাসপাতালে আমি প্রিয় মানুষটার কপালে হাত রেখে স্থির গলায় বলি, আপনি নাকি জনে জনে বলে বেড়াচ্ছেন আপনি নাকি বাঁচবেন না? আমার ছেলের যে বিয়ের দাওয়াত দিয়েছিলাম এর কি হবে? বিয়েটা খাবে কে শুনি!
মানুষটার মুখে পান্ডুর হাসি, নারে, আমার সময় শেষ।
আমি রাগি গলায় বলি, সময় আপনার শেষ, নাকি আমার এটা আপনাকে কে বলল?
মানুষটা এইবার রেগে যান, ফটফট করিস না। বেশী পন্ডিত হয়েছিস, থাপড়াইয়া কানপট্টি ফাটায়া ফেলব! মাথায় তোর হাতটা দিয়ে রাখ। আরাম লাগছে।
মানুষটার ভাগ্য ভাল, দু-দিন পর হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরে গিয়েছিলেন। ফোনে শব্দও পাই, কুচুরমুচুর করে কি যেন খাচ্ছিলেন।
কপাল, ঢাকা থেকে ঠিক আগে আমার এক আর্টিস্ট বন্ধুর সঙ্গে দেখা হয়ে যায়। এর সঙ্গে দেখাদেখি হোক এটা আমি চাচ্ছিলাম না। এ অনেকবার ফোন করেছে, আমি ইচ্ছা করেই ধরিনি। যখন শুনেছিলাম, এ কানাডা চলে যাচ্ছে এরপর থেকে এর সঙ্গে কথা বলতে আমার ভাল লাগছিল না। কারণ দেশে এ ৭৫ হাজার টাকার উপরে বেতন পেত, গাড়িও কিনেছিল। এখন সব ছেড়ে, জমি বিক্রি করে কানাডা যাচ্ছে।
আজ এর সঙ্গে দেখা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বলেছিলাম, 'তোর মত মানুষকে আমি করুণা করি'।
এর ভেজা চোখ দেখে আর কিছু বলতে ইচ্ছা করেনি- আজ একে কেমন শুকনো, ভঙ্কুর লাগে। এটা কি শেকড় ছেঁড়ার কারণে, আমি জানি না! আমি আঁচ করতে পারি আসলে এর যাওয়ার ইচ্ছা নাই, এ যাচ্ছে এর বউয়ের চাপে। এই মহিলা একজন অতি উচ্চাভিলাষী এবং আমার অসম্ভব অপছন্দের মহিলা। যার চোখভরা নাম-যশের লোভ, আমি কানাডা থাকি হ্যান-ত্যান, বা...।
এ বাসাবোতেই থাকে কিন্তু এর বাসায় যেতে আমি আগ্রহ বোধ করি না কারণ এর বউয়ের সঙ্গে দেখা হবে, কথা বলতে হবে- সে বড়ো কষ্টকর কাজ।
বাসাবোর কাছেই আগমনী সিনামা হলের সামনে আমাদের তিনজনের বেদম আড্ডা জমে উঠে। আমরা ফিরে যাই অনেক ক-টা বছর পেছনে। হঠাৎ এ বলে, 'নড়বি না, তোর একটা ছবি উঠাই'।
ভাল, নড়লাম না! পেছনে 'চাচ্চু আমার চাচ্চু', 'নাম্বার ওয়ান শাকিব খান'- সামনে আমি করি হাসার ভান!
ছবি ঋণ: কাউসার আহাম্মদ খান
বেশ অনেকটা পথ সামনে একটা এমবুলেন্স ছিল। আমি একে বলি, দেখ, এইবার আর কোন চিন্তা নাই, এমবুলেন্স আছে। দেখ-দেখ, এর গায়ে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিতও লেখা আছে। এমবুলেন্সে ঠান্ডা বাতাস খেতে খেতে যেতে থাকবি। 'জিন্দা অর মুর্দা' সেটা পরের বিষয়। কে শোনে কার কথা!
স্পর্শ কি মানুষকে স্পর্শ করে? আমি জানি না! হাসপাতালে আমি প্রিয় মানুষটার কপালে হাত রেখে স্থির গলায় বলি, আপনি নাকি জনে জনে বলে বেড়াচ্ছেন আপনি নাকি বাঁচবেন না? আমার ছেলের যে বিয়ের দাওয়াত দিয়েছিলাম এর কি হবে? বিয়েটা খাবে কে শুনি!
মানুষটার মুখে পান্ডুর হাসি, নারে, আমার সময় শেষ।
আমি রাগি গলায় বলি, সময় আপনার শেষ, নাকি আমার এটা আপনাকে কে বলল?
মানুষটা এইবার রেগে যান, ফটফট করিস না। বেশী পন্ডিত হয়েছিস, থাপড়াইয়া কানপট্টি ফাটায়া ফেলব! মাথায় তোর হাতটা দিয়ে রাখ। আরাম লাগছে।
মানুষটার ভাগ্য ভাল, দু-দিন পর হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরে গিয়েছিলেন। ফোনে শব্দও পাই, কুচুরমুচুর করে কি যেন খাচ্ছিলেন।
কপাল, ঢাকা থেকে ঠিক আগে আমার এক আর্টিস্ট বন্ধুর সঙ্গে দেখা হয়ে যায়। এর সঙ্গে দেখাদেখি হোক এটা আমি চাচ্ছিলাম না। এ অনেকবার ফোন করেছে, আমি ইচ্ছা করেই ধরিনি। যখন শুনেছিলাম, এ কানাডা চলে যাচ্ছে এরপর থেকে এর সঙ্গে কথা বলতে আমার ভাল লাগছিল না। কারণ দেশে এ ৭৫ হাজার টাকার উপরে বেতন পেত, গাড়িও কিনেছিল। এখন সব ছেড়ে, জমি বিক্রি করে কানাডা যাচ্ছে।
আজ এর সঙ্গে দেখা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বলেছিলাম, 'তোর মত মানুষকে আমি করুণা করি'।
এর ভেজা চোখ দেখে আর কিছু বলতে ইচ্ছা করেনি- আজ একে কেমন শুকনো, ভঙ্কুর লাগে। এটা কি শেকড় ছেঁড়ার কারণে, আমি জানি না! আমি আঁচ করতে পারি আসলে এর যাওয়ার ইচ্ছা নাই, এ যাচ্ছে এর বউয়ের চাপে। এই মহিলা একজন অতি উচ্চাভিলাষী এবং আমার অসম্ভব অপছন্দের মহিলা। যার চোখভরা নাম-যশের লোভ, আমি কানাডা থাকি হ্যান-ত্যান, বা...।
এ বাসাবোতেই থাকে কিন্তু এর বাসায় যেতে আমি আগ্রহ বোধ করি না কারণ এর বউয়ের সঙ্গে দেখা হবে, কথা বলতে হবে- সে বড়ো কষ্টকর কাজ।
বাসাবোর কাছেই আগমনী সিনামা হলের সামনে আমাদের তিনজনের বেদম আড্ডা জমে উঠে। আমরা ফিরে যাই অনেক ক-টা বছর পেছনে। হঠাৎ এ বলে, 'নড়বি না, তোর একটা ছবি উঠাই'।
ভাল, নড়লাম না! পেছনে 'চাচ্চু আমার চাচ্চু', 'নাম্বার ওয়ান শাকিব খান'- সামনে আমি করি হাসার ভান!
ছবি ঋণ: কাউসার আহাম্মদ খান
Thursday, 23 September 2010
সময়ই ঠিক করে দেবে
এখন বিভিন্ন হাবিজাবি কাজে পড়ার সময় কমে গেছে। কিন্তু তিনবেলা খাওয়ার সময়টাতে নিয়ম করে কিছু-না-কিছু পড়া হয়ই! এটা আমার দীর্ঘ দিনের কু-অভ্যাস, প্রতিদিনের রুটিন! এই কারণে মার কম বকুনি খাইনি। ভদ্রমহিলা এই নিয়ে হইচই করে করে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। মুরুব্বিদের মধ্যে নানাও ভারী বিরক্ত হন, পারতপক্ষে তাঁর সঙ্গে আমি খেতে বসি না।
তো, খাচ্ছি-পড়ছি, পড়ছি-খাচ্ছি, আমার কোন সমস্যা হয় না। তবে কখনও এমনও হয়েছে তরকারী ঢাকাই রয়ে গেছে, ছুঁয়েও দেখা হয়নি!
জরুরি কাজে একদিনের জন্য বাসার বাইরে ছিলাম। ফিরে এসে সবে খেতে বসেছি, আমার ছ-বছরের মেয়ের চিল চিৎকার, এতো কষ্ট করে আমি, নষ্ট করে দিলে...ইত্যাদি ইত্যাদি।
সর্বনাশ, একি কান্ড! ডাইনিং টেবিলে যে স্বচ্ছ আবরণ দেয়া আছে এই মেয়েটা দেখি এটাকে ক্যানভাস বানিয়ে ফেলেছে! এ আর জায়গা পেল না? তাহলে এখন আমি খাবোটা কোথায়! আমার মেজাজ শরীফ থাকে এটা বুকে হাত দিয়ে বলতে পারি না কারণ মাটিতে বসে খাওয়ার জন্য না, পড়ার ব্যাঘাত হয় বলে।
তখনি মাথায় এটা আসে, মেয়েটা কি একেঁছে তাতে কী আসে যায়! এটা নষ্ট হতে দেয়া চলে না। তাছাড়া টেবিলটাও খাওয়ার উপযোগী করা প্রয়োজন। যত্ম করে এটা তুলে রেখে দেব। এটা মেয়েটার বিয়ের সময় সঙ্গে দিয়ে দেব।
আমি জানি না সময় এই মেয়েটাকে নিয়ে কি খেলা খেলবে কিন্তু এই মেয়েটা বড় হয়ে আমার মত নির্বোধ হলে তখন আকাশ ফাটিয়ে হাউমাউ করে কাঁদবে। অতিরিক্ত চালাক-চতুর হলে ঠোঁট উল্টে বলবে, বাবাটা কেমন কিপটে হয়েছে, ছি!
এটা সময়ই ঠিক করে দেবে...।
তো, খাচ্ছি-পড়ছি, পড়ছি-খাচ্ছি, আমার কোন সমস্যা হয় না। তবে কখনও এমনও হয়েছে তরকারী ঢাকাই রয়ে গেছে, ছুঁয়েও দেখা হয়নি!
জরুরি কাজে একদিনের জন্য বাসার বাইরে ছিলাম। ফিরে এসে সবে খেতে বসেছি, আমার ছ-বছরের মেয়ের চিল চিৎকার, এতো কষ্ট করে আমি, নষ্ট করে দিলে...ইত্যাদি ইত্যাদি।
সর্বনাশ, একি কান্ড! ডাইনিং টেবিলে যে স্বচ্ছ আবরণ দেয়া আছে এই মেয়েটা দেখি এটাকে ক্যানভাস বানিয়ে ফেলেছে! এ আর জায়গা পেল না? তাহলে এখন আমি খাবোটা কোথায়! আমার মেজাজ শরীফ থাকে এটা বুকে হাত দিয়ে বলতে পারি না কারণ মাটিতে বসে খাওয়ার জন্য না, পড়ার ব্যাঘাত হয় বলে।
তখনি মাথায় এটা আসে, মেয়েটা কি একেঁছে তাতে কী আসে যায়! এটা নষ্ট হতে দেয়া চলে না। তাছাড়া টেবিলটাও খাওয়ার উপযোগী করা প্রয়োজন। যত্ম করে এটা তুলে রেখে দেব। এটা মেয়েটার বিয়ের সময় সঙ্গে দিয়ে দেব।
আমি জানি না সময় এই মেয়েটাকে নিয়ে কি খেলা খেলবে কিন্তু এই মেয়েটা বড় হয়ে আমার মত নির্বোধ হলে তখন আকাশ ফাটিয়ে হাউমাউ করে কাঁদবে। অতিরিক্ত চালাক-চতুর হলে ঠোঁট উল্টে বলবে, বাবাটা কেমন কিপটে হয়েছে, ছি!
এটা সময়ই ঠিক করে দেবে...।
Monday, 20 September 2010
মিছিলে আমিও একজন
একটা অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। অনুষ্ঠান-ফনুষ্ঠানে যাওয়ার খুব একটা ইচ্ছা আমার কোন কালেই তেমন ছিল না। এই অনুষ্ঠানে যাওয়ার কিছু কারণ ছিল- এদের অনেকেই তখন আমাকে নিয়ে যথেষ্ঠ আপত্তিকর কথাবার্তা বলছিলেন। তবুও আমন্ত্রণ পাওয়ার পর না-বলতে পারিনি! কিছু মানুষকে লজ্জা দেয়ারও খানিক গোপন ইচ্ছা ছিল। তাছাড়া সবেমাত্র তখন আমার সাইটটি ববস প্রতিযোগীতায় নির্বাচিত হয়েছে- এমন সময়ে না করাটা অহংকার টাইপের একটা কিছু দাঁড়িয়ে যায়। কারও কাছে ফট করে মনে হবে আমার হাতে পাঁচটার জায়গায় ছ-টা আঙুল গজিয়েছে!
তাছাড়া এখানের অনেকের সঙ্গেই আমি দীর্ঘ সময় লেখালেখি করেছি। তাঁদের জোর দাবী অগ্রাহ্য করা তখন সম্ভবপর হয়ে উঠেনি!
তবে এখন মনে হয়, আমার যাওয়ার সিদ্ধান্তটা ভুল ছিল!
অসুস্থ মানুষকে দেখলে আমি করুণা বোধ করি। কেবল মনে হয়, আহারে-আহারে, এদের চিকিৎসা প্রয়োজন। কিন্তু এই গ্রহে কিছু মানুষ (!) আছে যারা চিকিৎসার বাইরে! এদের প্রতি করুণা বোধ করতেও অনীহা প্রকাশ করি।
ওই অনুষ্ঠানে আমার আচরণ অনেকের চক্ষুশূল হয়েছিল। আমি একটা বড় ধরনের অন্যায় করে ফেলেছিলাম। এই অপরাধে পরবর্তীতে আমাকে নিয়ে অতি কুৎসিত ছবি দেয়া হয়েছে, ততোধিক কুৎসিত কথা বলা হয়েছিল! যিনি এই কাজটি করেছিলেন তার কথা হয়তো ভুলে যাব কিন্তু আমার কাছের মানুষরা-সহযোদ্ধারা, যারা গোল হয়ে দাঁড়িয়ে তখন তামাশা দেখেছিলেন তাদের বিস্মৃত হওয়ার গোপন ইচ্ছা আমার নাই।
আমার অপরাধটা ছিল, 'সামহোয়্যার ইন ব্লগ ডট নেট' এই সাইটের কর্ণধারকে মঞ্চে ডেকে নিয়ে বলেছিলাম, (এমন না এই মানুষটাকে অনুষ্ঠানে আমি ডেকে নিয়ে গিয়েছিলাম- তিনি আমার মতই ওখানে আমন্ত্রিত ছিলেন) "আজ আমি যে জায়গায় দাঁড়িয়ে আছি এর পেছনে এই মানুষটারও অনেকখানি ভূমিকা আছে"।
এটা আমি "শুভ'র ব্লগিং" বইয়ের ভূমিকায় লিখিত আকারে পূ্র্বেও বলেছিলাম। ওদিনও বলেছিলাম, আগামীতেও বলব। এতে কে কি মনে করল এতে আমার বয়েই গেছে- সদর্পে বুড়ো আঙ্গুল তুলে বলি, 'ঠেঙ্গা'। সাদাকে সাদা বলব, কালোকে কালো- কেউ ভাল কাজ করলে তাকে স্যালুট করব, মন্দ কাজ করলে গালি; সমস্যাটা কোথায়!
'আরিল' নামের ভীনদেশি এই মানুষটাই প্রথমে আমাদেরকে বাংলায় লেখালেখি করার সুযোগ করে দেন। এটা একটা অভাবনীয় কাজ হয়েছিল! ওসময় যারা বাংলায় লেখালেখি করতেন তারা আমার চেয়ে ভাল বলতে পারবেন। অবশ্য এটা আমার চেয়ে অনেক প্রয়োজন ছিল প্রবাসে যারা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছেন তাদের জন্যে।
যাগ গে, ওখানে যে অভ্রর মেহেদীও আমন্ত্রিত হয়ে এসেছিলেন এটা আমার জানা ছিল না।
জানলাম এবং যখন মানুষটাকে দেখলাম তখন একটা ধাক্কার মত খেলাম! স্পষ্ট মনে আছে, পাশের একজনকে বলেছিলাম, 'এই পিচ্চি ছেলেটাই মেহেদী'! (এই বাক্যটার জন্য মেহেদীর কাছে আমি ক্ষমা চাচ্ছি)। যদিও ছেলেটা মোটেও পিচ্চি না, তিনি এ বছরই এমবিবিএসের পাট চুকিয়ে ফেলেছেন।
বিভ্রান্ত হওয়ার কারণ আছে। তখন বিজয়ের জনাব, জব্বার বনাম অভ্রর মেহেদী, ধুন্ধুমার কান্ড চলছে। সম্ভবত এর ঠিক আগে আমি বিজয়ের জব্বারের বিপক্ষে কঠিন একটা লেখা লিখেছিলাম [১]। ওই লেখার শিরোনাম ছিল, "আমাদের এই বিজয় মিছিলের পুরোধা অভ্র"।
ওই অনুষ্ঠানে মেহেদীকেও নিয়ে আমার উল্লাসের কমতি ছিল না কারণ মেহেদী এবং তাঁর টিমও একটা অভাবনীয় কাজ করে ফেলেছিলেন, ইউনিকোডে আমাদেরকে অতি সহজে বাংলা লেখার ব্যবস্থা করে দেয়া। যে কারণে আমি বারবার যেটা বলে এসেছি, আমার যে অর্জন এটা কেবল আমার নিজের না, মেহেদী, আরিলের মত অসংখ্য মানুষ জড়িয়ে আছেন এর পেছনে- আমি কেবল তাঁদের সঙ্গে আছি, এই যা...।
*ছবি ঋণ: আসাদ আবদুল্লাহ
সহায়ক লিংক:
১. বিজয় মিছিল, অভ্র: http://www.ali-mahmed.com/2010/04/blog-post_29.html
তাছাড়া এখানের অনেকের সঙ্গেই আমি দীর্ঘ সময় লেখালেখি করেছি। তাঁদের জোর দাবী অগ্রাহ্য করা তখন সম্ভবপর হয়ে উঠেনি!
তবে এখন মনে হয়, আমার যাওয়ার সিদ্ধান্তটা ভুল ছিল!
অসুস্থ মানুষকে দেখলে আমি করুণা বোধ করি। কেবল মনে হয়, আহারে-আহারে, এদের চিকিৎসা প্রয়োজন। কিন্তু এই গ্রহে কিছু মানুষ (!) আছে যারা চিকিৎসার বাইরে! এদের প্রতি করুণা বোধ করতেও অনীহা প্রকাশ করি।
ওই অনুষ্ঠানে আমার আচরণ অনেকের চক্ষুশূল হয়েছিল। আমি একটা বড় ধরনের অন্যায় করে ফেলেছিলাম। এই অপরাধে পরবর্তীতে আমাকে নিয়ে অতি কুৎসিত ছবি দেয়া হয়েছে, ততোধিক কুৎসিত কথা বলা হয়েছিল! যিনি এই কাজটি করেছিলেন তার কথা হয়তো ভুলে যাব কিন্তু আমার কাছের মানুষরা-সহযোদ্ধারা, যারা গোল হয়ে দাঁড়িয়ে তখন তামাশা দেখেছিলেন তাদের বিস্মৃত হওয়ার গোপন ইচ্ছা আমার নাই।
আমার অপরাধটা ছিল, 'সামহোয়্যার ইন ব্লগ ডট নেট' এই সাইটের কর্ণধারকে মঞ্চে ডেকে নিয়ে বলেছিলাম, (এমন না এই মানুষটাকে অনুষ্ঠানে আমি ডেকে নিয়ে গিয়েছিলাম- তিনি আমার মতই ওখানে আমন্ত্রিত ছিলেন) "আজ আমি যে জায়গায় দাঁড়িয়ে আছি এর পেছনে এই মানুষটারও অনেকখানি ভূমিকা আছে"।
এটা আমি "শুভ'র ব্লগিং" বইয়ের ভূমিকায় লিখিত আকারে পূ্র্বেও বলেছিলাম। ওদিনও বলেছিলাম, আগামীতেও বলব। এতে কে কি মনে করল এতে আমার বয়েই গেছে- সদর্পে বুড়ো আঙ্গুল তুলে বলি, 'ঠেঙ্গা'। সাদাকে সাদা বলব, কালোকে কালো- কেউ ভাল কাজ করলে তাকে স্যালুট করব, মন্দ কাজ করলে গালি; সমস্যাটা কোথায়!
'আরিল' নামের ভীনদেশি এই মানুষটাই প্রথমে আমাদেরকে বাংলায় লেখালেখি করার সুযোগ করে দেন। এটা একটা অভাবনীয় কাজ হয়েছিল! ওসময় যারা বাংলায় লেখালেখি করতেন তারা আমার চেয়ে ভাল বলতে পারবেন। অবশ্য এটা আমার চেয়ে অনেক প্রয়োজন ছিল প্রবাসে যারা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছেন তাদের জন্যে।
যাগ গে, ওখানে যে অভ্রর মেহেদীও আমন্ত্রিত হয়ে এসেছিলেন এটা আমার জানা ছিল না।
জানলাম এবং যখন মানুষটাকে দেখলাম তখন একটা ধাক্কার মত খেলাম! স্পষ্ট মনে আছে, পাশের একজনকে বলেছিলাম, 'এই পিচ্চি ছেলেটাই মেহেদী'! (এই বাক্যটার জন্য মেহেদীর কাছে আমি ক্ষমা চাচ্ছি)। যদিও ছেলেটা মোটেও পিচ্চি না, তিনি এ বছরই এমবিবিএসের পাট চুকিয়ে ফেলেছেন।
বিভ্রান্ত হওয়ার কারণ আছে। তখন বিজয়ের জনাব, জব্বার বনাম অভ্রর মেহেদী, ধুন্ধুমার কান্ড চলছে। সম্ভবত এর ঠিক আগে আমি বিজয়ের জব্বারের বিপক্ষে কঠিন একটা লেখা লিখেছিলাম [১]। ওই লেখার শিরোনাম ছিল, "আমাদের এই বিজয় মিছিলের পুরোধা অভ্র"।
ওই অনুষ্ঠানে মেহেদীকেও নিয়ে আমার উল্লাসের কমতি ছিল না কারণ মেহেদী এবং তাঁর টিমও একটা অভাবনীয় কাজ করে ফেলেছিলেন, ইউনিকোডে আমাদেরকে অতি সহজে বাংলা লেখার ব্যবস্থা করে দেয়া। যে কারণে আমি বারবার যেটা বলে এসেছি, আমার যে অর্জন এটা কেবল আমার নিজের না, মেহেদী, আরিলের মত অসংখ্য মানুষ জড়িয়ে আছেন এর পেছনে- আমি কেবল তাঁদের সঙ্গে আছি, এই যা...।
*ছবি ঋণ: আসাদ আবদুল্লাহ
সহায়ক লিংক:
১. বিজয় মিছিল, অভ্র: http://www.ali-mahmed.com/2010/04/blog-post_29.html
Friday, 17 September 2010
ফটোসেশন!
কোথাও বেড়াতে যাওয়ার প্রসঙ্গ আসলেই আমার ঘন ঘন হাঁই উঠে। কোত্থেকে যেন একরাশ আলস্য এসে ভর করে।
কিন্তু এবার আর পার পাওয়া গেল না। কোন কুক্ষণে একজনকে বলেছিলাম, কসবার কথা। আমার অসম্ভব পছন্দের একটা জায়গা। স্টেশনটার পেছনেই ভারত। সারি সারি পাহাড়। যেদিকে দু-চোখ যায় সবুজ আর সবুজ। আর যায় কোথায়!
তিনি সেখানে পদধূলি দেবেন। সঙ্গে আমার বাচ্চা-কাচ্চা, এদের মাতাজিকেও যেতে হবে।
কী আর করা! যেতে হয়। বাচ্চা-কাচ্চা এবং তাদের মাতাজির সঙ্গে ওই মানুষটার ছেলেটাকেও ধরে ছবি তুলতে হয়। ছবি তোলার সময় নিয়ম অনুযায়ী দাঁতও বের করতে হয়। :)
কিন্তু এবার আর পার পাওয়া গেল না। কোন কুক্ষণে একজনকে বলেছিলাম, কসবার কথা। আমার অসম্ভব পছন্দের একটা জায়গা। স্টেশনটার পেছনেই ভারত। সারি সারি পাহাড়। যেদিকে দু-চোখ যায় সবুজ আর সবুজ। আর যায় কোথায়!
তিনি সেখানে পদধূলি দেবেন। সঙ্গে আমার বাচ্চা-কাচ্চা, এদের মাতাজিকেও যেতে হবে।
কী আর করা! যেতে হয়। বাচ্চা-কাচ্চা এবং তাদের মাতাজির সঙ্গে ওই মানুষটার ছেলেটাকেও ধরে ছবি তুলতে হয়। ছবি তোলার সময় নিয়ম অনুযায়ী দাঁতও বের করতে হয়। :)
Friday, 10 September 2010
পালাব কোথায়!
বসে লিখছি। থরথর করে আমার লেখার টেবিল কাঁপছে। ভূমিকম্প গোটা বাড়িটা নাড়িয়ে দিয়েছে এটা বুঝতে পেরেছি তখন, যখন বাসার সবাই বাড়ির বাইরে থেকে চিৎকার করছে, আমি যেন দ্রুত বেরিয়ে আসি।
এই বুড়া বাড়িটার বয়স প্রায় ১০০। আমার প্রাণভয় অনুভব হয় না- আমি চুপচাপ বসে থাকি। কেন, আমি জানি না!
হয়তো এমনটা মনে হয়েছিল, এই বুড়া সর্বদা আমাকে আগলে রেখেছে; এই বুড়াকে ছেড়ে যাবো কোথায়! তাছাড়া এমন বিশাল সমাধি জোটার কপালই বা হয় ক-জনার! হা হা হা...।
এই বুড়া বাড়িটার বয়স প্রায় ১০০। আমার প্রাণভয় অনুভব হয় না- আমি চুপচাপ বসে থাকি। কেন, আমি জানি না!
হয়তো এমনটা মনে হয়েছিল, এই বুড়া সর্বদা আমাকে আগলে রেখেছে; এই বুড়াকে ছেড়ে যাবো কোথায়! তাছাড়া এমন বিশাল সমাধি জোটার কপালই বা হয় ক-জনার! হা হা হা...।
নাইটকুইন, গর্ভিত (!) এক ফুল!
পত্রিকার বড়ো প্রিয় মুখ!
পত্রিকায় ঘটা করে এর ছবি ছাপা হতো, সঙ্গে গর্ভিত (!) গৃহকর্তার ছবি। এই জিনিসটার মনে হয় আগের মত আর দবদবা নাই।
আমার বাসায় নাইটকুইন ফুল কখন ফোটে এর খোঁজ পাই না। ব্যাটারা ফাঁকি দিয়ে বেড়ায়। সকালে দেখি ন্যুজ, কুর্নিশের ভঙ্গিতে।
হে-হে-হে, কি যেন বলে না? প্রতি ডুবে শালুক, চোরের ১০ দিন গেরস্তের- আজ ব্যাটাকে পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে...।
পত্রিকায় ঘটা করে এর ছবি ছাপা হতো, সঙ্গে গর্ভিত (!) গৃহকর্তার ছবি। এই জিনিসটার মনে হয় আগের মত আর দবদবা নাই।
আমার বাসায় নাইটকুইন ফুল কখন ফোটে এর খোঁজ পাই না। ব্যাটারা ফাঁকি দিয়ে বেড়ায়। সকালে দেখি ন্যুজ, কুর্নিশের ভঙ্গিতে।
হে-হে-হে, কি যেন বলে না? প্রতি ডুবে শালুক, চোরের ১০ দিন গেরস্তের- আজ ব্যাটাকে পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে...।
Monday, 6 September 2010
হারানো ছবি এবং...
বেশ আগের কথা। কি কারণে যেন আমার মাথা গরম। আমার নিজের লেখার কিছু প্রসঙ্গেই সম্ভবত মস্তিষ্ক উত্তপ্ত! লিখে জনে জনে ব্যাখ্যা দিতে ভাল লাগছিল না। আমি ভাবলাম, প্রোফাইলে কঠিন-কঠিন ভাব আছে এমন একটা ছবি রাখলে সুবিধে হয়।
কঠিন-কঠিন আদলের দূরের কথা তখন আসলে আমার তেমন কোন ছবিই ছিল না। একজনকে বললাম, 'আমার রাফ এন্ড টাফ একটা ছবি তুলে দে'।
সে তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে অবজ্ঞাভরে বলল, 'কানা, তোর পাওয়ারের চশমা দিয়ে কি ছাতাফাতা রাফ ছবি আসবে, একটা ডার্ক গ্লাস যোগাড় কর'।
ব্যাটা বলেই খালাশ, আমি ডার্ক গ্লাস আনব কোত্থেকে? আমার এন্টিক কালেকশনে ১৯৪২ সালের এই জিনিসটা ছিল, তাই সই। ১৯৪২ সালের ট্যাগটা খুলে ফেলার ব্যবস্থা ছিল না। ট্যাগটাসহ ছবি তোলা হলো।
পরে ছবিটা প্রোফাইল থেকে ডিলিট করে দিয়েছিলাম। আমি ভুলেই গিয়েছিলাম কিন্তু ব্যাটা নচ্ছার গুগল ঠিকই সংরক্ষণ করে রেখেছিল!
ডক্টর আইজউদ্দিন নামের একটা নিক এই ছবিটা যোগাড় করে একটা ওয়েবসাইটে আমাকে নিয়ে নিয়ম করে পোস্ট দিয়ে যাচ্ছেন। আফসোস, বেচারা আমার ট্যাগ লাগানো রোদ-চশমা নিয়ে টানাটানি করছেন না, টানাটানি করছেন আমার পা ধরে।
কেউ আমার সমালোচনা করে লেখা দিলে আমি তেমন গা করি না কারণ আমার লেখা সবার ভাল লাগতেই হবে এমন আশা করাটা বাতুলতা মাত্র। মাঝে-মাঝে কেউ কেউ বলেনও, 'বুঝলেন, আপনার লেখা আমার ভাল লাগে না'।
আমি মাথা নাড়ি, 'আলবত, আমারও ভাল লাগে না। জঘন্য!'।
কিন্তু ডক্টর আইজউদ্দিন নামের নিকটার এই সব লেখায় আমি বিরক্ত কারণ এখানে যুক্তির বদলে অসারতাই প্রকট। মানুষ যখন ক্রোধে অন্ধ হয় তখন যুক্তির খেই হায়ে ফেলে। এই মানুষটা যখন ডয়চে ভেলেকে অতি বিকৃত করে লেখেন তখন তার ক্ষোভের উৎস কোথায় এটা একটা শিশুরও বোঝার বাকী থাকে না। এই মানুষটাই ডয়েচে ভেলের সম্মানটা না-নেয়ার জন্য আমার উদ্দেশ্যে ইনিয়ে-বিনিয়ে লিখেছিলেন।
একটা মিডিয়া, ডয়চে ভেলে যখন আলী মাহমেদকে নির্বাচিত করে তখন সেটা 'ডয়েচে বাল' হয়ে যায়; অন্য একটা মিডিয়া বিবিসি যখন কাউকে হাজার বছরের বাঙালি নির্বাচিত করে তখন সেটা তালগাছ হয়ে যায়।
আজব- কত বুদ্ধি ঘটে...! ফাঁকা করেটি দিয়ে যখন হু হু করে বাতাস বয় তখন কি হুপ-হুপ শব্দ হয়?
*ডক্টর আইজউদ্দিন: http://tinyurl.com/3ywgcug
কঠিন-কঠিন আদলের দূরের কথা তখন আসলে আমার তেমন কোন ছবিই ছিল না। একজনকে বললাম, 'আমার রাফ এন্ড টাফ একটা ছবি তুলে দে'।
সে তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে অবজ্ঞাভরে বলল, 'কানা, তোর পাওয়ারের চশমা দিয়ে কি ছাতাফাতা রাফ ছবি আসবে, একটা ডার্ক গ্লাস যোগাড় কর'।
ব্যাটা বলেই খালাশ, আমি ডার্ক গ্লাস আনব কোত্থেকে? আমার এন্টিক কালেকশনে ১৯৪২ সালের এই জিনিসটা ছিল, তাই সই। ১৯৪২ সালের ট্যাগটা খুলে ফেলার ব্যবস্থা ছিল না। ট্যাগটাসহ ছবি তোলা হলো।
পরে ছবিটা প্রোফাইল থেকে ডিলিট করে দিয়েছিলাম। আমি ভুলেই গিয়েছিলাম কিন্তু ব্যাটা নচ্ছার গুগল ঠিকই সংরক্ষণ করে রেখেছিল!
ডক্টর আইজউদ্দিন নামের একটা নিক এই ছবিটা যোগাড় করে একটা ওয়েবসাইটে আমাকে নিয়ে নিয়ম করে পোস্ট দিয়ে যাচ্ছেন। আফসোস, বেচারা আমার ট্যাগ লাগানো রোদ-চশমা নিয়ে টানাটানি করছেন না, টানাটানি করছেন আমার পা ধরে।
কেউ আমার সমালোচনা করে লেখা দিলে আমি তেমন গা করি না কারণ আমার লেখা সবার ভাল লাগতেই হবে এমন আশা করাটা বাতুলতা মাত্র। মাঝে-মাঝে কেউ কেউ বলেনও, 'বুঝলেন, আপনার লেখা আমার ভাল লাগে না'।
আমি মাথা নাড়ি, 'আলবত, আমারও ভাল লাগে না। জঘন্য!'।
কিন্তু ডক্টর আইজউদ্দিন নামের নিকটার এই সব লেখায় আমি বিরক্ত কারণ এখানে যুক্তির বদলে অসারতাই প্রকট। মানুষ যখন ক্রোধে অন্ধ হয় তখন যুক্তির খেই হায়ে ফেলে। এই মানুষটা যখন ডয়চে ভেলেকে অতি বিকৃত করে লেখেন তখন তার ক্ষোভের উৎস কোথায় এটা একটা শিশুরও বোঝার বাকী থাকে না। এই মানুষটাই ডয়েচে ভেলের সম্মানটা না-নেয়ার জন্য আমার উদ্দেশ্যে ইনিয়ে-বিনিয়ে লিখেছিলেন।
একটা মিডিয়া, ডয়চে ভেলে যখন আলী মাহমেদকে নির্বাচিত করে তখন সেটা 'ডয়েচে বাল' হয়ে যায়; অন্য একটা মিডিয়া বিবিসি যখন কাউকে হাজার বছরের বাঙালি নির্বাচিত করে তখন সেটা তালগাছ হয়ে যায়।
আজব- কত বুদ্ধি ঘটে...! ফাঁকা করেটি দিয়ে যখন হু হু করে বাতাস বয় তখন কি হুপ-হুপ শব্দ হয়?
*ডক্টর আইজউদ্দিন: http://tinyurl.com/3ywgcug
Thursday, 2 September 2010
আমার স্কুল
প্রাইমারিতে পড়ার সময় আমার স্কুল ছিল 'রাধানগর ফ্রি প্রাইমারি স্কুল'।
আমাদের সময় স্কুলটা ছিল একতলা। আমরা প্রাইমারিতে সরকারি স্কুলে পড়েছি কোন সমস্যা হয়নি কিন্তু এখনকার বাচ্চাদের কিন্ডার গার্টেন নামের রোবট বানাবার কারখানায় না-পড়লে পেটের ফাস্টফুড হজম হয় না!
লজ্জার মাথা খেয়ে এও বলতে হয়, আমার সন্তানরাও পড়ে কিন্ডার গার্টেনে। প্রথমদিকে আমার তীব্র আপত্তি ছিল। এখন নাই কারণ আপত্তি করে লাভ নাই। আমার আপত্তির মুখে আমাকে যেটা বলা হতো, তুমি যে লেখাপড়া করেছো এখন এইসবের দাম নাই। নায্য কথা! কারণ আমি কিছুই হতে পারিনি, জজ-ব্যারিস্টার-চাপরাসি।
প্রাইমারিতে পড়াশোনার সময়কার বেশ কিছু স্মৃতি আছে। 'লুড্ডু স্যার' নামে আমার একজন টিচার ছিলেন তাঁর ভাল নাম কালের গর্ভে হারিয়ে গিয়েছিল। তাঁর এই বিচিত্র নামকরণের কারণটাও বিচিত্র। তাঁর নাকি লাড্ডুম গাছের নীচে বাসা তাই এই নাম চালু হয়ে গিয়েছিল। লাড্ডুম থেকে লুড্ডু!
তো, স্যার 'পিটাপিটি'-র জন্য কুখ্যাত ছিলেন, মোটামুটি স্কুলের ত্রাস! তাঁর পছন্দের কিছু হুমকি ছিল, 'পিঠে জালি বেত ভাঙ্গুম, পিঠের চামড়া দিয়া গুড্ডি উড়ামু' ইত্যাদি।
একদিনের কথা। সেদিন তাঁর ক্লাশ নাই কিন্তু শিক্ষকদের বসার রুম থেকে বেরিয়ে এলেন, হাতে জালি বেত। আমাদের ক্লাশে এসে ঘনঘন বেতটাকে বাঁকা করছেন আর মুখে বলছেন, 'তোরার খবর আছে, বুঝলি, হুম, বুঝলি...'।
ঠাস করে বেতটা ভেঙ্গে গেল। তিনি হতভম্ব হয়ে বেতটার দিকে তাকিয়ে আছেন। আমরা অতি কষ্টে বেদম হাসি চেপে স্যারের ভাঙ্গাচোরা মুখটা উপভোগ করছি।
স্যার অহেতুক কাশি কাশতে কাশতে শিক্ষকদের রুমে অর্ন্তধান হলেন। এবার আমাদের হাসি আটকায় কে!
Wednesday, 25 August 2010
নব্য মুক্তিযোদ্ধা!
একটা ওয়েব-সাইটে একজন নব্য মুক্তিযোদ্ধা ব্লগস্ফিয়ারকে নাড়িয়ে দিতেন। 'আসাদ গেটে এখনও উর্দু লেখা'! এই নিয়ে কঠিন একটা লেখা দিলেন এবং অনেক 'সাবাসি'ও পেলেন।
কালের কন্ঠও এই নিয়ে রিপোর্ট করেছিল, এখনও উর্দু লেখা। পরে অবশ্য তাদের ভুল স্বীকার করে। এটা একটা ভাল দিক যে আমাদের দেশের পত্রিকাওয়ালারা ভুল স্বীকার করার ক্লেশ স্বীকার করেন।
কালের কন্ঠ: http://www.ali-mahmed.com/2010/03/blog-post_09.html
কালের কন্ঠও এই নিয়ে রিপোর্ট করেছিল, এখনও উর্দু লেখা। পরে অবশ্য তাদের ভুল স্বীকার করে। এটা একটা ভাল দিক যে আমাদের দেশের পত্রিকাওয়ালারা ভুল স্বীকার করার ক্লেশ স্বীকার করেন।
কালের কন্ঠ: http://www.ali-mahmed.com/2010/03/blog-post_09.html
Tuesday, 24 August 2010
ব্যাপক বিনোদন
আমাদের জীবনে আনন্দের বড়ো অভাব। কখনও কখনও জীবনটা বড়ো পানসে লাগে, বিনোদন না-থাকলে উপায়ই ছিল না!
আমাকে যখন একজন ফোন করে বললেন, ওমুক নিক আপনাকে নিয়ে কঠিন একটা লেখা দিয়েছে। আমি হাসিতে উড়িয়ে দিলাম কারণ একটা প্রতিযোগিতায় অনেকের সঙ্গে এই মানুষটাও ছিলেন। মাত্র প্রতিযোগিতা শেষ হলো এখনও এই মানুষটা আমাকে নিয়ে পোস্ট দেয়ার মতো মূর্খতা করবেন এটা অবিশ্বাস্য!
বাস্তবে দেখা গেল মানুষটা ঠিক-ঠিক আমাকে নিয়ে পোস্ট দিয়েছেন। আমি হতভম্ব হয়ে ভাবছিলাম, একটা মানুষের বুদ্ধি-শুদ্ধি কোন পর্যায়ে গেলে তিনি এমনটা করতে পারেন!
আমাকে নিয়ে কঠিন পোস্ট। আমার বিষণ্ন হওয়ার কথা কিন্তু পড়ে আমি খুব মজা পাচ্ছিলাম। তড়িঘড়ি করে প্রিন্ট নিয়ে রাখলাম, খোদা-না-খাস্তা হারিয়ে যায় যদি, এমন মূল্যবান দস্তাবেজ হাতছাড়া করা চলে না। আজও পড়লাম। সেই আগের মতই ব্যাপক বিনোদন পেলাম।
মোতাব্বির কাগু-এর মন্তব্য, "...আর দুর্জনেরা বলে ফিফা নিক ৫ জনে চালায়। তাই পুরষ্কার না পাইয়া ভালই হইছে। কে যাইত পুরষ্কার আনতে?? বাকিদের কি হইত???"
পোস্টদাতা পোস্টটা শেষ করেছেন এটা বলে, "...সাবমেরিন ক্যাবল কাটা যাওয়ায় গত কয়েকদিন ইন্টারনেট থেকে দূরে ছিলাম। প্রতিক্রিয়া জানাতে তাই দেরি হল।"
হা হা হা। ব্লগের ভাষায় হাহাপগে। এতো বিনোদন যেখানে সেখানে একজন মানুষ বিমর্ষ থাকে কেমন করে!
*বাংলা ব্লগের গরীব অ্যামবেসেডর: http://www.somewhereinblog.net/blog/Fusion5/29136846
আমাকে যখন একজন ফোন করে বললেন, ওমুক নিক আপনাকে নিয়ে কঠিন একটা লেখা দিয়েছে। আমি হাসিতে উড়িয়ে দিলাম কারণ একটা প্রতিযোগিতায় অনেকের সঙ্গে এই মানুষটাও ছিলেন। মাত্র প্রতিযোগিতা শেষ হলো এখনও এই মানুষটা আমাকে নিয়ে পোস্ট দেয়ার মতো মূর্খতা করবেন এটা অবিশ্বাস্য!
বাস্তবে দেখা গেল মানুষটা ঠিক-ঠিক আমাকে নিয়ে পোস্ট দিয়েছেন। আমি হতভম্ব হয়ে ভাবছিলাম, একটা মানুষের বুদ্ধি-শুদ্ধি কোন পর্যায়ে গেলে তিনি এমনটা করতে পারেন!
আমাকে নিয়ে কঠিন পোস্ট। আমার বিষণ্ন হওয়ার কথা কিন্তু পড়ে আমি খুব মজা পাচ্ছিলাম। তড়িঘড়ি করে প্রিন্ট নিয়ে রাখলাম, খোদা-না-খাস্তা হারিয়ে যায় যদি, এমন মূল্যবান দস্তাবেজ হাতছাড়া করা চলে না। আজও পড়লাম। সেই আগের মতই ব্যাপক বিনোদন পেলাম।
মোতাব্বির কাগু-এর মন্তব্য, "...আর দুর্জনেরা বলে ফিফা নিক ৫ জনে চালায়। তাই পুরষ্কার না পাইয়া ভালই হইছে। কে যাইত পুরষ্কার আনতে?? বাকিদের কি হইত???"
পোস্টদাতা পোস্টটা শেষ করেছেন এটা বলে, "...সাবমেরিন ক্যাবল কাটা যাওয়ায় গত কয়েকদিন ইন্টারনেট থেকে দূরে ছিলাম। প্রতিক্রিয়া জানাতে তাই দেরি হল।"
হা হা হা। ব্লগের ভাষায় হাহাপগে। এতো বিনোদন যেখানে সেখানে একজন মানুষ বিমর্ষ থাকে কেমন করে!
*বাংলা ব্লগের গরীব অ্যামবেসেডর: http://www.somewhereinblog.net/blog/Fusion5/29136846
Monday, 23 August 2010
ভাত দে-ভাত দে-ভাত দে
এর নাম আমি জানি না। একে কুড়িয়ে পাই রাস্তায়। ধরে রাখতে পারিনি!
আমি নিজেকে উঁচু মানুষ হিসাবে কখনও দাবি করিনি কিন্তু মানুষটা আমি খুব নিষ্ঠুর এমনটাও মনে করি না। আসলে একে লালন-পালন করার মত যথেষ্ঠ জ্ঞান আমার ছিল না।
এর এই ছবিটা ঢাকা হোমে নিয়ে যাওয়ার সময়কার, বাসা থেকে বেরুবার ঠিক আগ-মুহূর্তের। আজও এর এই তাকাবার ভঙ্গি আমাকে তাড়া করে। এ কথা বলতে পারত না। কেবল একটা কথাই স্পষ্ট বলতে পারত, ভাত দে।
এখনও আমার কানে বাজে, ভাত দে-ভাত দে-ভাত দে...।
আলো অন্ধকারের খেলা: http://www.ali-mahmed.com/2009/12/blog-post_27.html
আমি নিজেকে উঁচু মানুষ হিসাবে কখনও দাবি করিনি কিন্তু মানুষটা আমি খুব নিষ্ঠুর এমনটাও মনে করি না। আসলে একে লালন-পালন করার মত যথেষ্ঠ জ্ঞান আমার ছিল না।
এর এই ছবিটা ঢাকা হোমে নিয়ে যাওয়ার সময়কার, বাসা থেকে বেরুবার ঠিক আগ-মুহূর্তের। আজও এর এই তাকাবার ভঙ্গি আমাকে তাড়া করে। এ কথা বলতে পারত না। কেবল একটা কথাই স্পষ্ট বলতে পারত, ভাত দে।
এখনও আমার কানে বাজে, ভাত দে-ভাত দে-ভাত দে...।
আলো অন্ধকারের খেলা: http://www.ali-mahmed.com/2009/12/blog-post_27.html
Sunday, 22 August 2010
আত্মবিশ্বাস!
ছবিটা সাদিকের তোলা। উঠাবার সময় আমি বলছিলাম, এখানে তীব্র রোদ, ছবিটা ভাল আসবে না।
সাদিক ক্ষেপে গেলেন, আপনি জানেন, আমি একজন প্রফেশনাল ইত্যাদি ইত্যাদি।
পরে দেখা গেল, ঠিক-ঠিক ছবিটায় সমস্যা হয়েছে। যা হওয়ার তাই হয়েছে, প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত কালো এসেছে। বিশেষ ব্যবস্থায় ঘষা-মাজা করেও খুব একটা লাভ হয়নি।
বেচারা সাদিক... :-D !
সাদিক ক্ষেপে গেলেন, আপনি জানেন, আমি একজন প্রফেশনাল ইত্যাদি ইত্যাদি।
পরে দেখা গেল, ঠিক-ঠিক ছবিটায় সমস্যা হয়েছে। যা হওয়ার তাই হয়েছে, প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত কালো এসেছে। বিশেষ ব্যবস্থায় ঘষা-মাজা করেও খুব একটা লাভ হয়নি।
বেচারা সাদিক... :-D !
Friday, 20 August 2010
বিচিত্র এক মানুষ!
ব্লগস্ফিয়ারে এমন বিচিত্র মানুষ আমি কমই দেখেছি। এই মানুষটা যখন লগ-ইন করতেন তখন দশজন লগ-আউট হয়ে যেতেন। এমন কেউ নাই যার পেছনে মানুষটা লাগেননি, আমারও!
প্রথম যখন এই মানুষটাকে আমি সামনাসামনি দেখি তখন একটা ধাক্কার মতো খেয়েছিলাম, এই মানুষটাই তাহলে 'অষ্ট ডট রাসেল' ওরফে রাসেল পারভেজ! ওয়াল্লা, এ তো দেখি চোখে চোখ রেখেই কথা বলতে পারে না।
প্রথম দেখায় রাসেলকে আমি আমার একটা বই দিয়েছিলাম, 'কয়েদী'। এই দেশে হরতাল নিয়ে গোটা একটা বই সম্ভবত কয়েদী। এই মুগ্ধতা মানুষটাকে স্পর্শ করবে এমনটা যেমন আমি আশা করিনি তেমনি বইটা নিয়ে তাঁর ভাল লাগা। এটা জরুরি না একজনের লেখা অন্যজনের ভাল লাগতেই হবে। তাছাড়া রাসেল পুতুপুতু আলোচনা করবে এটাই বরং হাস্যকর।
কিন্তু তখন আমি প্রচন্ড ক্রদ্ধ হয়েছিলাম, রাসেল কেবল আমার কয়েদী বইটা নিয়ে কঠিন একটা লেখা লিখেছিলেন বলেই না, তিনি আমার নাম নিয়ে অহেতুক টানাটানি করেছিলেন বলে।
কিন্তু এই মানুষটাকে যখনই প্রয়োজন হয়েছে, মানুষটার না নেই! হারিয়ে যাওয়া একটা বাচ্চাকে দিয়ে আসতে হবে। আমি পথ-ঘাট চিনি না। তাতে কী- কেন, রাসেল আছে না।
এতিম বাচ্চারা না-খেয়ে আছে। রাত বাড়ছে, আজই বাজার করে দিয়ে আসতে হবে। বাজারে যেতে যেতে রাত গভীর। তো? রাসেল আছে যে...।
...
তখন আমার বড়ো বাজে সময়। অন্য রকম জীবন-যাপন করি। রাসেল কৌশিকসহ হুট করে একদিন চলে এসেছিলেন আমার এখানে। দিনভর কতশত স্মৃতি ফিরে দেখতে দেখতে পার হয়ে যায়। দুঃসময়ে খানিকটা ভাল লাগা এও কী কম।
(ছবি সূত্র: কৌশিক আহমেদ)
*রাসেলের কয়েদী সমালোচনা: http://raselparvez.blogspot.com/searchq=%E0%A6%86%E0%A6%B2%E0%A7%80+%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%B9%E0%A6%AE%E0%A7%87%E0%A6%A6
*রাসেলের 'আখা ভ্রমণ': http://www.somewhereinblog.net/blog/jontronablog/28819352
**রাসেলের সমালোচনার উত্তর: http://www.ali-mahmed.com/2007/06/blog-post_2332.html
... ... ...
১. আখা ভ্রমণ:
"ভুল মানুষের ডেরায়।
প্রথম যখন এই মানুষটাকে আমি সামনাসামনি দেখি তখন একটা ধাক্কার মতো খেয়েছিলাম, এই মানুষটাই তাহলে 'অষ্ট ডট রাসেল' ওরফে রাসেল পারভেজ! ওয়াল্লা, এ তো দেখি চোখে চোখ রেখেই কথা বলতে পারে না।
প্রথম দেখায় রাসেলকে আমি আমার একটা বই দিয়েছিলাম, 'কয়েদী'। এই দেশে হরতাল নিয়ে গোটা একটা বই সম্ভবত কয়েদী। এই মুগ্ধতা মানুষটাকে স্পর্শ করবে এমনটা যেমন আমি আশা করিনি তেমনি বইটা নিয়ে তাঁর ভাল লাগা। এটা জরুরি না একজনের লেখা অন্যজনের ভাল লাগতেই হবে। তাছাড়া রাসেল পুতুপুতু আলোচনা করবে এটাই বরং হাস্যকর।
কিন্তু তখন আমি প্রচন্ড ক্রদ্ধ হয়েছিলাম, রাসেল কেবল আমার কয়েদী বইটা নিয়ে কঠিন একটা লেখা লিখেছিলেন বলেই না, তিনি আমার নাম নিয়ে অহেতুক টানাটানি করেছিলেন বলে।
কিন্তু এই মানুষটাকে যখনই প্রয়োজন হয়েছে, মানুষটার না নেই! হারিয়ে যাওয়া একটা বাচ্চাকে দিয়ে আসতে হবে। আমি পথ-ঘাট চিনি না। তাতে কী- কেন, রাসেল আছে না।
এতিম বাচ্চারা না-খেয়ে আছে। রাত বাড়ছে, আজই বাজার করে দিয়ে আসতে হবে। বাজারে যেতে যেতে রাত গভীর। তো? রাসেল আছে যে...।
...
তখন আমার বড়ো বাজে সময়। অন্য রকম জীবন-যাপন করি। রাসেল কৌশিকসহ হুট করে একদিন চলে এসেছিলেন আমার এখানে। দিনভর কতশত স্মৃতি ফিরে দেখতে দেখতে পার হয়ে যায়। দুঃসময়ে খানিকটা ভাল লাগা এও কী কম।
(ছবি সূত্র: কৌশিক আহমেদ)
*রাসেলের কয়েদী সমালোচনা: http://raselparvez.blogspot.com/searchq=%E0%A6%86%E0%A6%B2%E0%A7%80+%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%B9%E0%A6%AE%E0%A7%87%E0%A6%A6
*রাসেলের 'আখা ভ্রমণ': http://www.somewhereinblog.net/blog/jontronablog/28819352
**রাসেলের সমালোচনার উত্তর: http://www.ali-mahmed.com/2007/06/blog-post_2332.html
... ... ...
১. আখা ভ্রমণ:
"ভুল মানুষের ডেরায়।
অপরিচিত শহরে আমাকে আমন্ত্রণ জানায় নাক উঁচিয়ে কোনো মতে জেগে থাকা এক বহুমুখী প্রকল্প। বাংলাদেশের বর্ষা তার সমস্ত শরীর ডুবিয়ে দিলেও তার প্রাণহরণ করতে পারেনি এখনও। তাই লাল কালিতে লেখা বহুমুখী প্রকল্পের অস্তিত্ব জানায় দেয় আমাকে। ট্রেন হেলেদুলে বাঁক নেয়। বৃষ্টি অনেকটা হাল্কা চালেই আমাদের পিছুপিছু আসছে।
ট্রেন থেকে নেমে আসলে কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। নতুন শহরে একেবারে অপরিচিত। মানুষের ভাষা বুঝতে পারি না, তোতা পাখীর মতো শেখানো বুলি আউরে যাওয়া যায়। তবে ট্রেনের দুলুনিতে সেই শেখানো বুলিও ভুলে গেছি।
মনে আছে বাজার মসজিদ। অতএব শরণ প্রার্থনা। গন্তব্য আপাতত বড় বাজার মসজিদ। রিকশাওয়ালা চাইলো ২০টাকা। মগা পেয়ে হোগা মেরে দিবে এতটা কাঁচা আমরা না। তোমার রিকশায় চড়লাম না বাল। সামনে একটাকে বলতেই সানন্দে রাজী হয়ে গেলো। সামনেই বাজার, সেই বাজার পার হওয়ার পরে লালবাজার।
কোথায় এসে নামলাম আমরা? এটা কি শহর নাকি বাজার? ঐ যে বড় মসজিদ, উদ্ভ্রান্তের মতো চারপাশ দেখি। এরপরে কোথায় আমাদের জানা নেই। জীবনটাই একটা গোলক ধাঁধাঁ। কোথায় মানুষ ছুটছে তা জানে না, তবে এই মুহূর্তে জীবন বিষয়ে কোনো কচকচানি ভালো লাগছে না। তবে একটা অনুভব জাগে, আরে এইতো সেই হারিয়ে যাওয়া মফস্বল। একেবারে টিপিক্যাল মফস্বলের ছবি এখানে, রাস্তার অবস্থা ভালো না। অবশ্য ভালো রাস্তা দেখবার আশা করা বৃথা, এখানে রোডস এন্ড হাইওয়ে চলে এমপির হুকুমে। সেখানে রাস্তায় বালি না ফেলেও কাজ শেষ বলে বিল তুলে ফেলা যায়, অন্তত এখানে রাস্তায় এখনো সামান্য পীচ নাছোরবান্দা আপদের মতো লেপ্টে আছে এটাই উন্নয়নের আলামত। মফস্বলের সব চেয়ারম্যান দৌড়ের উপরে আছে, দেশটা মিলিটারির কব্জায় যাওয়ার পর থেকে অন্তত সাধারণ জীবনযাপন বলে কিছু নেই। কোনো নতুন টেন্ডার ডাকা হচ্ছে না, অন্তত সেখানে লেফট রাইট করা বড় বাবু, মেজ বাবু, সেজ বাবু, ন-বাবুর কোনো পাওনার হিসেব না থাকলে এলজিআরডি কিংবা স্থানীয় পৌরসভাও নতুন কোনো কাজের নির্দেশ দিচ্ছে না। আলামত সে রকমই, অথচ অন্তত ১ বছর আগেই এ রাস্তার গুরুতর মেরামতির প্রয়োজন।
সেই জংধরা টিনের চাল, নীচে বসে থাকা দোকানী, কোনো সুসজ্জিত শো রুম নেই, একেবারে সাদামাটা আয়োজন। মানুষের আড়ালের প্রয়োজন নেই, বিলাসিতা এখানে থাবা বসায় না, যদিও দোকানে দোকানে আকিজ আর এস আলম হানা দিচ্ছে, তবে এরপাশেই বহাল তবিয়তে টিকে আছে লাল আটা, টিকে আছে ডাব আর শুকনা মরিচ। রাস্তায় বৃষ্টির অবশিষ্ট জমে আছে। কেনো যেন মনে হলো স্টেশনের উলটা পাশে বাসা হবে। রিকশা হঠাত করেই বামে মোড় নিলো, সামনেই রেল ঘুণটি, সেখানের সিগন্যাল পেরিয়ে একটু আগালেই বামে বড় বাজার মসজিদ।
অবশেষে তার সাথে দেখা হলো। অনেক অনেক দিন পরে, বলা যায় প্রায় ১৫ মাস পরে দেখা হলো তার সাথে। কিছু কিছু মানুষ তার ছায়ার চেয়ে বড় হয়ে যায়। কখনও কখনও ছায়াও লজ্জ্বা পায় পাল্লা দিতে। বর্তমানের সময়ে অচল মানুষ, সব কিছু আবেগের মূল্যে মাপে। টোটালি মিসফিট! আমার অনেক কিছুই বলার ছিলো, অন্তত শুকনো মুখে ক্ষমা প্রার্থনার মতো গম্ভীর কোনো বাক্য বলা উচিত ছিলো। নেহায়েত ঠাট্টা করতে গিয়ে যতটা আহত করেছি সেটাতে নির্লজ্জ আমোদ পেয়েছিলাম একদিন। অবশ্য সবার বয়েস বাড়ে, ভুলগুলো বড় হয়ে ধরা পরে। তবে তার সাথে দেখা হওয়ার পরে বুঝলাম ক্ষমা প্রার্থনার কিছু নেই, অনেক আগেই ক্ষমা পেয়ে গেছি আমি। সারা রাত পরিকল্পনা করে গলায় তুলে নিয়ে আসা কোকিলকণ্ঠি সুভাষণের অপ্রয়োজনীয়তার বিমুঢ় বোধ করি। এরপরে আসলে কিছুই বলবার নেই।
তার সাথে হেঁটে হেঁটে বাসায় যাচ্ছি। পুরোনো লেখার সুত্রে জেনেছিলাম তার বাসায় ঢুকবার মুখেই নৌকা আর লাঙল। মসজিদ পার হয়ে সামনে গিয়ে বামে ঘুরেও কোনো নৌকা দেখলাম না, দেখলাম না লাঙল। পুরোনো বাসা। বাসার সামনে বিশাল উঠান, উঠানের দুই পাশে অনেক রকম গাছ। সামনে বড় ঝাউ গাছ। অন্তত সেটা যে ক্রিসমাস ট্রি এই ধারণা আমার ছিলো না। এখানের সব কিছুর পেছনেই একটা-না-একটা স্মৃতি জড়িত। মূলত আমাদের শুভ ভাই স্মৃতিতাড়িত মানুষ, তার শৈশব তাকে তাড়া করে, তার পরিচিত মানুষের ভালোবাসা তাকে তাড়া করে, মানুষের নির্মমতাও হাসিমুখে ভুলে যান তিনি অতীতের সুন্দর একটা ক্ষণের কথা ভেবে। তবে এই ক্রিসমাস ট্রি আসলেই অন্য রকম, মানে এই ক্রিসমাস ট্রির পেছনের স্মৃতিটুকু। তার জীবনের প্রথম বই লিখে পাওয়া রয়্যালিটির টাকায় একটা নিজসব স্বপ্নের গাছ কিনে সেটা নিজের উঠানে লাগাতে পারা মানেই একটা স্বপ্ন বুনে দেওয়া। সেই গাছ এতদিনে ডালপালা মেলে বড় হয়েছে, উঠানের প্রতিটা গাছেই তার স্মৃতি আর স্পর্শ্ব লেগে আছে।
অনেক দিনের ইচ্ছা ছিলো এখানে আসবো। আসি আসি করেও আসা হয় নি অনেক দিন, আর মাঝে আমার পুরোনো মোবাইল হারিয়ে যাওয়ায় হয়তো চাইলেও আমার সাথে যোগাযোগ রাখা সম্ভব হয়নি। আমিও আসবো আসবো করে অনেক জায়গায় চলে গেছি, তবে এখানে আসবার মতো সঙ্গ পাইনি। বসবার ঘর পেরিয়ে একেবার তার লেখার ঘরে পৌঁছে গিয়ে ভালোই লাগলো। পরিপাটি মানুষ, সবকিছু সাজিয়ে রাখতে ভালোবাসেন। হয়তো কিছুটা পারফেক্টশনিষ্ট। তার প্রতিটা বইয়ের শব্দের ভেতরেও হয়তো সেই পারিপাট্যবোধ আছে। আমরা লেখককে চিনি তার লেখার মাধ্যমে, সেই লেখার পেছনের কষ্ট আর যন্ত্রনার কথা আমাদের কানে পৌঁছায় না। তার না ঘুমানো দমবদ্ধ অনুভুতির সাথে আমাদের পরিচয় নেই, একটা চরিত্র যখন দরজার চৌকাঠে বসে থাকে সারা রাত, লেখককে পাহাড়া দেয়, সেই সময় লেখক নিজেও অসস্তিতে ঘুমাতে পারে না।
তার ঘরদোরবারান্দা জুড়ে লিখিত অলিখিত চরিত্রেরা সার বেধে বসে থাকে, এইসব মানুষকে পাশ কাটিয়ে লেখককে শোবার ঘরে ফিরতে হয়। তবে সেখানেও অলিখিত চরিত্র অভিমানী চোখে তাকিয়ে থাকে। এই হাজার চোখের ভীড়ে লেখক আরো বেশী আত্মসচেতন হয়ে উঠতে পারেন আবার অনেক সময় মাত্রাতিরিক্ত যন্ত্রণার কামড়ে বিরক্ত হতে পারেন। আনুষ্ঠানিক কোনো সাক্ষাতকার না বরং নিজের কিছু অনুযোগ জানাতেই মূলত কথাটা সৌজন্যতার বাইরে লেখকচারিতায় পৌঁছায়।
অনেক শৈশবের উপকরণ তার লেখার ঘরে ছড়ানো ছিটানো। সেই টিনের স্টিমার, সর্ষে তেলের সলতে জ্বালালে ভটভট ভটভট গামলায় খাবি খেতো। বয়েস হয়ে গেলে এক কাত হয়ে পানিতে নিভে যেতো সলতে, আবার মুছে শুকিয়ে একই গল্প প্রতিদিন। ঘোর বর্ষায় উঠানের ছোট সমুদ্রে স্টিমার ভাসিয়ে দেওয়া, আর সলতে নিভে যাওয়ার পরে সেটা তুলে নিয়ে আসা গোড়ালি ভিজিয়ে। টমটম আর সারেঙ্গী, সেই নাচ পুতুল, একবার ঘুরালেই একটা নাচের ভঙ্গিতে স্থির হয়ে থাকতো। ডাঙ্গুলি আর লাটিম, সব স্মৃতি আঁকড়ে ধরে সেই শৈশবে পড়ে থাকা শুভকে অচেনা লাগে না। কিছু কিছু মানুষের শৈশব কাটে না কখনও। অবশ্য শৈশব ছাড়া মানুষের একান্ত আপন আর কি আছে?
একেবারে নির্ভাবনার সময়, কোথাও কোনো উদ্বেগ আর অস্থিরতা নেই। শৈশব নিজের নিয়মেই ছুটে, কোথাও একটু স্থির হওয়ার আগেই হারিয়ে যায়, সবার অগোচরেই, আমাদের সারাজীবন আমাদের সঙ্গে থেকেও অম্লিন থেকে যায়। এখানে ঘুরে ফিরে আসা, এখানেই জীবনযাপন। ঘুড়ি আর লাটাইয়ের শৈশব, ডাঙ্গুলি আর মার্বেলের শৈশব, গাছ দাপিয়ে বেড়ানো শৈশব, থরে থরে সাজানো থাকে শৈশবের মনি-মানিক্য, শুধু একটু ঝুকে কুড়িয়ে নেওয়া।
আমাদের আগে যারা এ পৃথীবিতে কাটিয়ে গেছেন তাদের জটিলতাহীন জীবন এখন আমাকে অবাক করে, হয়তো একটা সময় অনেক পরের কোনো ছেলে অবাক হয়ে প্রশ্ন করবে আচ্ছে এককালে মানুষ হাতে লিখতো, তারা হাতে লিখতো কেমন করে, অদের কি কিবোর্ড ছিলো না। সেখানে একেবারে শ্লেট পেয়ে যাওয়া ভীষণ রকম কিছু। হুমায়ুন আহমেদ, হুমায়ুন আজাদ আর মানুষের গল্পের বাইরে আমাদের নিজসব গল্প আছে। আমরা একটা সময়ে মন্তব্যে পরস্পরকে স্পর্শ্ব করতে পারতাম...হয়তো আমি জানি না, সেই ছোঁয়াগুলো জমিয়ে রেখেছে শুভ। আমি অনেক আগে একবার নতুন দিনের বাংলা গালির অভিধান শুরু করেছিলাম, সেটা মুছে দিয়েছি সেই দিন তবে সেটার স্মৃতি রয়ে গেছে শুভর কাছে। আমাকে অনেক বার এই প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়েছে, পুনরায় একই প্রশ্নের উত্তর দিতে হলো, আমার চেহারা আমার লেখার সাথে যায় না। আমি ভুল মানুষের চেহারা নিয়ে জন্মেছি। তবে আমার জিগীষা তখনও জাগ্রত।
খাচ্ছি, বা বলা যায় খাবি খাচ্ছি আতিথেয়তার চাপে। খাওয়ার ফাঁকেই প্রশ্নটা ছুড়ে দিলাম, এই যে মফস্বল, এখানের পরিবেশ, সবটা তেমন ভাবে ফুটে উঠলো না কেনো লেখায়? আসলে এই প্রশ্নটার উত্তর খুঁজছিলাম আমি নিজেই। আমাদের শহুরে লেখকদের উন্নাসিকতার পালটা জবাব কি এই মফস্বল মুছে ফেলা প্রবণতা? লোকে মফু বলবে, এই রে তোর গায়ে এখনও ভ্যাদভ্যাদে মফস্বলের গন্ধ লেগে আছে, তাই মফস্বল থেকে বড় লেখক হতে আসা ছেলেটা শহুরে বন্দনায় মুখরিত হয়। ওহ সিলি টাউনশীপ স্পেসশীপের মতো কোনো দূর মহাশুন্যে লটকে থাকে, শহরের জমিনে গেড়ে বসবার সাহস পায় না। কাঞচন গ্রাম গ্রামের পটভূমিতে লেখা হলেও সেটা পড়ে তেমন আনন্দ পাই নি। সেখানের গ্রাম কিংবা মফস্বলে আমার পরিচিত মফস্বলের ছবি নেই। আর পরিচিত যাদের লেখাই পড়ছি শহুরে ফরিয়া চোখে মফস্বল আর গ্রাম দেখার চেষ্টা। আন্তরিক গ্রাম আর মফস্বল অনুপস্থিত, কিংবা আমার পঠনসীমায় যে কয়টা উপন্যাস মনে পড়ছে তার কোনোটাই ঠিক সেই অর্থে মফস্বলকে ধারণ করতে পারেনি।
এখানে চিত্রিত মানুষের শহরের অপভ্রংশ। আমাদের শহুরে সাহিত্যিকদের চিত্রিত গ্রাম আর মফস্বল, বাস্তব চিত্রের মিমিক্রি। শুভর তৈরি জবাব ছিলো তার অযোগ্যতার বিবরণ। তবে আমার নিজের প্রশ্ন যে কারণে, পত্রিকায় সংবাদ পড়ে আবেগে আপ্লুত হয়ে চোখ ভিজে আসা লেখা লিখবার মতো অনুভব যার আছে সে কেনো নিজের জীবনযাপনের নিজের নিঃশ্বাস প্রশ্বাসের জায়গাটাকে সচেতন ভাবে অবহেলা করে যাচ্ছে। বরং এটাই সবচেয়ে সহজ সাধ্য বিষয় তার জন্য। অবশ্য এ প্রশ্নের একটা বিকল্প উত্তরও শুভ দিয়েছে। হয়তো তার নিজের নির্জনতা বজায় রাখবার লোভ, একান্ত নিজের করে পাওয়া এই অনুভবকে বাজারের সবার সামনে উন্মুক্ত করে দেবার দ্বিধা।
সময় গড়াতে থাকে ঘড়ি চলে নিজের মাপে, আমাদের মাপে সময়টা আচমকা ফুরিয়ে যায়। তার নিজের হাতে লাগানো কড়ই গাছ আর তার নিজের পরিবারের প্রতি তার মমত্ববোধ, তার দ্বিধা, তার লজ্জা, তার আক্ষেপ সবটুকু মিলিয়ে জীবন্ত একটা শুভ সবসময়ই চোখের সামনে ভেসে উঠে। তার বনসাই গাছের টবে লেখা আছে এই গাছের মৃত্যুতে আমি আনন্দিত। একটা গাছকে নিজের চাহিদা পুরণের জন্য নিয়মিত অনাহারে-অর্ধাহারে রাখা, তার নিয়মিত ডাল-পালা ছেঁটে দেওয়া, তার বিকাশ এবং বৃদ্ধি একটা নিজস্ব মাপের টবে আটকে ফেলার দুরভিসন্ধি কিংবা চক্রান্ত ব্যর্থ হয়ে যাওয়ার একটা আনন্দ আছে। আমাদের চাহিদা মেটাতে তোমাকে আমাদের তৈরি করা ছাঁচের ভেতরেই বেড়ে উঠতে হবে, এই রকম অনায্য আবদার অস্বীকার করলেও আদতে মানুষ আধিপত্যবাদী। মানুষ নিজের চাহিদা চাপিয়ে দিতে চায়। বনসাই আমাদের এই কতৃত্বপরায়নতার প্রতীক। কথা না বললেও এক একটা স্মৃতিচিহ্ন দেখে আমি বুঝতে পারি এর পেছনের অনুভবটুকু। হয়তো পরিবেশ কিংবা এমনটা ভাববার সাযুজ্যতা। ঘড়ি লাফিয়ে লাফিয়ে আগায়।
আমাদের ট্রেনের সময় হয়ে যায়। উঠে আসতেই হবে আর থাকবার উপায় নেই কোনো। আসবো না আসবো না করে শেষ পর্যন্ত স্টেশনে এসে আমাদের ট্রেনে পর্যন্ত তুলে দিয়ে নিশ্চিত চলে যাওয়ার আনন্দ পেতে চাইল হয়তো। জানি না, ট্রেনের জানালায় হাত ধরবার মুহূর্তে আমি জানতাম এটা শেষ না, আমাদের অনেক কথাই বলা হয়নি, অনেক আলোচনাই করা হয়নি, আমাদের বিনিময় অসম্পুর্ণ রয়ে গেলো। এই সময়ের মানুষের নিয়মিত হিসেবের বাইরে কিছু কিছু ভুল মানুষ এখনও বেঁচে আছে যারা অর্থ আর প্রতিষ্ঠার চেয়ে মানুষের হৃদয়কে সত্যি ভেবে জীবনযাপন করে। ইহলৌকিক নিয়মে তাদের প্রতিষ্ঠার হিসেব মেলানো দুস্কর। তারা হৃদয়ের ঐশ্বর্যে ধনী, জাগতিক প্রতিষ্ঠার মোহ তাদের নেই। এমন ভুলভাল মানুষের কাছে গিয়ে নিজেরও সব কিছু ছেড়ে দিয়ে সাধারণ মানুষ হতে ইচ্ছা করে, এই সব অচল মানুষেরাই হয়তো সভ্যতা সচল করে রাখে আবেগে ভালোবাসায়। সেই ভালোবাসা ছুঁয়ে যায় সংশ্লিষ্ট সবাইকে। এমন এক পরিবেশে সময় কাটাতে ইচ্ছা করে যেখানে সবার জন্য একটা চাটাই পাতা আছে, থাকবেন? থাকেন না ভাই। একটা দিন থেকে যান।এই লোভনীয় আহবান রেখে ফিরে আসবার সময়টা স্তব্ধ হয়ে থাকি।
আমার হাতে দারুচিনির ডাল, আমি অল্প অল্প ভাঙি আর মুখে দেই। ভাবতে থাকি মানুষ কতটা অশালীন রকমের প্রতিষ্ঠাকামী লোভী বর্বর, শালারা গাছের ছাল খুলে, তাকে উলঙ্গ করে বাজারে বিক্রী করে গাছের পোশাক। সে পোশাক মানুষ পয়সা দিয়ে কিনে আর উলঙ্গ গাছ দাঁড়িয়ে থাকে সাজানো বাগানে। আর যার সাথে পরিচয় হলো, তাকে বলবার মতো কিছু নেই, আতিথেয়তার উত্তরে সামাজিক প্রত্যুত্তর না দিয়ে বরং তার জন্য এতটুকু বলা যায়। কোনো-কোনো স্পর্শ্ব অনাবিল আনন্দের অনুভুতি দেয়। কোনো-কোনো প্রথম পরিচয়ে অপরিচয়ের সংশয় থাকে না। বরং পরিচিত মানুষটাকে অনেক দিনের চেনা মনে হয়। এইসব মনে হওয়া সম্পর্কের কোনো নাম হয় না। আমিও সম্পর্ককে কোনো নাম দিতে পারিনি, সামাজিক পরিচয়ে ঠিক কি সম্বোধন উপযুক্ত হবে ভেবে পাইনি।
যতদুরেই যাই, কিছু কিছু মানুষ একেবারে হৃদয়ের কাছাকাছি থেকে যায়। অন্য রকম কষ্টবোধে গলা আটকে আসে, ভেতরে কান্না থাকে না, অনিবার্য বিচ্ছেদের বেদনা থাকে। মুখ ফুটে বলা যায় না আসি কিংবা যাই, সমস্ত পথ ফিরে ফিরে তাকাই, যতদুর দেখা যায়। আদর আর আপ্যায়নের ছাপ মেখে চলে আসতে ইচ্ছা করে না। এখানে এসে মনে হলো, আর কোথাও যাওয়ার নেই, এটাই নিশ্চিত নিরাপদ আশ্রয়। তবুও ডানা মেলে উড়ে যেতে হবে। আমাদের সবার গন্তব্য থাকে, কিংবা আপাত গন্তব্য কিংবা ঘরে ফিরে আসবার দায়। তবু মুছে ফেলা যায় না সেই ছাপ। ভালো থাকুক তারা সবাই, সাময়িক আঁধার কেটে আবার সূর্য্যের আলোতে উদ্ভাসিত হোক তাদের জীবন।"
২. কয়েদী, সমালোচনা:
"আত্মপরিচয় নিয়ে সংকট কাটে না কিংবা আত্মপরিচয়ের গ্লানি বহন করা দুঃসাধ্য বলেই নতুন পরিচয় নির্মাণের চেষ্টা করে মানুষ। এই পরিচয় আর ভাবমুর্তি সংকট এড়ানোর কোনো সামাজিক পন্থা নেই। আমরা মুখে গামছা বেঁধে বেশ্যা বাড়ী যাই, দুপুরে পাঞ্জাবী চাপিয়ে গায়ে আতরচর্চিত তুলো কানে গুঁজে যাই খোতবা শুনতে আর বিকালে রাস্তায় দাঁড়িয়ে শাড়ীর ফাঁক গলে উপচে পড়া যৌবন চাটি এবং আমাদের ভাবমুর্তি নির্মাণ করি। সংকটটা ভয়াবহ। নিজের সাথে নিজের দ্বৈরথ, অবশেষে সমাধান আসে, নিজের ভাবমুর্তি নির্মাণের পর ঢাক ঢোল বাজিয়ে সেই ভাবমুর্তি সবাইকে জানানোর কাজটাও নিজেকেই করতে হয়। আমি এলেবেলে কেউ না আমি সেই জন, সেই রকম একজন অতএব আমার কথা শ্রবণ করো তোমরা।
'আবুল হোসেন'নামের একজন কবি বিদ্যমান ছিলো বলেই আমরা আবুল হাসানকে পাই, জন্ম হয় শামসুর রাহমান, শফিক রেহমানের। একটা সিল মোহর লাগানো নামের বানানে কিংবা একটা বিশিষ্ঠতা নিয়ে আসা নামে। জীবনানন্দ দাশগুপ্ত নিজের গোপনীয়তা উন্মোচন করে গুপ্ত বিদ্যা ভুলে জীবনানন্দ দাশ হয়ে উঠার পন্থাটা এরকমই। হয়তো জীবিত মানুষদের ভেতরে বেশী পরিমাণ স্পর্শকাতর হওয়ায় আত্মপরিচয়ের সংকট শিল্পিদের বেশী আক্রান্ত করে, তাই মহনু শাহ, মুজিব ইরম, ব্রাত্য রাইসু বিভিন্ন রকম ভাব ও ভাঁজ ছড়িয়ে সামনে আসেন আমাদের।আমরা নিজেরাও ভাবমুর্তি নির্মাণ করি।
আহ্লাদ করে আমি প্রেমিকাকে বলতাম কুন্তলা, আমার লেখ্য সম্বোধনের আড়ালে কুন্তলার ভাবমূুর্তি নির্মাণে এত ব্যস্ত ছিলাম যখন অবশেষ অবসর আসলো, ক্লান্তি আসলো, চেনা প্রেমিকাকে তার রচিত ভাবমূর্তির সাথে মেলাতে পারলাম না কোনো ভাবেই।নিজের নামকে কেঁটে ছেটে বানানের হেরফেরে ইতর জনের সাথে স্পষ্ট পার্থক্য গড়ে তোলার প্রক্রিয়াটা মোটেও নিন্দনীয় নয়। কারো কারো আবার জুতসই নাম থাকে, খালেদ মইনুদ্দিন কিংবা মাহবুব কায়সার, এমন নামগুলোর ভেতরে একটা আলাদা ভারিক্কি আছে। কিংবা আধুনিক যুগে এটাই রীতি, 2 পর্বের নাম হতে হয়, আবুল কালাম মোহাম্মদমনজুর মোরশেদ নামটা খারাপ না তবে আধুনিক হয়ে উঠতে পারে নি- আধুনিক হতে হলে ম্যাজিক টাচ দিতে হয় নামে।
আহমাদ মোস্তফা কামালের নামাঙ্কন আমাকে আকৃষ্ট করতে পারেনি, এমনকি এখনও আলোচনার সময় ভুলে শামসুর রহমান বলে ফেলি রাহমানের বদলে। আমাদের চোখ চেনা পরিচয় খুঁজে পায় তাই শামসুর রাহমান যে আসলেই রাহমান এটা নিশ্চিত হই যখন গত বছর একজন জানালো তার নামের বানান আসলে রাহমান। একই কারনে আহমাদ শব্দটা চোখে পড়লে সবার শেষে, আমাদের জনাব গল্প লেখক যে মেদ ঝড়িয়ে উন্মাদের উন কামিয়ে ফেলে পুরো মাদ হয়ে আছেন এটা বুঝতে পারি নি।
আজ যে দুজনের কথা লিখবো তারা দুজনেই নামে অস্ত্রোপচার করেছেন। জনাব আলী মাহমেদ( যদিও নিশ্চিত না এটা মোহাম্মদের শিশ্ন ছেড়া রূপ না মাহমুদের শিশ্নের উত্থান) অন্য জন আহ ম্যাড মোস্তফা কামাল।
আলী মাহমেদের বই পড়া হয়েছে ব্লগের সুবাদে। তার বস্ত্র উম্মোচন পর্ব সমাপ্ত হয়েছে এই বইমেলায়। "কয়েদী" নামের বইটির ঘটনাগুলোও অনেকে পড়েছেন, তবে বইটি কেনো হরতাল বিষয়ক অঘটন সংকলন না হয়ে জাগৃতির ভাষ্যমতো "দেশের একমাত্র হরতাল বিরোধী উপন্যাস" হয়ে উঠলো সেই সমাধান খুঁজে পাই নি এখনও। তাই বিজ্ঞাপনের ভাষ্যমোতাবেক এটাকে হরতাল বিরোধী উপন্যাস হিসেবেই চিহ্নিত করা হবে।
ক্ষীণবপু "কয়েদী" উপন্যাস পড়তে সময় লাগলো 40 মিনিট, যারা আরও দ্রুত পঠনে অভ্যস্ত তাদের হয়তো সময় লাগবে 30 মিনিট।42 পাতার এই উপন্যাসে হরতাল বিষয়ক অঘটন জমা হয়েছে 5টা এবং এগুলো আপাতবিচ্ছিন্ন। বিভিন্ন হরতাল দিনের অলৌকিক মিলন বাদ দিলে অন্য কোনো মিলও খুঁজে পাওয়া যাবে না সাদা চোখে। এবং বিজ্ঞাপন দেখার পর খুঁজে দেখলাম ঘটনাগুলোর উপরে কোনো শিরোনাম নেই- অথর্্যাৎ এটা বিচ্ছিন্ন হরটাল বিষয়ক গল্প নয়।
হরতাল নামক অস্ত্রটা বহুল ব্যভারে ভোঁতা হয়ে গেছে সত্য তবে গনঅনাস্থা প্রকাশের জন্য এক চেয়ে বড় কোনো অস্ত্র নেই এখন পর্যন্ত রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে। শহুরে মধ্যবিত্তের কিয়দংশ ছাড়া আসলে এখন তেমন ভাবে হরতাল উদযাপণ করে না কেউই। হরতালের দিনও বাজার বসে, পণ্যের পসরা সাজানো হয়,গার্মেন্টস ফ্যাক্টারী ফুল প্রোডাকশনে যায়, ইপিজেডও বন্ধ থাকে না। এবং কৃষক শ্রমিক কামার কুমার সবাই দোকান খুলেই বসতে পারে, ক্ষেতে যেতে পারে। এর পরও জামিল আহমেদ নামের এক অতিশয় সংবেদনশীল গার্মেন্টস ব্যবসায়ীর অস্তিত্ব খুঁজে পাই উপন্যাসের পাতায়। এটা গল্প উপন্যাসেই সম্ভব। বাস্তবের পোশাক শিল্পের সাথে যুক্ত মানুষগোলো নুন্যতম মজুরি বাড়ালে না খেয়ে মাঠে মরতে হয়ে এবং দাবী দাওয়া নিয়ে দেন দরবার করে এবং সেখানে জামিল আহমেদের অনুপস্থিতি প্রকট ভাবেই ধরা পড়ে।
সেই সংবেদনশীল জামিল আহমেদ কোনো এক হরতালের দিন তার জাপানী ব্যবসায়ী পার্টনারকে আনতে যান এয়ারপোর্টে-সেবার টানা ১৫ দিন হরতাল ছিলো- এ সময়ই সুশীল সমাজীয় মতের দেখা পাই আমরা উপন্যাসে।
বাংলাদেশ সম্ভবনাময় দেশ, সেই সম্ভবনা নিহত হচ্ছে রাজনৈতিক অস্থিরতায়। হবে হয়তো, পেশাদার আমলাতান্ত্রিক দূর্নীতি আর লাল ফিতার দৈরাত্বে যখন বাংলাদেশর পরিচয় এখানে ব্যবসা শুরু করতে সবচেয়ে বেশী সময় লাগে, যখন কোনো রকম রাজনৈতিক অস্থিরতা ছাড়াই দেশের সাম্প্রতিক এডিপি প্রবৃদ্ধি কমে যায়- তখন সুশীল সমাজের এই মত ন্যাংটা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে অধোবদনে। কিংবা এখন রাজনৈতিক অস্থিরতা নেই এর পরও সাধারন মানুষ বাজার থেকে মুলধন সরিয়ে নিচ্ছে , এই সব অহেতুক কারণগুলোতে রাজনীতি বা হরতাল নেই। দেশে আইনের শাসন সুপ্রতিষ্ঠিত করার জন্য মইন উদ দৌলা দেশের আনাচে কানাচে ঘুরে আমাদের সহবত শিষ্ঠাচার আর ন্যায়নীতির পাঠ দিচ্ছেন,মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা ফখরুদ্দিন বাবুর্চির রন্ধনশালায় সুপক্ক উন্নয়ন সেদ্ধ হচ্ছে,দূর্নীতির ভেজালবিহীন বাংলাদেশ সিদ্ধ হচ্ছে, সিদ্ধ হচ্ছে হলি ডে মার্কেট। আর বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিষের দাম বাড়ছে। তেলের দাম, চালের দাম ডালের দাম, সবজীর দাম বাড়ছে এবং বাড়ছে, কোনো সিন্ডিকেট নেই এর পরও মুল্য ঝুলিয়ে দিলেও পাইকারী বাজারে আর খুচরা বাজারে কোথাও সেই দামে জিনিষ পাওয়া যাচ্ছে না।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্ভবনা রাজনৈতিক অস্থিরতা ছাড়াই খাবি খাচ্ছে যখন নোবেল মেডেল ঝুলিয়ে আসলেন ইউনুস। হরতাল না হলে অবশ্যই উন্নয়নের জোয়ারে আমরা ডুবে মারা যাবো।
সংবেদী জামিল সাহেব জাপানী ভাষায় আমার সোনার বাংলা পড়ে কাঁদতে কাঁদতে শেরাটন হোটেল ছাড়লে চিরতরে হারিয়ে যান এই উপন্যাসের পাতা থেকে। তার চিরবিলুপ্তির দুঃখ ঘুচিয়ে দিতে আসেন সাকিব সাহেব। রেলগাড়ী ঝমাঝম না করে দাঁড়িয়ে থাকে রেল লাইনে, ক্ল্যাস্টোফোবিয়ার জন্ম হয়, তিনি মানসিক অস্থিরতায় শেষ পর্যন্ত রাঁচি কিংবা পিজিতে আশ্রয় নিয়েছেন হয়তো।
এর পর দৃশ্যপটে লেখক দাঁড়ান বুক চিতিয়ে। বাংলাদেশের রাজনীতি আর রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের উপর শ্রদ্ধাবোধ নেই তেমন ভাবে। তাই কোনও নির্দেশনা না দিয়েই লেখক তথ্য-প্রমাণ হাজির করেন হরতাল আসলেই খারাপ। গার্মেন্টস, চিংরী, ট্রাক ভর্তি পন্য সবই আটকে আছে, সীমান্ত অতিক্রম করতে পারছে না, তাই হরতাল খারাপ।
এসব পড়ে মনে হয়, সংবাদ পত্রের পাতায় বাংলাদেশ দেখুন শীর্ষক রচনা প্রতিযোগীতা চলছে। ব্যবসায়ী মহলের কথা আসা, এদের সাথে আসে অর্থনীতি এবং উন্নয়নের প্রলাপ। তবে সংবাদ পত্রে বাংলাদেশ দেখার ভেতরের ভিত্তিহীন আবেগটা ন্যাংটা পাগল হয়ে রাস্তায় ঘুরে। মানুষের সংবেদন জাগানো বা মানুষের চিত্তকে হরতালের প্রতি বিষিয়ে তোলার ক্ষমতা নেই বইটার ভেতরে।
হরতাল বিরোধী এই উপন্যাসে আবেগ সংবেদনশীলতা,মমত্ববোধ, অক্ষমতার আক্ষেপ , সব রকম ট্রাজিক উপাদান ঢুকিয়ে দেওয়ার পরও কোনো এক অজানা কারণে এটা উপন্যাসে উত্তির্ণ হতে পারে না।
ব্যর্থতার কারণ অনুসন্ধান করলে বোধ হয় পারস্পর্যহীনতাকে প্রধান খল হিসেবে চিহ্নিত করা যাবে। গঠন শৈলীতে সমসয়া, সমস্যা ঘটনা নির্মাণে। বিষয়টা অদক্ষ হাতের মোজাইক হয়ে যায় হরতাল দিনের ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন অংশ জুড়ে সামগ্রীক কোলাজ হয়ে উঠে না।
হরতাল আধিক্য অন্য একটা কারণ হতে পারে- কিংবা হরতালজনিত বিপত্তি সংকলন না হয়ে দক্ষ রূপায়নে হরটালের ঘটনাগুলোকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ব্যবহার করা যেতো। মূল উপজীব্য হরতালই হতো তবে চরিত্রগুলোকে আরও ছড়িয়ে দিলে ভালো হতো।
যদি আমি লিখতাম একই ঘটনাগুলো নিয়ে তবে জামিল আহমেদ চরিত্রটাকে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত নিয়ে যেটাম, সেখান থেকে কোনো এক সিগন্যালে জামিল আহমেদের সাথে সাক্ষাৎ করিয়ে দিতাম শহীদ সাহেবকে। সেই রেল লাইন ধরে যেটাম সাকিবের কাছে- সাকিবকে ছুঁয়ে আসতাম লেখকের কাছে- একই মাল মশলা ব্যবহার করে বিভিন্ন বিন্যাসে সাজিয়ে হরতালের বিভীষিকা তুলে ধরার চেষ্টা করতাম।
এখানে এক খাবলা রং ওখানে এক খাবলা এমন না করে বিভিন্ন রং এর প্রলেপ দিতাম যত্ন নিয়ে। নির্মাণ সব সময় পিরামিড হওয়া ভালো, বিশাল ভিত্তি নিয়ে শুরু হবে, ধীরে ধীরে সেটা চুড়ান্ত শীর্ষে আরোহন করবে।"
ট্রেন থেকে নেমে আসলে কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। নতুন শহরে একেবারে অপরিচিত। মানুষের ভাষা বুঝতে পারি না, তোতা পাখীর মতো শেখানো বুলি আউরে যাওয়া যায়। তবে ট্রেনের দুলুনিতে সেই শেখানো বুলিও ভুলে গেছি।
মনে আছে বাজার মসজিদ। অতএব শরণ প্রার্থনা। গন্তব্য আপাতত বড় বাজার মসজিদ। রিকশাওয়ালা চাইলো ২০টাকা। মগা পেয়ে হোগা মেরে দিবে এতটা কাঁচা আমরা না। তোমার রিকশায় চড়লাম না বাল। সামনে একটাকে বলতেই সানন্দে রাজী হয়ে গেলো। সামনেই বাজার, সেই বাজার পার হওয়ার পরে লালবাজার।
কোথায় এসে নামলাম আমরা? এটা কি শহর নাকি বাজার? ঐ যে বড় মসজিদ, উদ্ভ্রান্তের মতো চারপাশ দেখি। এরপরে কোথায় আমাদের জানা নেই। জীবনটাই একটা গোলক ধাঁধাঁ। কোথায় মানুষ ছুটছে তা জানে না, তবে এই মুহূর্তে জীবন বিষয়ে কোনো কচকচানি ভালো লাগছে না। তবে একটা অনুভব জাগে, আরে এইতো সেই হারিয়ে যাওয়া মফস্বল। একেবারে টিপিক্যাল মফস্বলের ছবি এখানে, রাস্তার অবস্থা ভালো না। অবশ্য ভালো রাস্তা দেখবার আশা করা বৃথা, এখানে রোডস এন্ড হাইওয়ে চলে এমপির হুকুমে। সেখানে রাস্তায় বালি না ফেলেও কাজ শেষ বলে বিল তুলে ফেলা যায়, অন্তত এখানে রাস্তায় এখনো সামান্য পীচ নাছোরবান্দা আপদের মতো লেপ্টে আছে এটাই উন্নয়নের আলামত। মফস্বলের সব চেয়ারম্যান দৌড়ের উপরে আছে, দেশটা মিলিটারির কব্জায় যাওয়ার পর থেকে অন্তত সাধারণ জীবনযাপন বলে কিছু নেই। কোনো নতুন টেন্ডার ডাকা হচ্ছে না, অন্তত সেখানে লেফট রাইট করা বড় বাবু, মেজ বাবু, সেজ বাবু, ন-বাবুর কোনো পাওনার হিসেব না থাকলে এলজিআরডি কিংবা স্থানীয় পৌরসভাও নতুন কোনো কাজের নির্দেশ দিচ্ছে না। আলামত সে রকমই, অথচ অন্তত ১ বছর আগেই এ রাস্তার গুরুতর মেরামতির প্রয়োজন।
সেই জংধরা টিনের চাল, নীচে বসে থাকা দোকানী, কোনো সুসজ্জিত শো রুম নেই, একেবারে সাদামাটা আয়োজন। মানুষের আড়ালের প্রয়োজন নেই, বিলাসিতা এখানে থাবা বসায় না, যদিও দোকানে দোকানে আকিজ আর এস আলম হানা দিচ্ছে, তবে এরপাশেই বহাল তবিয়তে টিকে আছে লাল আটা, টিকে আছে ডাব আর শুকনা মরিচ। রাস্তায় বৃষ্টির অবশিষ্ট জমে আছে। কেনো যেন মনে হলো স্টেশনের উলটা পাশে বাসা হবে। রিকশা হঠাত করেই বামে মোড় নিলো, সামনেই রেল ঘুণটি, সেখানের সিগন্যাল পেরিয়ে একটু আগালেই বামে বড় বাজার মসজিদ।
অবশেষে তার সাথে দেখা হলো। অনেক অনেক দিন পরে, বলা যায় প্রায় ১৫ মাস পরে দেখা হলো তার সাথে। কিছু কিছু মানুষ তার ছায়ার চেয়ে বড় হয়ে যায়। কখনও কখনও ছায়াও লজ্জ্বা পায় পাল্লা দিতে। বর্তমানের সময়ে অচল মানুষ, সব কিছু আবেগের মূল্যে মাপে। টোটালি মিসফিট! আমার অনেক কিছুই বলার ছিলো, অন্তত শুকনো মুখে ক্ষমা প্রার্থনার মতো গম্ভীর কোনো বাক্য বলা উচিত ছিলো। নেহায়েত ঠাট্টা করতে গিয়ে যতটা আহত করেছি সেটাতে নির্লজ্জ আমোদ পেয়েছিলাম একদিন। অবশ্য সবার বয়েস বাড়ে, ভুলগুলো বড় হয়ে ধরা পরে। তবে তার সাথে দেখা হওয়ার পরে বুঝলাম ক্ষমা প্রার্থনার কিছু নেই, অনেক আগেই ক্ষমা পেয়ে গেছি আমি। সারা রাত পরিকল্পনা করে গলায় তুলে নিয়ে আসা কোকিলকণ্ঠি সুভাষণের অপ্রয়োজনীয়তার বিমুঢ় বোধ করি। এরপরে আসলে কিছুই বলবার নেই।
তার সাথে হেঁটে হেঁটে বাসায় যাচ্ছি। পুরোনো লেখার সুত্রে জেনেছিলাম তার বাসায় ঢুকবার মুখেই নৌকা আর লাঙল। মসজিদ পার হয়ে সামনে গিয়ে বামে ঘুরেও কোনো নৌকা দেখলাম না, দেখলাম না লাঙল। পুরোনো বাসা। বাসার সামনে বিশাল উঠান, উঠানের দুই পাশে অনেক রকম গাছ। সামনে বড় ঝাউ গাছ। অন্তত সেটা যে ক্রিসমাস ট্রি এই ধারণা আমার ছিলো না। এখানের সব কিছুর পেছনেই একটা-না-একটা স্মৃতি জড়িত। মূলত আমাদের শুভ ভাই স্মৃতিতাড়িত মানুষ, তার শৈশব তাকে তাড়া করে, তার পরিচিত মানুষের ভালোবাসা তাকে তাড়া করে, মানুষের নির্মমতাও হাসিমুখে ভুলে যান তিনি অতীতের সুন্দর একটা ক্ষণের কথা ভেবে। তবে এই ক্রিসমাস ট্রি আসলেই অন্য রকম, মানে এই ক্রিসমাস ট্রির পেছনের স্মৃতিটুকু। তার জীবনের প্রথম বই লিখে পাওয়া রয়্যালিটির টাকায় একটা নিজসব স্বপ্নের গাছ কিনে সেটা নিজের উঠানে লাগাতে পারা মানেই একটা স্বপ্ন বুনে দেওয়া। সেই গাছ এতদিনে ডালপালা মেলে বড় হয়েছে, উঠানের প্রতিটা গাছেই তার স্মৃতি আর স্পর্শ্ব লেগে আছে।
অনেক দিনের ইচ্ছা ছিলো এখানে আসবো। আসি আসি করেও আসা হয় নি অনেক দিন, আর মাঝে আমার পুরোনো মোবাইল হারিয়ে যাওয়ায় হয়তো চাইলেও আমার সাথে যোগাযোগ রাখা সম্ভব হয়নি। আমিও আসবো আসবো করে অনেক জায়গায় চলে গেছি, তবে এখানে আসবার মতো সঙ্গ পাইনি। বসবার ঘর পেরিয়ে একেবার তার লেখার ঘরে পৌঁছে গিয়ে ভালোই লাগলো। পরিপাটি মানুষ, সবকিছু সাজিয়ে রাখতে ভালোবাসেন। হয়তো কিছুটা পারফেক্টশনিষ্ট। তার প্রতিটা বইয়ের শব্দের ভেতরেও হয়তো সেই পারিপাট্যবোধ আছে। আমরা লেখককে চিনি তার লেখার মাধ্যমে, সেই লেখার পেছনের কষ্ট আর যন্ত্রনার কথা আমাদের কানে পৌঁছায় না। তার না ঘুমানো দমবদ্ধ অনুভুতির সাথে আমাদের পরিচয় নেই, একটা চরিত্র যখন দরজার চৌকাঠে বসে থাকে সারা রাত, লেখককে পাহাড়া দেয়, সেই সময় লেখক নিজেও অসস্তিতে ঘুমাতে পারে না।
তার ঘরদোরবারান্দা জুড়ে লিখিত অলিখিত চরিত্রেরা সার বেধে বসে থাকে, এইসব মানুষকে পাশ কাটিয়ে লেখককে শোবার ঘরে ফিরতে হয়। তবে সেখানেও অলিখিত চরিত্র অভিমানী চোখে তাকিয়ে থাকে। এই হাজার চোখের ভীড়ে লেখক আরো বেশী আত্মসচেতন হয়ে উঠতে পারেন আবার অনেক সময় মাত্রাতিরিক্ত যন্ত্রণার কামড়ে বিরক্ত হতে পারেন। আনুষ্ঠানিক কোনো সাক্ষাতকার না বরং নিজের কিছু অনুযোগ জানাতেই মূলত কথাটা সৌজন্যতার বাইরে লেখকচারিতায় পৌঁছায়।
অনেক শৈশবের উপকরণ তার লেখার ঘরে ছড়ানো ছিটানো। সেই টিনের স্টিমার, সর্ষে তেলের সলতে জ্বালালে ভটভট ভটভট গামলায় খাবি খেতো। বয়েস হয়ে গেলে এক কাত হয়ে পানিতে নিভে যেতো সলতে, আবার মুছে শুকিয়ে একই গল্প প্রতিদিন। ঘোর বর্ষায় উঠানের ছোট সমুদ্রে স্টিমার ভাসিয়ে দেওয়া, আর সলতে নিভে যাওয়ার পরে সেটা তুলে নিয়ে আসা গোড়ালি ভিজিয়ে। টমটম আর সারেঙ্গী, সেই নাচ পুতুল, একবার ঘুরালেই একটা নাচের ভঙ্গিতে স্থির হয়ে থাকতো। ডাঙ্গুলি আর লাটিম, সব স্মৃতি আঁকড়ে ধরে সেই শৈশবে পড়ে থাকা শুভকে অচেনা লাগে না। কিছু কিছু মানুষের শৈশব কাটে না কখনও। অবশ্য শৈশব ছাড়া মানুষের একান্ত আপন আর কি আছে?
একেবারে নির্ভাবনার সময়, কোথাও কোনো উদ্বেগ আর অস্থিরতা নেই। শৈশব নিজের নিয়মেই ছুটে, কোথাও একটু স্থির হওয়ার আগেই হারিয়ে যায়, সবার অগোচরেই, আমাদের সারাজীবন আমাদের সঙ্গে থেকেও অম্লিন থেকে যায়। এখানে ঘুরে ফিরে আসা, এখানেই জীবনযাপন। ঘুড়ি আর লাটাইয়ের শৈশব, ডাঙ্গুলি আর মার্বেলের শৈশব, গাছ দাপিয়ে বেড়ানো শৈশব, থরে থরে সাজানো থাকে শৈশবের মনি-মানিক্য, শুধু একটু ঝুকে কুড়িয়ে নেওয়া।
আমাদের আগে যারা এ পৃথীবিতে কাটিয়ে গেছেন তাদের জটিলতাহীন জীবন এখন আমাকে অবাক করে, হয়তো একটা সময় অনেক পরের কোনো ছেলে অবাক হয়ে প্রশ্ন করবে আচ্ছে এককালে মানুষ হাতে লিখতো, তারা হাতে লিখতো কেমন করে, অদের কি কিবোর্ড ছিলো না। সেখানে একেবারে শ্লেট পেয়ে যাওয়া ভীষণ রকম কিছু। হুমায়ুন আহমেদ, হুমায়ুন আজাদ আর মানুষের গল্পের বাইরে আমাদের নিজসব গল্প আছে। আমরা একটা সময়ে মন্তব্যে পরস্পরকে স্পর্শ্ব করতে পারতাম...হয়তো আমি জানি না, সেই ছোঁয়াগুলো জমিয়ে রেখেছে শুভ। আমি অনেক আগে একবার নতুন দিনের বাংলা গালির অভিধান শুরু করেছিলাম, সেটা মুছে দিয়েছি সেই দিন তবে সেটার স্মৃতি রয়ে গেছে শুভর কাছে। আমাকে অনেক বার এই প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়েছে, পুনরায় একই প্রশ্নের উত্তর দিতে হলো, আমার চেহারা আমার লেখার সাথে যায় না। আমি ভুল মানুষের চেহারা নিয়ে জন্মেছি। তবে আমার জিগীষা তখনও জাগ্রত।
খাচ্ছি, বা বলা যায় খাবি খাচ্ছি আতিথেয়তার চাপে। খাওয়ার ফাঁকেই প্রশ্নটা ছুড়ে দিলাম, এই যে মফস্বল, এখানের পরিবেশ, সবটা তেমন ভাবে ফুটে উঠলো না কেনো লেখায়? আসলে এই প্রশ্নটার উত্তর খুঁজছিলাম আমি নিজেই। আমাদের শহুরে লেখকদের উন্নাসিকতার পালটা জবাব কি এই মফস্বল মুছে ফেলা প্রবণতা? লোকে মফু বলবে, এই রে তোর গায়ে এখনও ভ্যাদভ্যাদে মফস্বলের গন্ধ লেগে আছে, তাই মফস্বল থেকে বড় লেখক হতে আসা ছেলেটা শহুরে বন্দনায় মুখরিত হয়। ওহ সিলি টাউনশীপ স্পেসশীপের মতো কোনো দূর মহাশুন্যে লটকে থাকে, শহরের জমিনে গেড়ে বসবার সাহস পায় না। কাঞচন গ্রাম গ্রামের পটভূমিতে লেখা হলেও সেটা পড়ে তেমন আনন্দ পাই নি। সেখানের গ্রাম কিংবা মফস্বলে আমার পরিচিত মফস্বলের ছবি নেই। আর পরিচিত যাদের লেখাই পড়ছি শহুরে ফরিয়া চোখে মফস্বল আর গ্রাম দেখার চেষ্টা। আন্তরিক গ্রাম আর মফস্বল অনুপস্থিত, কিংবা আমার পঠনসীমায় যে কয়টা উপন্যাস মনে পড়ছে তার কোনোটাই ঠিক সেই অর্থে মফস্বলকে ধারণ করতে পারেনি।
এখানে চিত্রিত মানুষের শহরের অপভ্রংশ। আমাদের শহুরে সাহিত্যিকদের চিত্রিত গ্রাম আর মফস্বল, বাস্তব চিত্রের মিমিক্রি। শুভর তৈরি জবাব ছিলো তার অযোগ্যতার বিবরণ। তবে আমার নিজের প্রশ্ন যে কারণে, পত্রিকায় সংবাদ পড়ে আবেগে আপ্লুত হয়ে চোখ ভিজে আসা লেখা লিখবার মতো অনুভব যার আছে সে কেনো নিজের জীবনযাপনের নিজের নিঃশ্বাস প্রশ্বাসের জায়গাটাকে সচেতন ভাবে অবহেলা করে যাচ্ছে। বরং এটাই সবচেয়ে সহজ সাধ্য বিষয় তার জন্য। অবশ্য এ প্রশ্নের একটা বিকল্প উত্তরও শুভ দিয়েছে। হয়তো তার নিজের নির্জনতা বজায় রাখবার লোভ, একান্ত নিজের করে পাওয়া এই অনুভবকে বাজারের সবার সামনে উন্মুক্ত করে দেবার দ্বিধা।
সময় গড়াতে থাকে ঘড়ি চলে নিজের মাপে, আমাদের মাপে সময়টা আচমকা ফুরিয়ে যায়। তার নিজের হাতে লাগানো কড়ই গাছ আর তার নিজের পরিবারের প্রতি তার মমত্ববোধ, তার দ্বিধা, তার লজ্জা, তার আক্ষেপ সবটুকু মিলিয়ে জীবন্ত একটা শুভ সবসময়ই চোখের সামনে ভেসে উঠে। তার বনসাই গাছের টবে লেখা আছে এই গাছের মৃত্যুতে আমি আনন্দিত। একটা গাছকে নিজের চাহিদা পুরণের জন্য নিয়মিত অনাহারে-অর্ধাহারে রাখা, তার নিয়মিত ডাল-পালা ছেঁটে দেওয়া, তার বিকাশ এবং বৃদ্ধি একটা নিজস্ব মাপের টবে আটকে ফেলার দুরভিসন্ধি কিংবা চক্রান্ত ব্যর্থ হয়ে যাওয়ার একটা আনন্দ আছে। আমাদের চাহিদা মেটাতে তোমাকে আমাদের তৈরি করা ছাঁচের ভেতরেই বেড়ে উঠতে হবে, এই রকম অনায্য আবদার অস্বীকার করলেও আদতে মানুষ আধিপত্যবাদী। মানুষ নিজের চাহিদা চাপিয়ে দিতে চায়। বনসাই আমাদের এই কতৃত্বপরায়নতার প্রতীক। কথা না বললেও এক একটা স্মৃতিচিহ্ন দেখে আমি বুঝতে পারি এর পেছনের অনুভবটুকু। হয়তো পরিবেশ কিংবা এমনটা ভাববার সাযুজ্যতা। ঘড়ি লাফিয়ে লাফিয়ে আগায়।
আমাদের ট্রেনের সময় হয়ে যায়। উঠে আসতেই হবে আর থাকবার উপায় নেই কোনো। আসবো না আসবো না করে শেষ পর্যন্ত স্টেশনে এসে আমাদের ট্রেনে পর্যন্ত তুলে দিয়ে নিশ্চিত চলে যাওয়ার আনন্দ পেতে চাইল হয়তো। জানি না, ট্রেনের জানালায় হাত ধরবার মুহূর্তে আমি জানতাম এটা শেষ না, আমাদের অনেক কথাই বলা হয়নি, অনেক আলোচনাই করা হয়নি, আমাদের বিনিময় অসম্পুর্ণ রয়ে গেলো। এই সময়ের মানুষের নিয়মিত হিসেবের বাইরে কিছু কিছু ভুল মানুষ এখনও বেঁচে আছে যারা অর্থ আর প্রতিষ্ঠার চেয়ে মানুষের হৃদয়কে সত্যি ভেবে জীবনযাপন করে। ইহলৌকিক নিয়মে তাদের প্রতিষ্ঠার হিসেব মেলানো দুস্কর। তারা হৃদয়ের ঐশ্বর্যে ধনী, জাগতিক প্রতিষ্ঠার মোহ তাদের নেই। এমন ভুলভাল মানুষের কাছে গিয়ে নিজেরও সব কিছু ছেড়ে দিয়ে সাধারণ মানুষ হতে ইচ্ছা করে, এই সব অচল মানুষেরাই হয়তো সভ্যতা সচল করে রাখে আবেগে ভালোবাসায়। সেই ভালোবাসা ছুঁয়ে যায় সংশ্লিষ্ট সবাইকে। এমন এক পরিবেশে সময় কাটাতে ইচ্ছা করে যেখানে সবার জন্য একটা চাটাই পাতা আছে, থাকবেন? থাকেন না ভাই। একটা দিন থেকে যান।এই লোভনীয় আহবান রেখে ফিরে আসবার সময়টা স্তব্ধ হয়ে থাকি।
আমার হাতে দারুচিনির ডাল, আমি অল্প অল্প ভাঙি আর মুখে দেই। ভাবতে থাকি মানুষ কতটা অশালীন রকমের প্রতিষ্ঠাকামী লোভী বর্বর, শালারা গাছের ছাল খুলে, তাকে উলঙ্গ করে বাজারে বিক্রী করে গাছের পোশাক। সে পোশাক মানুষ পয়সা দিয়ে কিনে আর উলঙ্গ গাছ দাঁড়িয়ে থাকে সাজানো বাগানে। আর যার সাথে পরিচয় হলো, তাকে বলবার মতো কিছু নেই, আতিথেয়তার উত্তরে সামাজিক প্রত্যুত্তর না দিয়ে বরং তার জন্য এতটুকু বলা যায়। কোনো-কোনো স্পর্শ্ব অনাবিল আনন্দের অনুভুতি দেয়। কোনো-কোনো প্রথম পরিচয়ে অপরিচয়ের সংশয় থাকে না। বরং পরিচিত মানুষটাকে অনেক দিনের চেনা মনে হয়। এইসব মনে হওয়া সম্পর্কের কোনো নাম হয় না। আমিও সম্পর্ককে কোনো নাম দিতে পারিনি, সামাজিক পরিচয়ে ঠিক কি সম্বোধন উপযুক্ত হবে ভেবে পাইনি।
যতদুরেই যাই, কিছু কিছু মানুষ একেবারে হৃদয়ের কাছাকাছি থেকে যায়। অন্য রকম কষ্টবোধে গলা আটকে আসে, ভেতরে কান্না থাকে না, অনিবার্য বিচ্ছেদের বেদনা থাকে। মুখ ফুটে বলা যায় না আসি কিংবা যাই, সমস্ত পথ ফিরে ফিরে তাকাই, যতদুর দেখা যায়। আদর আর আপ্যায়নের ছাপ মেখে চলে আসতে ইচ্ছা করে না। এখানে এসে মনে হলো, আর কোথাও যাওয়ার নেই, এটাই নিশ্চিত নিরাপদ আশ্রয়। তবুও ডানা মেলে উড়ে যেতে হবে। আমাদের সবার গন্তব্য থাকে, কিংবা আপাত গন্তব্য কিংবা ঘরে ফিরে আসবার দায়। তবু মুছে ফেলা যায় না সেই ছাপ। ভালো থাকুক তারা সবাই, সাময়িক আঁধার কেটে আবার সূর্য্যের আলোতে উদ্ভাসিত হোক তাদের জীবন।"
২. কয়েদী, সমালোচনা:
"আত্মপরিচয় নিয়ে সংকট কাটে না কিংবা আত্মপরিচয়ের গ্লানি বহন করা দুঃসাধ্য বলেই নতুন পরিচয় নির্মাণের চেষ্টা করে মানুষ। এই পরিচয় আর ভাবমুর্তি সংকট এড়ানোর কোনো সামাজিক পন্থা নেই। আমরা মুখে গামছা বেঁধে বেশ্যা বাড়ী যাই, দুপুরে পাঞ্জাবী চাপিয়ে গায়ে আতরচর্চিত তুলো কানে গুঁজে যাই খোতবা শুনতে আর বিকালে রাস্তায় দাঁড়িয়ে শাড়ীর ফাঁক গলে উপচে পড়া যৌবন চাটি এবং আমাদের ভাবমুর্তি নির্মাণ করি। সংকটটা ভয়াবহ। নিজের সাথে নিজের দ্বৈরথ, অবশেষে সমাধান আসে, নিজের ভাবমুর্তি নির্মাণের পর ঢাক ঢোল বাজিয়ে সেই ভাবমুর্তি সবাইকে জানানোর কাজটাও নিজেকেই করতে হয়। আমি এলেবেলে কেউ না আমি সেই জন, সেই রকম একজন অতএব আমার কথা শ্রবণ করো তোমরা।
'আবুল হোসেন'নামের একজন কবি বিদ্যমান ছিলো বলেই আমরা আবুল হাসানকে পাই, জন্ম হয় শামসুর রাহমান, শফিক রেহমানের। একটা সিল মোহর লাগানো নামের বানানে কিংবা একটা বিশিষ্ঠতা নিয়ে আসা নামে। জীবনানন্দ দাশগুপ্ত নিজের গোপনীয়তা উন্মোচন করে গুপ্ত বিদ্যা ভুলে জীবনানন্দ দাশ হয়ে উঠার পন্থাটা এরকমই। হয়তো জীবিত মানুষদের ভেতরে বেশী পরিমাণ স্পর্শকাতর হওয়ায় আত্মপরিচয়ের সংকট শিল্পিদের বেশী আক্রান্ত করে, তাই মহনু শাহ, মুজিব ইরম, ব্রাত্য রাইসু বিভিন্ন রকম ভাব ও ভাঁজ ছড়িয়ে সামনে আসেন আমাদের।আমরা নিজেরাও ভাবমুর্তি নির্মাণ করি।
আহ্লাদ করে আমি প্রেমিকাকে বলতাম কুন্তলা, আমার লেখ্য সম্বোধনের আড়ালে কুন্তলার ভাবমূুর্তি নির্মাণে এত ব্যস্ত ছিলাম যখন অবশেষ অবসর আসলো, ক্লান্তি আসলো, চেনা প্রেমিকাকে তার রচিত ভাবমূর্তির সাথে মেলাতে পারলাম না কোনো ভাবেই।নিজের নামকে কেঁটে ছেটে বানানের হেরফেরে ইতর জনের সাথে স্পষ্ট পার্থক্য গড়ে তোলার প্রক্রিয়াটা মোটেও নিন্দনীয় নয়। কারো কারো আবার জুতসই নাম থাকে, খালেদ মইনুদ্দিন কিংবা মাহবুব কায়সার, এমন নামগুলোর ভেতরে একটা আলাদা ভারিক্কি আছে। কিংবা আধুনিক যুগে এটাই রীতি, 2 পর্বের নাম হতে হয়, আবুল কালাম মোহাম্মদমনজুর মোরশেদ নামটা খারাপ না তবে আধুনিক হয়ে উঠতে পারে নি- আধুনিক হতে হলে ম্যাজিক টাচ দিতে হয় নামে।
আহমাদ মোস্তফা কামালের নামাঙ্কন আমাকে আকৃষ্ট করতে পারেনি, এমনকি এখনও আলোচনার সময় ভুলে শামসুর রহমান বলে ফেলি রাহমানের বদলে। আমাদের চোখ চেনা পরিচয় খুঁজে পায় তাই শামসুর রাহমান যে আসলেই রাহমান এটা নিশ্চিত হই যখন গত বছর একজন জানালো তার নামের বানান আসলে রাহমান। একই কারনে আহমাদ শব্দটা চোখে পড়লে সবার শেষে, আমাদের জনাব গল্প লেখক যে মেদ ঝড়িয়ে উন্মাদের উন কামিয়ে ফেলে পুরো মাদ হয়ে আছেন এটা বুঝতে পারি নি।
আজ যে দুজনের কথা লিখবো তারা দুজনেই নামে অস্ত্রোপচার করেছেন। জনাব আলী মাহমেদ( যদিও নিশ্চিত না এটা মোহাম্মদের শিশ্ন ছেড়া রূপ না মাহমুদের শিশ্নের উত্থান) অন্য জন আহ ম্যাড মোস্তফা কামাল।
আলী মাহমেদের বই পড়া হয়েছে ব্লগের সুবাদে। তার বস্ত্র উম্মোচন পর্ব সমাপ্ত হয়েছে এই বইমেলায়। "কয়েদী" নামের বইটির ঘটনাগুলোও অনেকে পড়েছেন, তবে বইটি কেনো হরতাল বিষয়ক অঘটন সংকলন না হয়ে জাগৃতির ভাষ্যমতো "দেশের একমাত্র হরতাল বিরোধী উপন্যাস" হয়ে উঠলো সেই সমাধান খুঁজে পাই নি এখনও। তাই বিজ্ঞাপনের ভাষ্যমোতাবেক এটাকে হরতাল বিরোধী উপন্যাস হিসেবেই চিহ্নিত করা হবে।
ক্ষীণবপু "কয়েদী" উপন্যাস পড়তে সময় লাগলো 40 মিনিট, যারা আরও দ্রুত পঠনে অভ্যস্ত তাদের হয়তো সময় লাগবে 30 মিনিট।42 পাতার এই উপন্যাসে হরতাল বিষয়ক অঘটন জমা হয়েছে 5টা এবং এগুলো আপাতবিচ্ছিন্ন। বিভিন্ন হরতাল দিনের অলৌকিক মিলন বাদ দিলে অন্য কোনো মিলও খুঁজে পাওয়া যাবে না সাদা চোখে। এবং বিজ্ঞাপন দেখার পর খুঁজে দেখলাম ঘটনাগুলোর উপরে কোনো শিরোনাম নেই- অথর্্যাৎ এটা বিচ্ছিন্ন হরটাল বিষয়ক গল্প নয়।
হরতাল নামক অস্ত্রটা বহুল ব্যভারে ভোঁতা হয়ে গেছে সত্য তবে গনঅনাস্থা প্রকাশের জন্য এক চেয়ে বড় কোনো অস্ত্র নেই এখন পর্যন্ত রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে। শহুরে মধ্যবিত্তের কিয়দংশ ছাড়া আসলে এখন তেমন ভাবে হরতাল উদযাপণ করে না কেউই। হরতালের দিনও বাজার বসে, পণ্যের পসরা সাজানো হয়,গার্মেন্টস ফ্যাক্টারী ফুল প্রোডাকশনে যায়, ইপিজেডও বন্ধ থাকে না। এবং কৃষক শ্রমিক কামার কুমার সবাই দোকান খুলেই বসতে পারে, ক্ষেতে যেতে পারে। এর পরও জামিল আহমেদ নামের এক অতিশয় সংবেদনশীল গার্মেন্টস ব্যবসায়ীর অস্তিত্ব খুঁজে পাই উপন্যাসের পাতায়। এটা গল্প উপন্যাসেই সম্ভব। বাস্তবের পোশাক শিল্পের সাথে যুক্ত মানুষগোলো নুন্যতম মজুরি বাড়ালে না খেয়ে মাঠে মরতে হয়ে এবং দাবী দাওয়া নিয়ে দেন দরবার করে এবং সেখানে জামিল আহমেদের অনুপস্থিতি প্রকট ভাবেই ধরা পড়ে।
সেই সংবেদনশীল জামিল আহমেদ কোনো এক হরতালের দিন তার জাপানী ব্যবসায়ী পার্টনারকে আনতে যান এয়ারপোর্টে-সেবার টানা ১৫ দিন হরতাল ছিলো- এ সময়ই সুশীল সমাজীয় মতের দেখা পাই আমরা উপন্যাসে।
বাংলাদেশ সম্ভবনাময় দেশ, সেই সম্ভবনা নিহত হচ্ছে রাজনৈতিক অস্থিরতায়। হবে হয়তো, পেশাদার আমলাতান্ত্রিক দূর্নীতি আর লাল ফিতার দৈরাত্বে যখন বাংলাদেশর পরিচয় এখানে ব্যবসা শুরু করতে সবচেয়ে বেশী সময় লাগে, যখন কোনো রকম রাজনৈতিক অস্থিরতা ছাড়াই দেশের সাম্প্রতিক এডিপি প্রবৃদ্ধি কমে যায়- তখন সুশীল সমাজের এই মত ন্যাংটা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে অধোবদনে। কিংবা এখন রাজনৈতিক অস্থিরতা নেই এর পরও সাধারন মানুষ বাজার থেকে মুলধন সরিয়ে নিচ্ছে , এই সব অহেতুক কারণগুলোতে রাজনীতি বা হরতাল নেই। দেশে আইনের শাসন সুপ্রতিষ্ঠিত করার জন্য মইন উদ দৌলা দেশের আনাচে কানাচে ঘুরে আমাদের সহবত শিষ্ঠাচার আর ন্যায়নীতির পাঠ দিচ্ছেন,মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা ফখরুদ্দিন বাবুর্চির রন্ধনশালায় সুপক্ক উন্নয়ন সেদ্ধ হচ্ছে,দূর্নীতির ভেজালবিহীন বাংলাদেশ সিদ্ধ হচ্ছে, সিদ্ধ হচ্ছে হলি ডে মার্কেট। আর বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিষের দাম বাড়ছে। তেলের দাম, চালের দাম ডালের দাম, সবজীর দাম বাড়ছে এবং বাড়ছে, কোনো সিন্ডিকেট নেই এর পরও মুল্য ঝুলিয়ে দিলেও পাইকারী বাজারে আর খুচরা বাজারে কোথাও সেই দামে জিনিষ পাওয়া যাচ্ছে না।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্ভবনা রাজনৈতিক অস্থিরতা ছাড়াই খাবি খাচ্ছে যখন নোবেল মেডেল ঝুলিয়ে আসলেন ইউনুস। হরতাল না হলে অবশ্যই উন্নয়নের জোয়ারে আমরা ডুবে মারা যাবো।
সংবেদী জামিল সাহেব জাপানী ভাষায় আমার সোনার বাংলা পড়ে কাঁদতে কাঁদতে শেরাটন হোটেল ছাড়লে চিরতরে হারিয়ে যান এই উপন্যাসের পাতা থেকে। তার চিরবিলুপ্তির দুঃখ ঘুচিয়ে দিতে আসেন সাকিব সাহেব। রেলগাড়ী ঝমাঝম না করে দাঁড়িয়ে থাকে রেল লাইনে, ক্ল্যাস্টোফোবিয়ার জন্ম হয়, তিনি মানসিক অস্থিরতায় শেষ পর্যন্ত রাঁচি কিংবা পিজিতে আশ্রয় নিয়েছেন হয়তো।
এর পর দৃশ্যপটে লেখক দাঁড়ান বুক চিতিয়ে। বাংলাদেশের রাজনীতি আর রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের উপর শ্রদ্ধাবোধ নেই তেমন ভাবে। তাই কোনও নির্দেশনা না দিয়েই লেখক তথ্য-প্রমাণ হাজির করেন হরতাল আসলেই খারাপ। গার্মেন্টস, চিংরী, ট্রাক ভর্তি পন্য সবই আটকে আছে, সীমান্ত অতিক্রম করতে পারছে না, তাই হরতাল খারাপ।
এসব পড়ে মনে হয়, সংবাদ পত্রের পাতায় বাংলাদেশ দেখুন শীর্ষক রচনা প্রতিযোগীতা চলছে। ব্যবসায়ী মহলের কথা আসা, এদের সাথে আসে অর্থনীতি এবং উন্নয়নের প্রলাপ। তবে সংবাদ পত্রে বাংলাদেশ দেখার ভেতরের ভিত্তিহীন আবেগটা ন্যাংটা পাগল হয়ে রাস্তায় ঘুরে। মানুষের সংবেদন জাগানো বা মানুষের চিত্তকে হরতালের প্রতি বিষিয়ে তোলার ক্ষমতা নেই বইটার ভেতরে।
হরতাল বিরোধী এই উপন্যাসে আবেগ সংবেদনশীলতা,মমত্ববোধ, অক্ষমতার আক্ষেপ , সব রকম ট্রাজিক উপাদান ঢুকিয়ে দেওয়ার পরও কোনো এক অজানা কারণে এটা উপন্যাসে উত্তির্ণ হতে পারে না।
ব্যর্থতার কারণ অনুসন্ধান করলে বোধ হয় পারস্পর্যহীনতাকে প্রধান খল হিসেবে চিহ্নিত করা যাবে। গঠন শৈলীতে সমসয়া, সমস্যা ঘটনা নির্মাণে। বিষয়টা অদক্ষ হাতের মোজাইক হয়ে যায় হরতাল দিনের ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন অংশ জুড়ে সামগ্রীক কোলাজ হয়ে উঠে না।
হরতাল আধিক্য অন্য একটা কারণ হতে পারে- কিংবা হরতালজনিত বিপত্তি সংকলন না হয়ে দক্ষ রূপায়নে হরটালের ঘটনাগুলোকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ব্যবহার করা যেতো। মূল উপজীব্য হরতালই হতো তবে চরিত্রগুলোকে আরও ছড়িয়ে দিলে ভালো হতো।
যদি আমি লিখতাম একই ঘটনাগুলো নিয়ে তবে জামিল আহমেদ চরিত্রটাকে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত নিয়ে যেটাম, সেখান থেকে কোনো এক সিগন্যালে জামিল আহমেদের সাথে সাক্ষাৎ করিয়ে দিতাম শহীদ সাহেবকে। সেই রেল লাইন ধরে যেটাম সাকিবের কাছে- সাকিবকে ছুঁয়ে আসতাম লেখকের কাছে- একই মাল মশলা ব্যবহার করে বিভিন্ন বিন্যাসে সাজিয়ে হরতালের বিভীষিকা তুলে ধরার চেষ্টা করতাম।
এখানে এক খাবলা রং ওখানে এক খাবলা এমন না করে বিভিন্ন রং এর প্রলেপ দিতাম যত্ন নিয়ে। নির্মাণ সব সময় পিরামিড হওয়া ভালো, বিশাল ভিত্তি নিয়ে শুরু হবে, ধীরে ধীরে সেটা চুড়ান্ত শীর্ষে আরোহন করবে।"
Thursday, 19 August 2010
Wednesday, 18 August 2010
:)
যোগ বিয়োগ শেখা হয়েছে, হয়নি যোগ বিয়োগ ব্যায়াম শেখা। এই সুযোগটাও এসে গেল! কিন্তু যোগ বিয়োগ শেখার যন্ত্রটার নমুনা দেখে ভরসা পাচ্ছি না। এটায় একবার ঢুকলে ফেরত আসব তো!
Tuesday, 17 August 2010
ভাল লাগা- মন্দ লাগা
সালটা ২০০৭। তখন আমি 'শুভ' নিকে একটা ওয়েবসাইটে চুটিয়ে লেখালেখির নামে ব্লগিং করি। ওখানে আমি এমন একটা প্রোফাইল রেখেছিলাম, আমার সম্বন্ধে কেউ অনুমান করতে পারতেন না। আমি চাচ্ছিলামই এটা, যেন যে কেউ আমার সঙ্গে তার ভাবনা ভাগাভাগি করতে পারেন, মন্তব্য করতে গিয়ে অন্যদের মধ্যে আড়ষ্টতা চলে আসুক এটা আমি চাচ্ছিলাম না।
অনেকে তুই-তুই করেও সম্বোধন করতেন, কেউ-কেউ কেমন করে লেখালেখি করা যায় এই নিয়ে বিস্তর উপদেশও দিতেন। আমি উপভোগ করতাম।
সেবার বইমেলায় কয়েকজনের সঙ্গে সেই প্রথম দেখা হয়েছিল, শামুকের খোলস থেকে সেবারই প্রথম বের হওয়া। হাত-পা নাড়িয়ে খুব কথা বলছিলাম সম্ভবত; কোন ফাঁকে সাকিব আল মাহমুদ আমার ছবি তুলেছিলেন খেয়ালও করিনি। ছবিগুলো তিনি আমার অনুমতি না-নিয়েই পোস্টও করে দিয়েছিলেন।
কাজটা তিনি করেছিলেন মমতায় মাখামাখি হয়ে কিন্তু তখন খানিকটা বিরক্তও হয়েছিলাম, কারণ ছবি পোস্ট করার সূত্রে অনেকে জেনে গেলেন, শুভ বাচ্চা একটা ছেলে না। এরপর থেকে অনেকে আমার লেখায় সতর্কতার সঙ্গে মন্তব্য করতেন, এদের মাঝে অনেকখানি আড়ষ্টতা চলে এসেছিল। আমার উদ্দেশ্য পন্ড হয়েছিল।
সাকিবের পোস্ট: http://www.somewhereinblog.net/blog/sakib/28697700
অনেকে তুই-তুই করেও সম্বোধন করতেন, কেউ-কেউ কেমন করে লেখালেখি করা যায় এই নিয়ে বিস্তর উপদেশও দিতেন। আমি উপভোগ করতাম।
সেবার বইমেলায় কয়েকজনের সঙ্গে সেই প্রথম দেখা হয়েছিল, শামুকের খোলস থেকে সেবারই প্রথম বের হওয়া। হাত-পা নাড়িয়ে খুব কথা বলছিলাম সম্ভবত; কোন ফাঁকে সাকিব আল মাহমুদ আমার ছবি তুলেছিলেন খেয়ালও করিনি। ছবিগুলো তিনি আমার অনুমতি না-নিয়েই পোস্টও করে দিয়েছিলেন।
কাজটা তিনি করেছিলেন মমতায় মাখামাখি হয়ে কিন্তু তখন খানিকটা বিরক্তও হয়েছিলাম, কারণ ছবি পোস্ট করার সূত্রে অনেকে জেনে গেলেন, শুভ বাচ্চা একটা ছেলে না। এরপর থেকে অনেকে আমার লেখায় সতর্কতার সঙ্গে মন্তব্য করতেন, এদের মাঝে অনেকখানি আড়ষ্টতা চলে এসেছিল। আমার উদ্দেশ্য পন্ড হয়েছিল।
সাকিবের পোস্ট: http://www.somewhereinblog.net/blog/sakib/28697700
Monday, 16 August 2010
গুরু, তোমায় সালাম
গভীর চিন্তায় আছি। আমার নামের সঙ্গে 'সদ্য জার্মানি ফেরত' এটা জুড়ে দেব কি না? ওয়াল্লা, এটা যে একটা টাইটেল এটা তো জানতুমই না!
অবশ্য এই নিয়ে খানিকটা ধন্ধেও আছি, সদ্য বলতে ঠিক কতটা সময় বোঝায়? হপ্তা, মাস? কতটা সময় পর্যন্ত এই টাইটেলটা ব্যবহার করা যায়? (হ্যায় কোই মায় কা লাল?)
বটে রে, এই সমাধানটা কবি-উপন্যাসিক-গদ্যকার্টুনিস্ট-কলামলেখক-সাংবাদিক-প্রকৌশলী ও সদ্য আমেরিকা ফেরত আনিসুল হক ব্যতীত আর কে দিতে পরবে...?
অবশ্য এই নিয়ে খানিকটা ধন্ধেও আছি, সদ্য বলতে ঠিক কতটা সময় বোঝায়? হপ্তা, মাস? কতটা সময় পর্যন্ত এই টাইটেলটা ব্যবহার করা যায়? (হ্যায় কোই মায় কা লাল?)
বটে রে, এই সমাধানটা কবি-উপন্যাসিক-গদ্যকার্টুনিস্ট-কলামলেখক-সাংবাদিক-প্রকৌশলী ও সদ্য আমেরিকা ফেরত আনিসুল হক ব্যতীত আর কে দিতে পরবে...?
Sunday, 15 August 2010
ডান-বাম
মাহবুব সুমন আমার এখানে এসেছিলেন সম্ভবত ২০০৮-এ। আমি খানিকটা ভয়ে ভয়ে ছিলাম কারণ সঙ্গে তিনি একজন দাঁতের ডাক্তার নিয়ে এসেছিলেন। এমন একজন যুদ্ধংদেহি মানুষ, সঙ্গে আবার দাঁতের ডাক্তার; একেক করে আমার দাঁতগুলো উপড়ে ফেললে আটকাত কে?
মানুষটা আমার সঙ্গে ছবি না উঠিয়ে উঠালেন গিয়ে এর সঙ্গে (যে তার প্যান্ট সামলাতে জানে না, খুলে পড়ে যাচ্ছে)! ছ্যা, কই এ আর কই আমি!
এখন ওয়েবে ছবি দেয়ার হ্যাপাও কম না। ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও দাউদ হায়দারের ছবি দিতে পারিনি। কীসব জটিলতা!
মাহবুব সুমনের অনুমতি ব্যতীত ছবিটা ছাপিয়ে দিলাম তবে তাঁর ওয়েব নিরাপত্তার কারণে ডান পাশেরটা, না বাম পাশেরটা মাহবুব সুমন এই বিষয়ে বিস্তারিত বলা থেকে বিরত রইলাম।
বিঃ দ্র: আমাকে শত লোভ দেখিয়েও লাভ নাই এই তথ্যটা আমি ফাঁস করব না। আর যাই হোক নীতি বিসর্জন দিতে পারব না।
* মানুষগুলো খাবার আর টয়লেট নিয়ে কেন যে ধস্তাধস্তি করে, কে জানে! : http://www.somewhereinblog.net/blog/sumonmahbubsblog/28834380
মানুষটা আমার সঙ্গে ছবি না উঠিয়ে উঠালেন গিয়ে এর সঙ্গে (যে তার প্যান্ট সামলাতে জানে না, খুলে পড়ে যাচ্ছে)! ছ্যা, কই এ আর কই আমি!
এখন ওয়েবে ছবি দেয়ার হ্যাপাও কম না। ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও দাউদ হায়দারের ছবি দিতে পারিনি। কীসব জটিলতা!
মাহবুব সুমনের অনুমতি ব্যতীত ছবিটা ছাপিয়ে দিলাম তবে তাঁর ওয়েব নিরাপত্তার কারণে ডান পাশেরটা, না বাম পাশেরটা মাহবুব সুমন এই বিষয়ে বিস্তারিত বলা থেকে বিরত রইলাম।
বিঃ দ্র: আমাকে শত লোভ দেখিয়েও লাভ নাই এই তথ্যটা আমি ফাঁস করব না। আর যাই হোক নীতি বিসর্জন দিতে পারব না।
* মানুষগুলো খাবার আর টয়লেট নিয়ে কেন যে ধস্তাধস্তি করে, কে জানে! : http://www.somewhereinblog.net/blog/sumonmahbubsblog/28834380
Saturday, 14 August 2010
অবিচার
আমাদের সময়ে, ঈদে নিয়ম করে স্টুডিওতে গিয়ে ছবি উঠানো ভারী আনন্দময় এক ঘটনা ছিল। ...ব্যতীত এই আনন্দ কোথায়?
কিন্তু সেবার আমার আনন্দ মাটি হয়ে গিয়েছিল কারণ এরা আমাকে রেডিওতে হাত রাখতে দেয়নি। এটা কোন দেশের বিচার, এরা দু-জন রেডিওতে হাত রেখে পোজ দেবে, আমি দিতে পারব না? হোয়াই?
কিন্তু সেবার আমার আনন্দ মাটি হয়ে গিয়েছিল কারণ এরা আমাকে রেডিওতে হাত রাখতে দেয়নি। এটা কোন দেশের বিচার, এরা দু-জন রেডিওতে হাত রেখে পোজ দেবে, আমি দিতে পারব না? হোয়াই?
Friday, 13 August 2010
ভাঁড়
একজন লেখক যখন ভাঁড়ের পর্যায়ে নেমে আসেন তখন ধরে নিতে হয়, দেশটা ভাঁড়ামির কারখানা হয়ে যাচ্ছে।
মানুষটার নির্লজ্জতার শেষ নেই। চুল কুচকুচে কালো করে, ফুলে ফুলে সয়লাব মার্কা শার্ট গায়ে দিয়ে গানের অনুষ্ঠানে হাঁটুর সমান বউকে পাশে বসিয়ে জ্ঞান-অজ্ঞান কথা বলা সম্ভবত হুমায়ূন আহমেদের পক্ষেই সম্ভব।
মানুষটার নির্লজ্জতার শেষ নেই। চুল কুচকুচে কালো করে, ফুলে ফুলে সয়লাব মার্কা শার্ট গায়ে দিয়ে গানের অনুষ্ঠানে হাঁটুর সমান বউকে পাশে বসিয়ে জ্ঞান-অজ্ঞান কথা বলা সম্ভবত হুমায়ূন আহমেদের পক্ষেই সম্ভব।
Thursday, 12 August 2010
ছবির সঙ্গে ফাও নাম
এই ছবি উঠিয়ে কি নীচে নাম লিখে দেয়া হয়? আল্লা মালুম, কোত্থেকে এরা এই পর্দাপ্রথা আমদানি করেছে! ধর্ম অনুসারেও এটা অযৌক্তিক।
Tuesday, 10 August 2010
মুনমুনি-ভুনভুনি-ঝুনঝুনি, আমি সরি মামনি
এই দেশের দু-জন দুধর্র্ষ মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে বাচ্চাদের একটা আঁকাআঁকির অনুষ্ঠান করা হয়েছিল [১]। এই অনুষ্ঠানের মূল দায়িত্বে আমি ছিলাম।
আমাকে যখন বলা হয়েছিল, বাচ্চাদের আঁকাআঁকির বিচারক হওয়ার জন্য । আমি সাফ না করে দিয়েছিলাম কারণ আমার দু-বাচ্চা এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহন করেছিল। এরা এখানে না-আসলে সত্যি সত্যি আমি খুশি হতাম। কিন্তু এতে আমার ইচ্ছা-অনিচ্ছা কোন সুযোগ ছিল না। এমন না এরা খুব ভাল আঁকে কিন্তু এদের স্কুলের প্রয়োজনেই স্কুল কর্তৃপক্ষ এদের এখানে এনেছিল।
বাচ্চাদেরকে এখানে আসার আগেই আমি বলে দিয়েছিলাম, খবরদার, ওখানে কিন্তু আমাকে বাবা বলে ডাকবে না। ডাকলেও লাভ নেই আমি কিন্তু তোমাদের চিনব না। এটা কেবল ফান করে বলা হয়েছিল এমন না, কঠিন করেই বলা হয়েছিল। বাচ্চাগুলো বিশেষ করে মেয়েটা খুব মন খারাপ করেছিল। মনে মনে নিশ্চয়ই বলছিল, বাবাটা এমন নিষ্ঠুর কেন? আমি যে ঠিক করে রেখেছিলাম, আমার অমুক অমুক বান্ধবীকে বাবাকে দেখিয়ে দেখিয়ে কত কিছুই না বলব। আমি সরি, বেটি। এটা তুমি এখন বুঝবে না কেন আমি এই নিষ্ঠুর আচরণ করেছিলাম।
আসলে আমি চাচ্ছিলাম না কোন প্রকারেই আমার বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ উঠুক। কোন বাচ্চাকে যেন নাম দিয়ে চেনা না যায় এই কারণে নাম্বার পদ্ধতি এখানে প্রয়োগ করা হয়েছিল।
কাউকে বলা হয়নি তবুও মিডিয়ার কিছু লোকজন এখানে উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের আগ্রহের শেষ ছিল না কারা আমার বাচ্চা? শেষঅবধি এরা খুঁজে বের করতে পারেননি। হা হা হা।
১. মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে আঁকাআঁকির অনুষ্ঠান: http://www.ali-mahmed.com/2010/06/blog-post_4596.html
আমাকে যখন বলা হয়েছিল, বাচ্চাদের আঁকাআঁকির বিচারক হওয়ার জন্য । আমি সাফ না করে দিয়েছিলাম কারণ আমার দু-বাচ্চা এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহন করেছিল। এরা এখানে না-আসলে সত্যি সত্যি আমি খুশি হতাম। কিন্তু এতে আমার ইচ্ছা-অনিচ্ছা কোন সুযোগ ছিল না। এমন না এরা খুব ভাল আঁকে কিন্তু এদের স্কুলের প্রয়োজনেই স্কুল কর্তৃপক্ষ এদের এখানে এনেছিল।
বাচ্চাদেরকে এখানে আসার আগেই আমি বলে দিয়েছিলাম, খবরদার, ওখানে কিন্তু আমাকে বাবা বলে ডাকবে না। ডাকলেও লাভ নেই আমি কিন্তু তোমাদের চিনব না। এটা কেবল ফান করে বলা হয়েছিল এমন না, কঠিন করেই বলা হয়েছিল। বাচ্চাগুলো বিশেষ করে মেয়েটা খুব মন খারাপ করেছিল। মনে মনে নিশ্চয়ই বলছিল, বাবাটা এমন নিষ্ঠুর কেন? আমি যে ঠিক করে রেখেছিলাম, আমার অমুক অমুক বান্ধবীকে বাবাকে দেখিয়ে দেখিয়ে কত কিছুই না বলব। আমি সরি, বেটি। এটা তুমি এখন বুঝবে না কেন আমি এই নিষ্ঠুর আচরণ করেছিলাম।
আসলে আমি চাচ্ছিলাম না কোন প্রকারেই আমার বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ উঠুক। কোন বাচ্চাকে যেন নাম দিয়ে চেনা না যায় এই কারণে নাম্বার পদ্ধতি এখানে প্রয়োগ করা হয়েছিল।
কাউকে বলা হয়নি তবুও মিডিয়ার কিছু লোকজন এখানে উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের আগ্রহের শেষ ছিল না কারা আমার বাচ্চা? শেষঅবধি এরা খুঁজে বের করতে পারেননি। হা হা হা।
১. মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে আঁকাআঁকির অনুষ্ঠান: http://www.ali-mahmed.com/2010/06/blog-post_4596.html
Friday, 6 August 2010
নির্দয়
জার্মানিতে আমি যাদের বাসায় ছিলাম তাঁদের ওখানে কে ছবিটা উঠিয়েছিল আমার মনে নাই কিন্তু কোন কুক্ষণে এই ছবিটা একজনকে দেখাতে গেলাম। মানুষটা নির্দয়ের মত বললেন, দুইজনের মধ্যে তো কোন পার্থক্য দেখছি না।
আমি তর্ক করতে ছাড়ি না। অন্তত একটা অমিল তো আছে। ওর তো একটা চোখ নাই, বাম দিকেরটা।
যথারীতি কথাটা মাটিতে পড়ার যো নাই। উত্তর এসে হাজির, তোমারও বাম দিকের চোখ আছে এমনটা নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না।
শোনো কথা, আমার বাম দিকের চোখ আছে কি নাই এটা কি আমি জানি না!
Thursday, 5 August 2010
পুত্রধনের আঁকাআঁকি
পুত্রধন (এখন বয়স আট) ব্লগ থেকে দূরে [১] সরে যাওয়ায় আমার খানিকটা ক্লেশ ছিল। আমি জার্মানি যাওয়ার জন্য যেদিন ঢাকা রওয়ানা হলাম সেদিন ও ফোন করল, বাবা পত্রিকায় আমার লেখা ছাপা হয়েছে, কিনে দেখবা কিন্তু।
বাচ্চাদের বিভাগে ওর লেখাটা ছাপা হয়েছিল। ও কখন লেখা পাঠিয়েছিল আমি জানতামও না। এই পত্রিকা নিয়ে আমার এলার্জি আছে। নীতিগত কারণে এই পত্রিকার মালিক, সম্পাদককে আমি পছন্দ করি না। কিন্তু এই বিষয়ে ওকে কিছু বলিনি কারণ আমি চাইনি এখনই ও এই সব অন্ধকার দিক নিয়ে বিভ্রান্ত হোক। সময়ে এ নিজেই সিদ্ধান্ত নেবে।
শিশির আমার অসম্ভব পছন্দের, কী অসাধারণ তাঁর স্কেচের হাত। তাঁর স্কেচগুলো নিয়ে একটা বই আছে। এখান থেকে তাঁর আদলে মাঝে-মাঝে স্কেচ করার চেষ্টা করতাম।
পুত্রধন স্কুলে টুকটাক আঁকাআঁকি করত, কিছু প্রাইজ-টাইজও পেয়েছিল। কিন্তু এখান থেকে কিছু স্কেচ করে ও আমাকে চমকে দিল। আমার সন্তান বলে না, এ গাছে ঝুলাঝুলি না করে স্কেচ নিয়ে ঝুলাঝুলি করলে ভাল করবে।
এখন ভাবছি আমি নিজেই স্কেচ করা ছেড়ে দেব।
সহায়ক লিংক:
১. লেখার অপমৃত্যু: http://chobiblog.blogspot.com/2010/08/blog-post.html
বাচ্চাদের বিভাগে ওর লেখাটা ছাপা হয়েছিল। ও কখন লেখা পাঠিয়েছিল আমি জানতামও না। এই পত্রিকা নিয়ে আমার এলার্জি আছে। নীতিগত কারণে এই পত্রিকার মালিক, সম্পাদককে আমি পছন্দ করি না। কিন্তু এই বিষয়ে ওকে কিছু বলিনি কারণ আমি চাইনি এখনই ও এই সব অন্ধকার দিক নিয়ে বিভ্রান্ত হোক। সময়ে এ নিজেই সিদ্ধান্ত নেবে।
শিশির আমার অসম্ভব পছন্দের, কী অসাধারণ তাঁর স্কেচের হাত। তাঁর স্কেচগুলো নিয়ে একটা বই আছে। এখান থেকে তাঁর আদলে মাঝে-মাঝে স্কেচ করার চেষ্টা করতাম।
পুত্রধন স্কুলে টুকটাক আঁকাআঁকি করত, কিছু প্রাইজ-টাইজও পেয়েছিল। কিন্তু এখান থেকে কিছু স্কেচ করে ও আমাকে চমকে দিল। আমার সন্তান বলে না, এ গাছে ঝুলাঝুলি না করে স্কেচ নিয়ে ঝুলাঝুলি করলে ভাল করবে।
এখন ভাবছি আমি নিজেই স্কেচ করা ছেড়ে দেব।
সহায়ক লিংক:
১. লেখার অপমৃত্যু: http://chobiblog.blogspot.com/2010/08/blog-post.html
Tuesday, 3 August 2010
প্রিয় শিক্ষক
সুবুৎ বণিক। আমার প্রিয় শিক্ষক। তিনি আমার হাইস্কুলের শিক্ষক ছিলেন। পড়ায় আমার মন ছিল না, সবাই যখন স্কুলে যায় আমি তখন স্কুলের নাম করে গোয়াল ঘরে বসে বসে বই পড়ি :) [১]। তখনকার ভাষায় আউট বই। তবুও বিচিত্র কারণে তিনি আমাকে অসম্ভব স্নেহ করতেন।
কখনও কখনও তাঁকে রাগাতে চেষ্টা করতাম কিন্তু রাগ করতেন না। তিনি ছিলেন বিজ্ঞানের শিক্ষক। তাঁর শেখাবার ভঙ্গি ছিল অপূর্ব! একবার কি যেন একটা দোলক সম্বন্ধে বলছিলেন। হাতির মাথা যদি একটা সুতায় বেঁধে ঝুলিয়ে দেয়া হয় ইত্যাদি।
আমি নিরীহ মুখ করে বলেছিলাম, স্যার, আস্ত হাতিটা সুতায় বাঁধলে হবে না?
স্যার বলেছিলেন, হাতি লাগব না। আয়, তোকে বেঁধে দেখাই।
স্যারের সঙ্গে অনেক দিন পর দেখা হয়েছিল। মানুষটা কেমন বুড়িয়ে গেছেন। তখন আমার বড়ো দুঃসময়। অনেকেই আমার হাত ছেড়ে দিয়েছেন। স্যার সেই আগের স্নেহভরা গলায় বলেন, তুমি অহন কিতা করো?
আমি বলি।
নিমিষেই তাঁর চোখ জলে ভরে যায়। শীর্ণ হাত আমার মাথায় রেখে আর্দ্র গলায় বলেছিলেন, চিন্তা কইরো না, সব ঠিক হয়া যাইব। আমি চোখ বন্ধ করে ফেলি। মাঝে মাঝে অসহ্য ভালবাসা সহ্য হয় না।
সহায়ক লিংক:
১. অপকিচ্ছা: http://www.ali-mahmed.com/2009/09/blog-post_02.html
কখনও কখনও তাঁকে রাগাতে চেষ্টা করতাম কিন্তু রাগ করতেন না। তিনি ছিলেন বিজ্ঞানের শিক্ষক। তাঁর শেখাবার ভঙ্গি ছিল অপূর্ব! একবার কি যেন একটা দোলক সম্বন্ধে বলছিলেন। হাতির মাথা যদি একটা সুতায় বেঁধে ঝুলিয়ে দেয়া হয় ইত্যাদি।
আমি নিরীহ মুখ করে বলেছিলাম, স্যার, আস্ত হাতিটা সুতায় বাঁধলে হবে না?
স্যার বলেছিলেন, হাতি লাগব না। আয়, তোকে বেঁধে দেখাই।
স্যারের সঙ্গে অনেক দিন পর দেখা হয়েছিল। মানুষটা কেমন বুড়িয়ে গেছেন। তখন আমার বড়ো দুঃসময়। অনেকেই আমার হাত ছেড়ে দিয়েছেন। স্যার সেই আগের স্নেহভরা গলায় বলেন, তুমি অহন কিতা করো?
আমি বলি।
নিমিষেই তাঁর চোখ জলে ভরে যায়। শীর্ণ হাত আমার মাথায় রেখে আর্দ্র গলায় বলেছিলেন, চিন্তা কইরো না, সব ঠিক হয়া যাইব। আমি চোখ বন্ধ করে ফেলি। মাঝে মাঝে অসহ্য ভালবাসা সহ্য হয় না।
সহায়ক লিংক:
১. অপকিচ্ছা: http://www.ali-mahmed.com/2009/09/blog-post_02.html
Monday, 2 August 2010
লেখার অপমৃত্যু!
এই বান্দর লেখা ছেড়ে এখন গাছে গাছে ঝুলে বেড়ায়!
আমার পুত্রধন যখন ব্লগিং শুরু করল তখন ওর বয়স ছয়। আমি ওকে ঈর্ষা করতাম কারণ ব্লগিং দূরের কথা আমি কম্পিউটার হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেখেছিলাম সাতাশ বছর বয়সে, তাও ৩৮৬ একটা মেশিন। তখন এয়ারপোর্টে কেবল ট্যাক্সই দিতে হয়েছিল ১৮ হাজার টাকা!
তো, ও যে সাইটে ব্লগিং করত ওখানে প্রথম পাতার এক্সেস দিচ্ছিল না অথচ ওখানে ওর প্রায় দেড় বছর হয়ে গিয়েছিল। দিনে দিনে ওর উৎসাহ কমে আসছিল। পারতপক্ষে আমি নিজের কারও জন্য সুপারিশ করতে আরাম পাই না কিন্তু কাজটা আমার কাছে একটা ফাজলামি মনে হচ্ছিল। একটা ছয় বছরের বাচ্চাকে মডারেটরদের ভয় পাওয়া কী আছে? এই নিয়ে কঠিন একটা লেখাও লিখেছিলাম [১]।
ছয় বছরের একটা বাচ্চা তো আর মায়াকোভস্কিকে নিয়ে পোস্ট দেবে না। ওর পোস্ট হতো খুবই সাধারণ। একটা পোস্ট দিয়েছিল এমন:
ওর সাইটে একজন মন্তব্য করেছিলেন, বেশি সহজ হয়ে গেছে
অথচ আমি নিশ্চিত এই ভদ্রলোক সবগুলোর উত্তর চট করে পারবেন না। পারলেও একটা ছ-সাত বছরের বাচ্চার পোস্টে এমন নির্দয় মন্তব্য করার কোন অর্থ হয় না। আবার একজন প্রথমেই ঘটা করে মাইনাসও দিলেন, একটা বাচ্চাকে মাইনাস দিয়ে এই 'বীরপুংগব' কি প্রমাণ করতে চাইলেন, কে জানে! সব মিলিয়ে বেচারার লেখার আগ্রহটাই চলে গেল। কে জানে, হয়তো একজন লেখকের অপমৃত্যু হলো!
সহায়ক লিংক:
১. একজন তদ্বিরকারী এবং একচোখা মডারেটর: http://www.ali-mahmed.com/2009/11/blog-post_15.html
আমার পুত্রধন যখন ব্লগিং শুরু করল তখন ওর বয়স ছয়। আমি ওকে ঈর্ষা করতাম কারণ ব্লগিং দূরের কথা আমি কম্পিউটার হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেখেছিলাম সাতাশ বছর বয়সে, তাও ৩৮৬ একটা মেশিন। তখন এয়ারপোর্টে কেবল ট্যাক্সই দিতে হয়েছিল ১৮ হাজার টাকা!
তো, ও যে সাইটে ব্লগিং করত ওখানে প্রথম পাতার এক্সেস দিচ্ছিল না অথচ ওখানে ওর প্রায় দেড় বছর হয়ে গিয়েছিল। দিনে দিনে ওর উৎসাহ কমে আসছিল। পারতপক্ষে আমি নিজের কারও জন্য সুপারিশ করতে আরাম পাই না কিন্তু কাজটা আমার কাছে একটা ফাজলামি মনে হচ্ছিল। একটা ছয় বছরের বাচ্চাকে মডারেটরদের ভয় পাওয়া কী আছে? এই নিয়ে কঠিন একটা লেখাও লিখেছিলাম [১]।
ছয় বছরের একটা বাচ্চা তো আর মায়াকোভস্কিকে নিয়ে পোস্ট দেবে না। ওর পোস্ট হতো খুবই সাধারণ। একটা পোস্ট দিয়েছিল এমন:
সহজ কু্ইজ
১ কোন ব্যাংকে টাকা নাই?
২ কোন কিল,কিল না?
৩ কোন মড়া,মড়া না?
৪ কোন বিল, বিল না?
৫ কোন পানি ,পানি না?
৬ কোন পান ,পান না?
৭ কোন গান ,গান না?
৮ কোন জামা,জামা না?
৯ কোন মা,মা না?
১০ কোন দেশে মাটি নাই?
১১ কোন জল,জল না?
২ কোন কিল,কিল না?
৩ কোন মড়া,মড়া না?
৪ কোন বিল, বিল না?
৫ কোন পানি ,পানি না?
৬ কোন পান ,পান না?
৭ কোন গান ,গান না?
৮ কোন জামা,জামা না?
৯ কোন মা,মা না?
১০ কোন দেশে মাটি নাই?
১১ কোন জল,জল না?
ওর সাইটে একজন মন্তব্য করেছিলেন, বেশি সহজ হয়ে গেছে
অথচ আমি নিশ্চিত এই ভদ্রলোক সবগুলোর উত্তর চট করে পারবেন না। পারলেও একটা ছ-সাত বছরের বাচ্চার পোস্টে এমন নির্দয় মন্তব্য করার কোন অর্থ হয় না। আবার একজন প্রথমেই ঘটা করে মাইনাসও দিলেন, একটা বাচ্চাকে মাইনাস দিয়ে এই 'বীরপুংগব' কি প্রমাণ করতে চাইলেন, কে জানে! সব মিলিয়ে বেচারার লেখার আগ্রহটাই চলে গেল। কে জানে, হয়তো একজন লেখকের অপমৃত্যু হলো!
সহায়ক লিংক:
১. একজন তদ্বিরকারী এবং একচোখা মডারেটর: http://www.ali-mahmed.com/2009/11/blog-post_15.html
Saturday, 31 July 2010
সুখ-স্মৃতি: ২০০৯
২০০৯ সালটা (১) আমার জন্য ভয়াবহ একটা বছর ছিল, একের পর এক বিপর্যয়। মাটিতে পড়ে থাকা একজন মানুষ। পরিচিত অধিকাংশ মানুষই আমার হাত ছেড়ে দিলেন। কিন্তু কেউ কেউ শক্ত করে আমার হাতটা ধরে রাখলেন- এদের হাতে কী জোর! এই অল্প কিছু মানুষই সম্ভবত আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন।
এদেরও একজন আমার বন্ধু ফাহমি, মানুষটা খানিকটা পাগলা টাইপের। সেই সময়টার কথা যখন আমি কোথাও বের হই না কেবল হাবিজাবি লেখা লিখি।
একদিন এ যেখানে থাকে, কসবায়; আমাকে, আমার পরিবারকে এক প্রকার হাইজ্যাক করে ওখানে নিয়ে গেল। অনেকটা সময় পর নিজেকে খানিকটা ফিরে পেয়েছিলাম। কত বছর হয়ে গেল পুকুরে সাতার কাটি না, পুকুরে নেমে ফিরে পেয়েছিলাম আমার হারানো শৈশব-কিশোরবেলা।
কসবা স্টেশনটা ছোট্ট কিন্তু আমার বড়ো পছন্দের। পেছনেই ভারত কিন্তু যেটা আমায় টানে, এই স্টেশনটায় পা ছড়িয়ে বসা যায়। কোন হকার, ভিক্ষুক নেই। এখানের মানুষের কৌতুহলও কম যে অহেতুক বিরক্ত করবে।
কিশোরবেলায় আমরা পাগলের মত রেললাইন ধরে হাঁটতাম। এই প্রজন্মের সেইসব স্মৃতি কই! আমার মেয়েকে বলি, হাঁটবে মা? এখনকার বাচ্চারা আমাদেরকে ছাড়িয়ে যায়। তার উত্তর, গাড়ি আসবে না, বাবা? আমি বলি, আসবে, তবে সাথে বাবা থাকলে হাঁটা যায়।
* ১. সালতামামি, ২০০৯: http://www.ali-mahmed.com/2009/12/blog-post_31.html
এদেরও একজন আমার বন্ধু ফাহমি, মানুষটা খানিকটা পাগলা টাইপের। সেই সময়টার কথা যখন আমি কোথাও বের হই না কেবল হাবিজাবি লেখা লিখি।
একদিন এ যেখানে থাকে, কসবায়; আমাকে, আমার পরিবারকে এক প্রকার হাইজ্যাক করে ওখানে নিয়ে গেল। অনেকটা সময় পর নিজেকে খানিকটা ফিরে পেয়েছিলাম। কত বছর হয়ে গেল পুকুরে সাতার কাটি না, পুকুরে নেমে ফিরে পেয়েছিলাম আমার হারানো শৈশব-কিশোরবেলা।
কসবা স্টেশনটা ছোট্ট কিন্তু আমার বড়ো পছন্দের। পেছনেই ভারত কিন্তু যেটা আমায় টানে, এই স্টেশনটায় পা ছড়িয়ে বসা যায়। কোন হকার, ভিক্ষুক নেই। এখানের মানুষের কৌতুহলও কম যে অহেতুক বিরক্ত করবে।
আমার পুত্রধন এবং তার মাতাজি।
* ১. সালতামামি, ২০০৯: http://www.ali-mahmed.com/2009/12/blog-post_31.html
হারানো স্মৃতি: ২০০৭
ছবিতে আমি, ঝড়ো, মাশা। ছবিতে সাদিকেরও থাকার কথা কিন্তু মিসিং। এর একটা কারণ হতে পারে ছবিটা উঠিয়েছে সাদিক :)
সালটা সম্ভবত ২০০৭। থ্রি মাস্কেটিয়ার: সাদিক, মাশা, ঝড়ো হাওয়া, এরা সবাই শহুরে মানুষ। এরা আমার এখানে আসবেন। না করি কেমন করে কিন্তু মনে মনে বলি, আমার এখানে দেখার কি আছে রে, বাপ! আমি থাকি গ্রাম-গ্রাম টাইপের একটা জায়গায়, এই নিয়ে খানিকটা সংকুচিতও।
পারতপক্ষে আমি ঢাকা যেতে চাই না কিন্তু ওদিন জরুরি একটা কাজে যেতে হয়েছিল। ফিরছিলাম একসঙ্গে।
এখানে সাদিককে পাওয়া গেল। সম্ভবত এই কারণে ছবিটা সে নিজে উঠাচ্ছিল না :)
এরা এখান থেকে ফিরে গিয়ে সত্য-মিথ্যা মিশিয়ে জনে জনে পোস্ট দেয়া শুরু করল। একগাদা মিথ্যার বেসাতি...।
সাদিক: http://www.somewhereinblog.net/blog/mysticsaint/28701602
মাশা: http://www.somewhereinblog.net/blog/mashablog/28701658
ঝড়ো হাওয়া: http://www.somewhereinblog.net/blog/jhorohowa/28701617
Subscribe to:
Posts (Atom)