একটা ওয়েব-সাইটে একজন নব্য মুক্তিযোদ্ধা ব্লগস্ফিয়ারকে নাড়িয়ে দিতেন। 'আসাদ গেটে এখনও উর্দু লেখা'! এই নিয়ে কঠিন একটা লেখা দিলেন এবং অনেক 'সাবাসি'ও পেলেন।
কালের কন্ঠও এই নিয়ে রিপোর্ট করেছিল, এখনও উর্দু লেখা। পরে অবশ্য তাদের ভুল স্বীকার করে। এটা একটা ভাল দিক যে আমাদের দেশের পত্রিকাওয়ালারা ভুল স্বীকার করার ক্লেশ স্বীকার করেন।
কালের কন্ঠ: http://www.ali-mahmed.com/2010/03/blog-post_09.html
ডোবার গভীরতা যেমন খুঁজে লাভ নাই, তেমনি এখানেও। ভারী ভারী লেখা লিখে ক্লান্ত লাগে। এখানে হালকা চালের লেখা লিখে চেপে রাখা শ্বাস ফেলতে পারি। মূলত এই সাইটটা আমার নিজের জন্য এবং অল্প কিছু পছন্দের মানুষদের জন্য। বিচিত্র কারণে যারা আমার দোষ খুঁজে পান না...।
Wednesday, 25 August 2010
Tuesday, 24 August 2010
ব্যাপক বিনোদন
আমাদের জীবনে আনন্দের বড়ো অভাব। কখনও কখনও জীবনটা বড়ো পানসে লাগে, বিনোদন না-থাকলে উপায়ই ছিল না!
আমাকে যখন একজন ফোন করে বললেন, ওমুক নিক আপনাকে নিয়ে কঠিন একটা লেখা দিয়েছে। আমি হাসিতে উড়িয়ে দিলাম কারণ একটা প্রতিযোগিতায় অনেকের সঙ্গে এই মানুষটাও ছিলেন। মাত্র প্রতিযোগিতা শেষ হলো এখনও এই মানুষটা আমাকে নিয়ে পোস্ট দেয়ার মতো মূর্খতা করবেন এটা অবিশ্বাস্য!
বাস্তবে দেখা গেল মানুষটা ঠিক-ঠিক আমাকে নিয়ে পোস্ট দিয়েছেন। আমি হতভম্ব হয়ে ভাবছিলাম, একটা মানুষের বুদ্ধি-শুদ্ধি কোন পর্যায়ে গেলে তিনি এমনটা করতে পারেন!
আমাকে নিয়ে কঠিন পোস্ট। আমার বিষণ্ন হওয়ার কথা কিন্তু পড়ে আমি খুব মজা পাচ্ছিলাম। তড়িঘড়ি করে প্রিন্ট নিয়ে রাখলাম, খোদা-না-খাস্তা হারিয়ে যায় যদি, এমন মূল্যবান দস্তাবেজ হাতছাড়া করা চলে না। আজও পড়লাম। সেই আগের মতই ব্যাপক বিনোদন পেলাম।
মোতাব্বির কাগু-এর মন্তব্য, "...আর দুর্জনেরা বলে ফিফা নিক ৫ জনে চালায়। তাই পুরষ্কার না পাইয়া ভালই হইছে। কে যাইত পুরষ্কার আনতে?? বাকিদের কি হইত???"
পোস্টদাতা পোস্টটা শেষ করেছেন এটা বলে, "...সাবমেরিন ক্যাবল কাটা যাওয়ায় গত কয়েকদিন ইন্টারনেট থেকে দূরে ছিলাম। প্রতিক্রিয়া জানাতে তাই দেরি হল।"
হা হা হা। ব্লগের ভাষায় হাহাপগে। এতো বিনোদন যেখানে সেখানে একজন মানুষ বিমর্ষ থাকে কেমন করে!
*বাংলা ব্লগের গরীব অ্যামবেসেডর: http://www.somewhereinblog.net/blog/Fusion5/29136846
আমাকে যখন একজন ফোন করে বললেন, ওমুক নিক আপনাকে নিয়ে কঠিন একটা লেখা দিয়েছে। আমি হাসিতে উড়িয়ে দিলাম কারণ একটা প্রতিযোগিতায় অনেকের সঙ্গে এই মানুষটাও ছিলেন। মাত্র প্রতিযোগিতা শেষ হলো এখনও এই মানুষটা আমাকে নিয়ে পোস্ট দেয়ার মতো মূর্খতা করবেন এটা অবিশ্বাস্য!
বাস্তবে দেখা গেল মানুষটা ঠিক-ঠিক আমাকে নিয়ে পোস্ট দিয়েছেন। আমি হতভম্ব হয়ে ভাবছিলাম, একটা মানুষের বুদ্ধি-শুদ্ধি কোন পর্যায়ে গেলে তিনি এমনটা করতে পারেন!
আমাকে নিয়ে কঠিন পোস্ট। আমার বিষণ্ন হওয়ার কথা কিন্তু পড়ে আমি খুব মজা পাচ্ছিলাম। তড়িঘড়ি করে প্রিন্ট নিয়ে রাখলাম, খোদা-না-খাস্তা হারিয়ে যায় যদি, এমন মূল্যবান দস্তাবেজ হাতছাড়া করা চলে না। আজও পড়লাম। সেই আগের মতই ব্যাপক বিনোদন পেলাম।
মোতাব্বির কাগু-এর মন্তব্য, "...আর দুর্জনেরা বলে ফিফা নিক ৫ জনে চালায়। তাই পুরষ্কার না পাইয়া ভালই হইছে। কে যাইত পুরষ্কার আনতে?? বাকিদের কি হইত???"
পোস্টদাতা পোস্টটা শেষ করেছেন এটা বলে, "...সাবমেরিন ক্যাবল কাটা যাওয়ায় গত কয়েকদিন ইন্টারনেট থেকে দূরে ছিলাম। প্রতিক্রিয়া জানাতে তাই দেরি হল।"
হা হা হা। ব্লগের ভাষায় হাহাপগে। এতো বিনোদন যেখানে সেখানে একজন মানুষ বিমর্ষ থাকে কেমন করে!
*বাংলা ব্লগের গরীব অ্যামবেসেডর: http://www.somewhereinblog.net/blog/Fusion5/29136846
Monday, 23 August 2010
ভাত দে-ভাত দে-ভাত দে
এর নাম আমি জানি না। একে কুড়িয়ে পাই রাস্তায়। ধরে রাখতে পারিনি!
আমি নিজেকে উঁচু মানুষ হিসাবে কখনও দাবি করিনি কিন্তু মানুষটা আমি খুব নিষ্ঠুর এমনটাও মনে করি না। আসলে একে লালন-পালন করার মত যথেষ্ঠ জ্ঞান আমার ছিল না।
এর এই ছবিটা ঢাকা হোমে নিয়ে যাওয়ার সময়কার, বাসা থেকে বেরুবার ঠিক আগ-মুহূর্তের। আজও এর এই তাকাবার ভঙ্গি আমাকে তাড়া করে। এ কথা বলতে পারত না। কেবল একটা কথাই স্পষ্ট বলতে পারত, ভাত দে।
এখনও আমার কানে বাজে, ভাত দে-ভাত দে-ভাত দে...।
আলো অন্ধকারের খেলা: http://www.ali-mahmed.com/2009/12/blog-post_27.html
আমি নিজেকে উঁচু মানুষ হিসাবে কখনও দাবি করিনি কিন্তু মানুষটা আমি খুব নিষ্ঠুর এমনটাও মনে করি না। আসলে একে লালন-পালন করার মত যথেষ্ঠ জ্ঞান আমার ছিল না।
এর এই ছবিটা ঢাকা হোমে নিয়ে যাওয়ার সময়কার, বাসা থেকে বেরুবার ঠিক আগ-মুহূর্তের। আজও এর এই তাকাবার ভঙ্গি আমাকে তাড়া করে। এ কথা বলতে পারত না। কেবল একটা কথাই স্পষ্ট বলতে পারত, ভাত দে।
এখনও আমার কানে বাজে, ভাত দে-ভাত দে-ভাত দে...।
আলো অন্ধকারের খেলা: http://www.ali-mahmed.com/2009/12/blog-post_27.html
Sunday, 22 August 2010
আত্মবিশ্বাস!
ছবিটা সাদিকের তোলা। উঠাবার সময় আমি বলছিলাম, এখানে তীব্র রোদ, ছবিটা ভাল আসবে না।
সাদিক ক্ষেপে গেলেন, আপনি জানেন, আমি একজন প্রফেশনাল ইত্যাদি ইত্যাদি।
পরে দেখা গেল, ঠিক-ঠিক ছবিটায় সমস্যা হয়েছে। যা হওয়ার তাই হয়েছে, প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত কালো এসেছে। বিশেষ ব্যবস্থায় ঘষা-মাজা করেও খুব একটা লাভ হয়নি।
বেচারা সাদিক... :-D !
সাদিক ক্ষেপে গেলেন, আপনি জানেন, আমি একজন প্রফেশনাল ইত্যাদি ইত্যাদি।
পরে দেখা গেল, ঠিক-ঠিক ছবিটায় সমস্যা হয়েছে। যা হওয়ার তাই হয়েছে, প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত কালো এসেছে। বিশেষ ব্যবস্থায় ঘষা-মাজা করেও খুব একটা লাভ হয়নি।
বেচারা সাদিক... :-D !
Friday, 20 August 2010
বিচিত্র এক মানুষ!
ব্লগস্ফিয়ারে এমন বিচিত্র মানুষ আমি কমই দেখেছি। এই মানুষটা যখন লগ-ইন করতেন তখন দশজন লগ-আউট হয়ে যেতেন। এমন কেউ নাই যার পেছনে মানুষটা লাগেননি, আমারও!
প্রথম যখন এই মানুষটাকে আমি সামনাসামনি দেখি তখন একটা ধাক্কার মতো খেয়েছিলাম, এই মানুষটাই তাহলে 'অষ্ট ডট রাসেল' ওরফে রাসেল পারভেজ! ওয়াল্লা, এ তো দেখি চোখে চোখ রেখেই কথা বলতে পারে না।
প্রথম দেখায় রাসেলকে আমি আমার একটা বই দিয়েছিলাম, 'কয়েদী'। এই দেশে হরতাল নিয়ে গোটা একটা বই সম্ভবত কয়েদী। এই মুগ্ধতা মানুষটাকে স্পর্শ করবে এমনটা যেমন আমি আশা করিনি তেমনি বইটা নিয়ে তাঁর ভাল লাগা। এটা জরুরি না একজনের লেখা অন্যজনের ভাল লাগতেই হবে। তাছাড়া রাসেল পুতুপুতু আলোচনা করবে এটাই বরং হাস্যকর।
কিন্তু তখন আমি প্রচন্ড ক্রদ্ধ হয়েছিলাম, রাসেল কেবল আমার কয়েদী বইটা নিয়ে কঠিন একটা লেখা লিখেছিলেন বলেই না, তিনি আমার নাম নিয়ে অহেতুক টানাটানি করেছিলেন বলে।
কিন্তু এই মানুষটাকে যখনই প্রয়োজন হয়েছে, মানুষটার না নেই! হারিয়ে যাওয়া একটা বাচ্চাকে দিয়ে আসতে হবে। আমি পথ-ঘাট চিনি না। তাতে কী- কেন, রাসেল আছে না।
এতিম বাচ্চারা না-খেয়ে আছে। রাত বাড়ছে, আজই বাজার করে দিয়ে আসতে হবে। বাজারে যেতে যেতে রাত গভীর। তো? রাসেল আছে যে...।
...
তখন আমার বড়ো বাজে সময়। অন্য রকম জীবন-যাপন করি। রাসেল কৌশিকসহ হুট করে একদিন চলে এসেছিলেন আমার এখানে। দিনভর কতশত স্মৃতি ফিরে দেখতে দেখতে পার হয়ে যায়। দুঃসময়ে খানিকটা ভাল লাগা এও কী কম।
(ছবি সূত্র: কৌশিক আহমেদ)
*রাসেলের কয়েদী সমালোচনা: http://raselparvez.blogspot.com/searchq=%E0%A6%86%E0%A6%B2%E0%A7%80+%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%B9%E0%A6%AE%E0%A7%87%E0%A6%A6
*রাসেলের 'আখা ভ্রমণ': http://www.somewhereinblog.net/blog/jontronablog/28819352
**রাসেলের সমালোচনার উত্তর: http://www.ali-mahmed.com/2007/06/blog-post_2332.html
... ... ...
১. আখা ভ্রমণ:
"ভুল মানুষের ডেরায়।
প্রথম যখন এই মানুষটাকে আমি সামনাসামনি দেখি তখন একটা ধাক্কার মতো খেয়েছিলাম, এই মানুষটাই তাহলে 'অষ্ট ডট রাসেল' ওরফে রাসেল পারভেজ! ওয়াল্লা, এ তো দেখি চোখে চোখ রেখেই কথা বলতে পারে না।
প্রথম দেখায় রাসেলকে আমি আমার একটা বই দিয়েছিলাম, 'কয়েদী'। এই দেশে হরতাল নিয়ে গোটা একটা বই সম্ভবত কয়েদী। এই মুগ্ধতা মানুষটাকে স্পর্শ করবে এমনটা যেমন আমি আশা করিনি তেমনি বইটা নিয়ে তাঁর ভাল লাগা। এটা জরুরি না একজনের লেখা অন্যজনের ভাল লাগতেই হবে। তাছাড়া রাসেল পুতুপুতু আলোচনা করবে এটাই বরং হাস্যকর।
কিন্তু তখন আমি প্রচন্ড ক্রদ্ধ হয়েছিলাম, রাসেল কেবল আমার কয়েদী বইটা নিয়ে কঠিন একটা লেখা লিখেছিলেন বলেই না, তিনি আমার নাম নিয়ে অহেতুক টানাটানি করেছিলেন বলে।
কিন্তু এই মানুষটাকে যখনই প্রয়োজন হয়েছে, মানুষটার না নেই! হারিয়ে যাওয়া একটা বাচ্চাকে দিয়ে আসতে হবে। আমি পথ-ঘাট চিনি না। তাতে কী- কেন, রাসেল আছে না।
এতিম বাচ্চারা না-খেয়ে আছে। রাত বাড়ছে, আজই বাজার করে দিয়ে আসতে হবে। বাজারে যেতে যেতে রাত গভীর। তো? রাসেল আছে যে...।
...
তখন আমার বড়ো বাজে সময়। অন্য রকম জীবন-যাপন করি। রাসেল কৌশিকসহ হুট করে একদিন চলে এসেছিলেন আমার এখানে। দিনভর কতশত স্মৃতি ফিরে দেখতে দেখতে পার হয়ে যায়। দুঃসময়ে খানিকটা ভাল লাগা এও কী কম।
(ছবি সূত্র: কৌশিক আহমেদ)
*রাসেলের কয়েদী সমালোচনা: http://raselparvez.blogspot.com/searchq=%E0%A6%86%E0%A6%B2%E0%A7%80+%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%B9%E0%A6%AE%E0%A7%87%E0%A6%A6
*রাসেলের 'আখা ভ্রমণ': http://www.somewhereinblog.net/blog/jontronablog/28819352
**রাসেলের সমালোচনার উত্তর: http://www.ali-mahmed.com/2007/06/blog-post_2332.html
... ... ...
১. আখা ভ্রমণ:
"ভুল মানুষের ডেরায়।
অপরিচিত শহরে আমাকে আমন্ত্রণ জানায় নাক উঁচিয়ে কোনো মতে জেগে থাকা এক বহুমুখী প্রকল্প। বাংলাদেশের বর্ষা তার সমস্ত শরীর ডুবিয়ে দিলেও তার প্রাণহরণ করতে পারেনি এখনও। তাই লাল কালিতে লেখা বহুমুখী প্রকল্পের অস্তিত্ব জানায় দেয় আমাকে। ট্রেন হেলেদুলে বাঁক নেয়। বৃষ্টি অনেকটা হাল্কা চালেই আমাদের পিছুপিছু আসছে।
ট্রেন থেকে নেমে আসলে কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। নতুন শহরে একেবারে অপরিচিত। মানুষের ভাষা বুঝতে পারি না, তোতা পাখীর মতো শেখানো বুলি আউরে যাওয়া যায়। তবে ট্রেনের দুলুনিতে সেই শেখানো বুলিও ভুলে গেছি।
মনে আছে বাজার মসজিদ। অতএব শরণ প্রার্থনা। গন্তব্য আপাতত বড় বাজার মসজিদ। রিকশাওয়ালা চাইলো ২০টাকা। মগা পেয়ে হোগা মেরে দিবে এতটা কাঁচা আমরা না। তোমার রিকশায় চড়লাম না বাল। সামনে একটাকে বলতেই সানন্দে রাজী হয়ে গেলো। সামনেই বাজার, সেই বাজার পার হওয়ার পরে লালবাজার।
কোথায় এসে নামলাম আমরা? এটা কি শহর নাকি বাজার? ঐ যে বড় মসজিদ, উদ্ভ্রান্তের মতো চারপাশ দেখি। এরপরে কোথায় আমাদের জানা নেই। জীবনটাই একটা গোলক ধাঁধাঁ। কোথায় মানুষ ছুটছে তা জানে না, তবে এই মুহূর্তে জীবন বিষয়ে কোনো কচকচানি ভালো লাগছে না। তবে একটা অনুভব জাগে, আরে এইতো সেই হারিয়ে যাওয়া মফস্বল। একেবারে টিপিক্যাল মফস্বলের ছবি এখানে, রাস্তার অবস্থা ভালো না। অবশ্য ভালো রাস্তা দেখবার আশা করা বৃথা, এখানে রোডস এন্ড হাইওয়ে চলে এমপির হুকুমে। সেখানে রাস্তায় বালি না ফেলেও কাজ শেষ বলে বিল তুলে ফেলা যায়, অন্তত এখানে রাস্তায় এখনো সামান্য পীচ নাছোরবান্দা আপদের মতো লেপ্টে আছে এটাই উন্নয়নের আলামত। মফস্বলের সব চেয়ারম্যান দৌড়ের উপরে আছে, দেশটা মিলিটারির কব্জায় যাওয়ার পর থেকে অন্তত সাধারণ জীবনযাপন বলে কিছু নেই। কোনো নতুন টেন্ডার ডাকা হচ্ছে না, অন্তত সেখানে লেফট রাইট করা বড় বাবু, মেজ বাবু, সেজ বাবু, ন-বাবুর কোনো পাওনার হিসেব না থাকলে এলজিআরডি কিংবা স্থানীয় পৌরসভাও নতুন কোনো কাজের নির্দেশ দিচ্ছে না। আলামত সে রকমই, অথচ অন্তত ১ বছর আগেই এ রাস্তার গুরুতর মেরামতির প্রয়োজন।
সেই জংধরা টিনের চাল, নীচে বসে থাকা দোকানী, কোনো সুসজ্জিত শো রুম নেই, একেবারে সাদামাটা আয়োজন। মানুষের আড়ালের প্রয়োজন নেই, বিলাসিতা এখানে থাবা বসায় না, যদিও দোকানে দোকানে আকিজ আর এস আলম হানা দিচ্ছে, তবে এরপাশেই বহাল তবিয়তে টিকে আছে লাল আটা, টিকে আছে ডাব আর শুকনা মরিচ। রাস্তায় বৃষ্টির অবশিষ্ট জমে আছে। কেনো যেন মনে হলো স্টেশনের উলটা পাশে বাসা হবে। রিকশা হঠাত করেই বামে মোড় নিলো, সামনেই রেল ঘুণটি, সেখানের সিগন্যাল পেরিয়ে একটু আগালেই বামে বড় বাজার মসজিদ।
অবশেষে তার সাথে দেখা হলো। অনেক অনেক দিন পরে, বলা যায় প্রায় ১৫ মাস পরে দেখা হলো তার সাথে। কিছু কিছু মানুষ তার ছায়ার চেয়ে বড় হয়ে যায়। কখনও কখনও ছায়াও লজ্জ্বা পায় পাল্লা দিতে। বর্তমানের সময়ে অচল মানুষ, সব কিছু আবেগের মূল্যে মাপে। টোটালি মিসফিট! আমার অনেক কিছুই বলার ছিলো, অন্তত শুকনো মুখে ক্ষমা প্রার্থনার মতো গম্ভীর কোনো বাক্য বলা উচিত ছিলো। নেহায়েত ঠাট্টা করতে গিয়ে যতটা আহত করেছি সেটাতে নির্লজ্জ আমোদ পেয়েছিলাম একদিন। অবশ্য সবার বয়েস বাড়ে, ভুলগুলো বড় হয়ে ধরা পরে। তবে তার সাথে দেখা হওয়ার পরে বুঝলাম ক্ষমা প্রার্থনার কিছু নেই, অনেক আগেই ক্ষমা পেয়ে গেছি আমি। সারা রাত পরিকল্পনা করে গলায় তুলে নিয়ে আসা কোকিলকণ্ঠি সুভাষণের অপ্রয়োজনীয়তার বিমুঢ় বোধ করি। এরপরে আসলে কিছুই বলবার নেই।
তার সাথে হেঁটে হেঁটে বাসায় যাচ্ছি। পুরোনো লেখার সুত্রে জেনেছিলাম তার বাসায় ঢুকবার মুখেই নৌকা আর লাঙল। মসজিদ পার হয়ে সামনে গিয়ে বামে ঘুরেও কোনো নৌকা দেখলাম না, দেখলাম না লাঙল। পুরোনো বাসা। বাসার সামনে বিশাল উঠান, উঠানের দুই পাশে অনেক রকম গাছ। সামনে বড় ঝাউ গাছ। অন্তত সেটা যে ক্রিসমাস ট্রি এই ধারণা আমার ছিলো না। এখানের সব কিছুর পেছনেই একটা-না-একটা স্মৃতি জড়িত। মূলত আমাদের শুভ ভাই স্মৃতিতাড়িত মানুষ, তার শৈশব তাকে তাড়া করে, তার পরিচিত মানুষের ভালোবাসা তাকে তাড়া করে, মানুষের নির্মমতাও হাসিমুখে ভুলে যান তিনি অতীতের সুন্দর একটা ক্ষণের কথা ভেবে। তবে এই ক্রিসমাস ট্রি আসলেই অন্য রকম, মানে এই ক্রিসমাস ট্রির পেছনের স্মৃতিটুকু। তার জীবনের প্রথম বই লিখে পাওয়া রয়্যালিটির টাকায় একটা নিজসব স্বপ্নের গাছ কিনে সেটা নিজের উঠানে লাগাতে পারা মানেই একটা স্বপ্ন বুনে দেওয়া। সেই গাছ এতদিনে ডালপালা মেলে বড় হয়েছে, উঠানের প্রতিটা গাছেই তার স্মৃতি আর স্পর্শ্ব লেগে আছে।
অনেক দিনের ইচ্ছা ছিলো এখানে আসবো। আসি আসি করেও আসা হয় নি অনেক দিন, আর মাঝে আমার পুরোনো মোবাইল হারিয়ে যাওয়ায় হয়তো চাইলেও আমার সাথে যোগাযোগ রাখা সম্ভব হয়নি। আমিও আসবো আসবো করে অনেক জায়গায় চলে গেছি, তবে এখানে আসবার মতো সঙ্গ পাইনি। বসবার ঘর পেরিয়ে একেবার তার লেখার ঘরে পৌঁছে গিয়ে ভালোই লাগলো। পরিপাটি মানুষ, সবকিছু সাজিয়ে রাখতে ভালোবাসেন। হয়তো কিছুটা পারফেক্টশনিষ্ট। তার প্রতিটা বইয়ের শব্দের ভেতরেও হয়তো সেই পারিপাট্যবোধ আছে। আমরা লেখককে চিনি তার লেখার মাধ্যমে, সেই লেখার পেছনের কষ্ট আর যন্ত্রনার কথা আমাদের কানে পৌঁছায় না। তার না ঘুমানো দমবদ্ধ অনুভুতির সাথে আমাদের পরিচয় নেই, একটা চরিত্র যখন দরজার চৌকাঠে বসে থাকে সারা রাত, লেখককে পাহাড়া দেয়, সেই সময় লেখক নিজেও অসস্তিতে ঘুমাতে পারে না।
তার ঘরদোরবারান্দা জুড়ে লিখিত অলিখিত চরিত্রেরা সার বেধে বসে থাকে, এইসব মানুষকে পাশ কাটিয়ে লেখককে শোবার ঘরে ফিরতে হয়। তবে সেখানেও অলিখিত চরিত্র অভিমানী চোখে তাকিয়ে থাকে। এই হাজার চোখের ভীড়ে লেখক আরো বেশী আত্মসচেতন হয়ে উঠতে পারেন আবার অনেক সময় মাত্রাতিরিক্ত যন্ত্রণার কামড়ে বিরক্ত হতে পারেন। আনুষ্ঠানিক কোনো সাক্ষাতকার না বরং নিজের কিছু অনুযোগ জানাতেই মূলত কথাটা সৌজন্যতার বাইরে লেখকচারিতায় পৌঁছায়।
অনেক শৈশবের উপকরণ তার লেখার ঘরে ছড়ানো ছিটানো। সেই টিনের স্টিমার, সর্ষে তেলের সলতে জ্বালালে ভটভট ভটভট গামলায় খাবি খেতো। বয়েস হয়ে গেলে এক কাত হয়ে পানিতে নিভে যেতো সলতে, আবার মুছে শুকিয়ে একই গল্প প্রতিদিন। ঘোর বর্ষায় উঠানের ছোট সমুদ্রে স্টিমার ভাসিয়ে দেওয়া, আর সলতে নিভে যাওয়ার পরে সেটা তুলে নিয়ে আসা গোড়ালি ভিজিয়ে। টমটম আর সারেঙ্গী, সেই নাচ পুতুল, একবার ঘুরালেই একটা নাচের ভঙ্গিতে স্থির হয়ে থাকতো। ডাঙ্গুলি আর লাটিম, সব স্মৃতি আঁকড়ে ধরে সেই শৈশবে পড়ে থাকা শুভকে অচেনা লাগে না। কিছু কিছু মানুষের শৈশব কাটে না কখনও। অবশ্য শৈশব ছাড়া মানুষের একান্ত আপন আর কি আছে?
একেবারে নির্ভাবনার সময়, কোথাও কোনো উদ্বেগ আর অস্থিরতা নেই। শৈশব নিজের নিয়মেই ছুটে, কোথাও একটু স্থির হওয়ার আগেই হারিয়ে যায়, সবার অগোচরেই, আমাদের সারাজীবন আমাদের সঙ্গে থেকেও অম্লিন থেকে যায়। এখানে ঘুরে ফিরে আসা, এখানেই জীবনযাপন। ঘুড়ি আর লাটাইয়ের শৈশব, ডাঙ্গুলি আর মার্বেলের শৈশব, গাছ দাপিয়ে বেড়ানো শৈশব, থরে থরে সাজানো থাকে শৈশবের মনি-মানিক্য, শুধু একটু ঝুকে কুড়িয়ে নেওয়া।
আমাদের আগে যারা এ পৃথীবিতে কাটিয়ে গেছেন তাদের জটিলতাহীন জীবন এখন আমাকে অবাক করে, হয়তো একটা সময় অনেক পরের কোনো ছেলে অবাক হয়ে প্রশ্ন করবে আচ্ছে এককালে মানুষ হাতে লিখতো, তারা হাতে লিখতো কেমন করে, অদের কি কিবোর্ড ছিলো না। সেখানে একেবারে শ্লেট পেয়ে যাওয়া ভীষণ রকম কিছু। হুমায়ুন আহমেদ, হুমায়ুন আজাদ আর মানুষের গল্পের বাইরে আমাদের নিজসব গল্প আছে। আমরা একটা সময়ে মন্তব্যে পরস্পরকে স্পর্শ্ব করতে পারতাম...হয়তো আমি জানি না, সেই ছোঁয়াগুলো জমিয়ে রেখেছে শুভ। আমি অনেক আগে একবার নতুন দিনের বাংলা গালির অভিধান শুরু করেছিলাম, সেটা মুছে দিয়েছি সেই দিন তবে সেটার স্মৃতি রয়ে গেছে শুভর কাছে। আমাকে অনেক বার এই প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়েছে, পুনরায় একই প্রশ্নের উত্তর দিতে হলো, আমার চেহারা আমার লেখার সাথে যায় না। আমি ভুল মানুষের চেহারা নিয়ে জন্মেছি। তবে আমার জিগীষা তখনও জাগ্রত।
খাচ্ছি, বা বলা যায় খাবি খাচ্ছি আতিথেয়তার চাপে। খাওয়ার ফাঁকেই প্রশ্নটা ছুড়ে দিলাম, এই যে মফস্বল, এখানের পরিবেশ, সবটা তেমন ভাবে ফুটে উঠলো না কেনো লেখায়? আসলে এই প্রশ্নটার উত্তর খুঁজছিলাম আমি নিজেই। আমাদের শহুরে লেখকদের উন্নাসিকতার পালটা জবাব কি এই মফস্বল মুছে ফেলা প্রবণতা? লোকে মফু বলবে, এই রে তোর গায়ে এখনও ভ্যাদভ্যাদে মফস্বলের গন্ধ লেগে আছে, তাই মফস্বল থেকে বড় লেখক হতে আসা ছেলেটা শহুরে বন্দনায় মুখরিত হয়। ওহ সিলি টাউনশীপ স্পেসশীপের মতো কোনো দূর মহাশুন্যে লটকে থাকে, শহরের জমিনে গেড়ে বসবার সাহস পায় না। কাঞচন গ্রাম গ্রামের পটভূমিতে লেখা হলেও সেটা পড়ে তেমন আনন্দ পাই নি। সেখানের গ্রাম কিংবা মফস্বলে আমার পরিচিত মফস্বলের ছবি নেই। আর পরিচিত যাদের লেখাই পড়ছি শহুরে ফরিয়া চোখে মফস্বল আর গ্রাম দেখার চেষ্টা। আন্তরিক গ্রাম আর মফস্বল অনুপস্থিত, কিংবা আমার পঠনসীমায় যে কয়টা উপন্যাস মনে পড়ছে তার কোনোটাই ঠিক সেই অর্থে মফস্বলকে ধারণ করতে পারেনি।
এখানে চিত্রিত মানুষের শহরের অপভ্রংশ। আমাদের শহুরে সাহিত্যিকদের চিত্রিত গ্রাম আর মফস্বল, বাস্তব চিত্রের মিমিক্রি। শুভর তৈরি জবাব ছিলো তার অযোগ্যতার বিবরণ। তবে আমার নিজের প্রশ্ন যে কারণে, পত্রিকায় সংবাদ পড়ে আবেগে আপ্লুত হয়ে চোখ ভিজে আসা লেখা লিখবার মতো অনুভব যার আছে সে কেনো নিজের জীবনযাপনের নিজের নিঃশ্বাস প্রশ্বাসের জায়গাটাকে সচেতন ভাবে অবহেলা করে যাচ্ছে। বরং এটাই সবচেয়ে সহজ সাধ্য বিষয় তার জন্য। অবশ্য এ প্রশ্নের একটা বিকল্প উত্তরও শুভ দিয়েছে। হয়তো তার নিজের নির্জনতা বজায় রাখবার লোভ, একান্ত নিজের করে পাওয়া এই অনুভবকে বাজারের সবার সামনে উন্মুক্ত করে দেবার দ্বিধা।
সময় গড়াতে থাকে ঘড়ি চলে নিজের মাপে, আমাদের মাপে সময়টা আচমকা ফুরিয়ে যায়। তার নিজের হাতে লাগানো কড়ই গাছ আর তার নিজের পরিবারের প্রতি তার মমত্ববোধ, তার দ্বিধা, তার লজ্জা, তার আক্ষেপ সবটুকু মিলিয়ে জীবন্ত একটা শুভ সবসময়ই চোখের সামনে ভেসে উঠে। তার বনসাই গাছের টবে লেখা আছে এই গাছের মৃত্যুতে আমি আনন্দিত। একটা গাছকে নিজের চাহিদা পুরণের জন্য নিয়মিত অনাহারে-অর্ধাহারে রাখা, তার নিয়মিত ডাল-পালা ছেঁটে দেওয়া, তার বিকাশ এবং বৃদ্ধি একটা নিজস্ব মাপের টবে আটকে ফেলার দুরভিসন্ধি কিংবা চক্রান্ত ব্যর্থ হয়ে যাওয়ার একটা আনন্দ আছে। আমাদের চাহিদা মেটাতে তোমাকে আমাদের তৈরি করা ছাঁচের ভেতরেই বেড়ে উঠতে হবে, এই রকম অনায্য আবদার অস্বীকার করলেও আদতে মানুষ আধিপত্যবাদী। মানুষ নিজের চাহিদা চাপিয়ে দিতে চায়। বনসাই আমাদের এই কতৃত্বপরায়নতার প্রতীক। কথা না বললেও এক একটা স্মৃতিচিহ্ন দেখে আমি বুঝতে পারি এর পেছনের অনুভবটুকু। হয়তো পরিবেশ কিংবা এমনটা ভাববার সাযুজ্যতা। ঘড়ি লাফিয়ে লাফিয়ে আগায়।
আমাদের ট্রেনের সময় হয়ে যায়। উঠে আসতেই হবে আর থাকবার উপায় নেই কোনো। আসবো না আসবো না করে শেষ পর্যন্ত স্টেশনে এসে আমাদের ট্রেনে পর্যন্ত তুলে দিয়ে নিশ্চিত চলে যাওয়ার আনন্দ পেতে চাইল হয়তো। জানি না, ট্রেনের জানালায় হাত ধরবার মুহূর্তে আমি জানতাম এটা শেষ না, আমাদের অনেক কথাই বলা হয়নি, অনেক আলোচনাই করা হয়নি, আমাদের বিনিময় অসম্পুর্ণ রয়ে গেলো। এই সময়ের মানুষের নিয়মিত হিসেবের বাইরে কিছু কিছু ভুল মানুষ এখনও বেঁচে আছে যারা অর্থ আর প্রতিষ্ঠার চেয়ে মানুষের হৃদয়কে সত্যি ভেবে জীবনযাপন করে। ইহলৌকিক নিয়মে তাদের প্রতিষ্ঠার হিসেব মেলানো দুস্কর। তারা হৃদয়ের ঐশ্বর্যে ধনী, জাগতিক প্রতিষ্ঠার মোহ তাদের নেই। এমন ভুলভাল মানুষের কাছে গিয়ে নিজেরও সব কিছু ছেড়ে দিয়ে সাধারণ মানুষ হতে ইচ্ছা করে, এই সব অচল মানুষেরাই হয়তো সভ্যতা সচল করে রাখে আবেগে ভালোবাসায়। সেই ভালোবাসা ছুঁয়ে যায় সংশ্লিষ্ট সবাইকে। এমন এক পরিবেশে সময় কাটাতে ইচ্ছা করে যেখানে সবার জন্য একটা চাটাই পাতা আছে, থাকবেন? থাকেন না ভাই। একটা দিন থেকে যান।এই লোভনীয় আহবান রেখে ফিরে আসবার সময়টা স্তব্ধ হয়ে থাকি।
আমার হাতে দারুচিনির ডাল, আমি অল্প অল্প ভাঙি আর মুখে দেই। ভাবতে থাকি মানুষ কতটা অশালীন রকমের প্রতিষ্ঠাকামী লোভী বর্বর, শালারা গাছের ছাল খুলে, তাকে উলঙ্গ করে বাজারে বিক্রী করে গাছের পোশাক। সে পোশাক মানুষ পয়সা দিয়ে কিনে আর উলঙ্গ গাছ দাঁড়িয়ে থাকে সাজানো বাগানে। আর যার সাথে পরিচয় হলো, তাকে বলবার মতো কিছু নেই, আতিথেয়তার উত্তরে সামাজিক প্রত্যুত্তর না দিয়ে বরং তার জন্য এতটুকু বলা যায়। কোনো-কোনো স্পর্শ্ব অনাবিল আনন্দের অনুভুতি দেয়। কোনো-কোনো প্রথম পরিচয়ে অপরিচয়ের সংশয় থাকে না। বরং পরিচিত মানুষটাকে অনেক দিনের চেনা মনে হয়। এইসব মনে হওয়া সম্পর্কের কোনো নাম হয় না। আমিও সম্পর্ককে কোনো নাম দিতে পারিনি, সামাজিক পরিচয়ে ঠিক কি সম্বোধন উপযুক্ত হবে ভেবে পাইনি।
যতদুরেই যাই, কিছু কিছু মানুষ একেবারে হৃদয়ের কাছাকাছি থেকে যায়। অন্য রকম কষ্টবোধে গলা আটকে আসে, ভেতরে কান্না থাকে না, অনিবার্য বিচ্ছেদের বেদনা থাকে। মুখ ফুটে বলা যায় না আসি কিংবা যাই, সমস্ত পথ ফিরে ফিরে তাকাই, যতদুর দেখা যায়। আদর আর আপ্যায়নের ছাপ মেখে চলে আসতে ইচ্ছা করে না। এখানে এসে মনে হলো, আর কোথাও যাওয়ার নেই, এটাই নিশ্চিত নিরাপদ আশ্রয়। তবুও ডানা মেলে উড়ে যেতে হবে। আমাদের সবার গন্তব্য থাকে, কিংবা আপাত গন্তব্য কিংবা ঘরে ফিরে আসবার দায়। তবু মুছে ফেলা যায় না সেই ছাপ। ভালো থাকুক তারা সবাই, সাময়িক আঁধার কেটে আবার সূর্য্যের আলোতে উদ্ভাসিত হোক তাদের জীবন।"
২. কয়েদী, সমালোচনা:
"আত্মপরিচয় নিয়ে সংকট কাটে না কিংবা আত্মপরিচয়ের গ্লানি বহন করা দুঃসাধ্য বলেই নতুন পরিচয় নির্মাণের চেষ্টা করে মানুষ। এই পরিচয় আর ভাবমুর্তি সংকট এড়ানোর কোনো সামাজিক পন্থা নেই। আমরা মুখে গামছা বেঁধে বেশ্যা বাড়ী যাই, দুপুরে পাঞ্জাবী চাপিয়ে গায়ে আতরচর্চিত তুলো কানে গুঁজে যাই খোতবা শুনতে আর বিকালে রাস্তায় দাঁড়িয়ে শাড়ীর ফাঁক গলে উপচে পড়া যৌবন চাটি এবং আমাদের ভাবমুর্তি নির্মাণ করি। সংকটটা ভয়াবহ। নিজের সাথে নিজের দ্বৈরথ, অবশেষে সমাধান আসে, নিজের ভাবমুর্তি নির্মাণের পর ঢাক ঢোল বাজিয়ে সেই ভাবমুর্তি সবাইকে জানানোর কাজটাও নিজেকেই করতে হয়। আমি এলেবেলে কেউ না আমি সেই জন, সেই রকম একজন অতএব আমার কথা শ্রবণ করো তোমরা।
'আবুল হোসেন'নামের একজন কবি বিদ্যমান ছিলো বলেই আমরা আবুল হাসানকে পাই, জন্ম হয় শামসুর রাহমান, শফিক রেহমানের। একটা সিল মোহর লাগানো নামের বানানে কিংবা একটা বিশিষ্ঠতা নিয়ে আসা নামে। জীবনানন্দ দাশগুপ্ত নিজের গোপনীয়তা উন্মোচন করে গুপ্ত বিদ্যা ভুলে জীবনানন্দ দাশ হয়ে উঠার পন্থাটা এরকমই। হয়তো জীবিত মানুষদের ভেতরে বেশী পরিমাণ স্পর্শকাতর হওয়ায় আত্মপরিচয়ের সংকট শিল্পিদের বেশী আক্রান্ত করে, তাই মহনু শাহ, মুজিব ইরম, ব্রাত্য রাইসু বিভিন্ন রকম ভাব ও ভাঁজ ছড়িয়ে সামনে আসেন আমাদের।আমরা নিজেরাও ভাবমুর্তি নির্মাণ করি।
আহ্লাদ করে আমি প্রেমিকাকে বলতাম কুন্তলা, আমার লেখ্য সম্বোধনের আড়ালে কুন্তলার ভাবমূুর্তি নির্মাণে এত ব্যস্ত ছিলাম যখন অবশেষ অবসর আসলো, ক্লান্তি আসলো, চেনা প্রেমিকাকে তার রচিত ভাবমূর্তির সাথে মেলাতে পারলাম না কোনো ভাবেই।নিজের নামকে কেঁটে ছেটে বানানের হেরফেরে ইতর জনের সাথে স্পষ্ট পার্থক্য গড়ে তোলার প্রক্রিয়াটা মোটেও নিন্দনীয় নয়। কারো কারো আবার জুতসই নাম থাকে, খালেদ মইনুদ্দিন কিংবা মাহবুব কায়সার, এমন নামগুলোর ভেতরে একটা আলাদা ভারিক্কি আছে। কিংবা আধুনিক যুগে এটাই রীতি, 2 পর্বের নাম হতে হয়, আবুল কালাম মোহাম্মদমনজুর মোরশেদ নামটা খারাপ না তবে আধুনিক হয়ে উঠতে পারে নি- আধুনিক হতে হলে ম্যাজিক টাচ দিতে হয় নামে।
আহমাদ মোস্তফা কামালের নামাঙ্কন আমাকে আকৃষ্ট করতে পারেনি, এমনকি এখনও আলোচনার সময় ভুলে শামসুর রহমান বলে ফেলি রাহমানের বদলে। আমাদের চোখ চেনা পরিচয় খুঁজে পায় তাই শামসুর রাহমান যে আসলেই রাহমান এটা নিশ্চিত হই যখন গত বছর একজন জানালো তার নামের বানান আসলে রাহমান। একই কারনে আহমাদ শব্দটা চোখে পড়লে সবার শেষে, আমাদের জনাব গল্প লেখক যে মেদ ঝড়িয়ে উন্মাদের উন কামিয়ে ফেলে পুরো মাদ হয়ে আছেন এটা বুঝতে পারি নি।
আজ যে দুজনের কথা লিখবো তারা দুজনেই নামে অস্ত্রোপচার করেছেন। জনাব আলী মাহমেদ( যদিও নিশ্চিত না এটা মোহাম্মদের শিশ্ন ছেড়া রূপ না মাহমুদের শিশ্নের উত্থান) অন্য জন আহ ম্যাড মোস্তফা কামাল।
আলী মাহমেদের বই পড়া হয়েছে ব্লগের সুবাদে। তার বস্ত্র উম্মোচন পর্ব সমাপ্ত হয়েছে এই বইমেলায়। "কয়েদী" নামের বইটির ঘটনাগুলোও অনেকে পড়েছেন, তবে বইটি কেনো হরতাল বিষয়ক অঘটন সংকলন না হয়ে জাগৃতির ভাষ্যমতো "দেশের একমাত্র হরতাল বিরোধী উপন্যাস" হয়ে উঠলো সেই সমাধান খুঁজে পাই নি এখনও। তাই বিজ্ঞাপনের ভাষ্যমোতাবেক এটাকে হরতাল বিরোধী উপন্যাস হিসেবেই চিহ্নিত করা হবে।
ক্ষীণবপু "কয়েদী" উপন্যাস পড়তে সময় লাগলো 40 মিনিট, যারা আরও দ্রুত পঠনে অভ্যস্ত তাদের হয়তো সময় লাগবে 30 মিনিট।42 পাতার এই উপন্যাসে হরতাল বিষয়ক অঘটন জমা হয়েছে 5টা এবং এগুলো আপাতবিচ্ছিন্ন। বিভিন্ন হরতাল দিনের অলৌকিক মিলন বাদ দিলে অন্য কোনো মিলও খুঁজে পাওয়া যাবে না সাদা চোখে। এবং বিজ্ঞাপন দেখার পর খুঁজে দেখলাম ঘটনাগুলোর উপরে কোনো শিরোনাম নেই- অথর্্যাৎ এটা বিচ্ছিন্ন হরটাল বিষয়ক গল্প নয়।
হরতাল নামক অস্ত্রটা বহুল ব্যভারে ভোঁতা হয়ে গেছে সত্য তবে গনঅনাস্থা প্রকাশের জন্য এক চেয়ে বড় কোনো অস্ত্র নেই এখন পর্যন্ত রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে। শহুরে মধ্যবিত্তের কিয়দংশ ছাড়া আসলে এখন তেমন ভাবে হরতাল উদযাপণ করে না কেউই। হরতালের দিনও বাজার বসে, পণ্যের পসরা সাজানো হয়,গার্মেন্টস ফ্যাক্টারী ফুল প্রোডাকশনে যায়, ইপিজেডও বন্ধ থাকে না। এবং কৃষক শ্রমিক কামার কুমার সবাই দোকান খুলেই বসতে পারে, ক্ষেতে যেতে পারে। এর পরও জামিল আহমেদ নামের এক অতিশয় সংবেদনশীল গার্মেন্টস ব্যবসায়ীর অস্তিত্ব খুঁজে পাই উপন্যাসের পাতায়। এটা গল্প উপন্যাসেই সম্ভব। বাস্তবের পোশাক শিল্পের সাথে যুক্ত মানুষগোলো নুন্যতম মজুরি বাড়ালে না খেয়ে মাঠে মরতে হয়ে এবং দাবী দাওয়া নিয়ে দেন দরবার করে এবং সেখানে জামিল আহমেদের অনুপস্থিতি প্রকট ভাবেই ধরা পড়ে।
সেই সংবেদনশীল জামিল আহমেদ কোনো এক হরতালের দিন তার জাপানী ব্যবসায়ী পার্টনারকে আনতে যান এয়ারপোর্টে-সেবার টানা ১৫ দিন হরতাল ছিলো- এ সময়ই সুশীল সমাজীয় মতের দেখা পাই আমরা উপন্যাসে।
বাংলাদেশ সম্ভবনাময় দেশ, সেই সম্ভবনা নিহত হচ্ছে রাজনৈতিক অস্থিরতায়। হবে হয়তো, পেশাদার আমলাতান্ত্রিক দূর্নীতি আর লাল ফিতার দৈরাত্বে যখন বাংলাদেশর পরিচয় এখানে ব্যবসা শুরু করতে সবচেয়ে বেশী সময় লাগে, যখন কোনো রকম রাজনৈতিক অস্থিরতা ছাড়াই দেশের সাম্প্রতিক এডিপি প্রবৃদ্ধি কমে যায়- তখন সুশীল সমাজের এই মত ন্যাংটা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে অধোবদনে। কিংবা এখন রাজনৈতিক অস্থিরতা নেই এর পরও সাধারন মানুষ বাজার থেকে মুলধন সরিয়ে নিচ্ছে , এই সব অহেতুক কারণগুলোতে রাজনীতি বা হরতাল নেই। দেশে আইনের শাসন সুপ্রতিষ্ঠিত করার জন্য মইন উদ দৌলা দেশের আনাচে কানাচে ঘুরে আমাদের সহবত শিষ্ঠাচার আর ন্যায়নীতির পাঠ দিচ্ছেন,মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা ফখরুদ্দিন বাবুর্চির রন্ধনশালায় সুপক্ক উন্নয়ন সেদ্ধ হচ্ছে,দূর্নীতির ভেজালবিহীন বাংলাদেশ সিদ্ধ হচ্ছে, সিদ্ধ হচ্ছে হলি ডে মার্কেট। আর বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিষের দাম বাড়ছে। তেলের দাম, চালের দাম ডালের দাম, সবজীর দাম বাড়ছে এবং বাড়ছে, কোনো সিন্ডিকেট নেই এর পরও মুল্য ঝুলিয়ে দিলেও পাইকারী বাজারে আর খুচরা বাজারে কোথাও সেই দামে জিনিষ পাওয়া যাচ্ছে না।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্ভবনা রাজনৈতিক অস্থিরতা ছাড়াই খাবি খাচ্ছে যখন নোবেল মেডেল ঝুলিয়ে আসলেন ইউনুস। হরতাল না হলে অবশ্যই উন্নয়নের জোয়ারে আমরা ডুবে মারা যাবো।
সংবেদী জামিল সাহেব জাপানী ভাষায় আমার সোনার বাংলা পড়ে কাঁদতে কাঁদতে শেরাটন হোটেল ছাড়লে চিরতরে হারিয়ে যান এই উপন্যাসের পাতা থেকে। তার চিরবিলুপ্তির দুঃখ ঘুচিয়ে দিতে আসেন সাকিব সাহেব। রেলগাড়ী ঝমাঝম না করে দাঁড়িয়ে থাকে রেল লাইনে, ক্ল্যাস্টোফোবিয়ার জন্ম হয়, তিনি মানসিক অস্থিরতায় শেষ পর্যন্ত রাঁচি কিংবা পিজিতে আশ্রয় নিয়েছেন হয়তো।
এর পর দৃশ্যপটে লেখক দাঁড়ান বুক চিতিয়ে। বাংলাদেশের রাজনীতি আর রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের উপর শ্রদ্ধাবোধ নেই তেমন ভাবে। তাই কোনও নির্দেশনা না দিয়েই লেখক তথ্য-প্রমাণ হাজির করেন হরতাল আসলেই খারাপ। গার্মেন্টস, চিংরী, ট্রাক ভর্তি পন্য সবই আটকে আছে, সীমান্ত অতিক্রম করতে পারছে না, তাই হরতাল খারাপ।
এসব পড়ে মনে হয়, সংবাদ পত্রের পাতায় বাংলাদেশ দেখুন শীর্ষক রচনা প্রতিযোগীতা চলছে। ব্যবসায়ী মহলের কথা আসা, এদের সাথে আসে অর্থনীতি এবং উন্নয়নের প্রলাপ। তবে সংবাদ পত্রে বাংলাদেশ দেখার ভেতরের ভিত্তিহীন আবেগটা ন্যাংটা পাগল হয়ে রাস্তায় ঘুরে। মানুষের সংবেদন জাগানো বা মানুষের চিত্তকে হরতালের প্রতি বিষিয়ে তোলার ক্ষমতা নেই বইটার ভেতরে।
হরতাল বিরোধী এই উপন্যাসে আবেগ সংবেদনশীলতা,মমত্ববোধ, অক্ষমতার আক্ষেপ , সব রকম ট্রাজিক উপাদান ঢুকিয়ে দেওয়ার পরও কোনো এক অজানা কারণে এটা উপন্যাসে উত্তির্ণ হতে পারে না।
ব্যর্থতার কারণ অনুসন্ধান করলে বোধ হয় পারস্পর্যহীনতাকে প্রধান খল হিসেবে চিহ্নিত করা যাবে। গঠন শৈলীতে সমসয়া, সমস্যা ঘটনা নির্মাণে। বিষয়টা অদক্ষ হাতের মোজাইক হয়ে যায় হরতাল দিনের ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন অংশ জুড়ে সামগ্রীক কোলাজ হয়ে উঠে না।
হরতাল আধিক্য অন্য একটা কারণ হতে পারে- কিংবা হরতালজনিত বিপত্তি সংকলন না হয়ে দক্ষ রূপায়নে হরটালের ঘটনাগুলোকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ব্যবহার করা যেতো। মূল উপজীব্য হরতালই হতো তবে চরিত্রগুলোকে আরও ছড়িয়ে দিলে ভালো হতো।
যদি আমি লিখতাম একই ঘটনাগুলো নিয়ে তবে জামিল আহমেদ চরিত্রটাকে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত নিয়ে যেটাম, সেখান থেকে কোনো এক সিগন্যালে জামিল আহমেদের সাথে সাক্ষাৎ করিয়ে দিতাম শহীদ সাহেবকে। সেই রেল লাইন ধরে যেটাম সাকিবের কাছে- সাকিবকে ছুঁয়ে আসতাম লেখকের কাছে- একই মাল মশলা ব্যবহার করে বিভিন্ন বিন্যাসে সাজিয়ে হরতালের বিভীষিকা তুলে ধরার চেষ্টা করতাম।
এখানে এক খাবলা রং ওখানে এক খাবলা এমন না করে বিভিন্ন রং এর প্রলেপ দিতাম যত্ন নিয়ে। নির্মাণ সব সময় পিরামিড হওয়া ভালো, বিশাল ভিত্তি নিয়ে শুরু হবে, ধীরে ধীরে সেটা চুড়ান্ত শীর্ষে আরোহন করবে।"
ট্রেন থেকে নেমে আসলে কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। নতুন শহরে একেবারে অপরিচিত। মানুষের ভাষা বুঝতে পারি না, তোতা পাখীর মতো শেখানো বুলি আউরে যাওয়া যায়। তবে ট্রেনের দুলুনিতে সেই শেখানো বুলিও ভুলে গেছি।
মনে আছে বাজার মসজিদ। অতএব শরণ প্রার্থনা। গন্তব্য আপাতত বড় বাজার মসজিদ। রিকশাওয়ালা চাইলো ২০টাকা। মগা পেয়ে হোগা মেরে দিবে এতটা কাঁচা আমরা না। তোমার রিকশায় চড়লাম না বাল। সামনে একটাকে বলতেই সানন্দে রাজী হয়ে গেলো। সামনেই বাজার, সেই বাজার পার হওয়ার পরে লালবাজার।
কোথায় এসে নামলাম আমরা? এটা কি শহর নাকি বাজার? ঐ যে বড় মসজিদ, উদ্ভ্রান্তের মতো চারপাশ দেখি। এরপরে কোথায় আমাদের জানা নেই। জীবনটাই একটা গোলক ধাঁধাঁ। কোথায় মানুষ ছুটছে তা জানে না, তবে এই মুহূর্তে জীবন বিষয়ে কোনো কচকচানি ভালো লাগছে না। তবে একটা অনুভব জাগে, আরে এইতো সেই হারিয়ে যাওয়া মফস্বল। একেবারে টিপিক্যাল মফস্বলের ছবি এখানে, রাস্তার অবস্থা ভালো না। অবশ্য ভালো রাস্তা দেখবার আশা করা বৃথা, এখানে রোডস এন্ড হাইওয়ে চলে এমপির হুকুমে। সেখানে রাস্তায় বালি না ফেলেও কাজ শেষ বলে বিল তুলে ফেলা যায়, অন্তত এখানে রাস্তায় এখনো সামান্য পীচ নাছোরবান্দা আপদের মতো লেপ্টে আছে এটাই উন্নয়নের আলামত। মফস্বলের সব চেয়ারম্যান দৌড়ের উপরে আছে, দেশটা মিলিটারির কব্জায় যাওয়ার পর থেকে অন্তত সাধারণ জীবনযাপন বলে কিছু নেই। কোনো নতুন টেন্ডার ডাকা হচ্ছে না, অন্তত সেখানে লেফট রাইট করা বড় বাবু, মেজ বাবু, সেজ বাবু, ন-বাবুর কোনো পাওনার হিসেব না থাকলে এলজিআরডি কিংবা স্থানীয় পৌরসভাও নতুন কোনো কাজের নির্দেশ দিচ্ছে না। আলামত সে রকমই, অথচ অন্তত ১ বছর আগেই এ রাস্তার গুরুতর মেরামতির প্রয়োজন।
সেই জংধরা টিনের চাল, নীচে বসে থাকা দোকানী, কোনো সুসজ্জিত শো রুম নেই, একেবারে সাদামাটা আয়োজন। মানুষের আড়ালের প্রয়োজন নেই, বিলাসিতা এখানে থাবা বসায় না, যদিও দোকানে দোকানে আকিজ আর এস আলম হানা দিচ্ছে, তবে এরপাশেই বহাল তবিয়তে টিকে আছে লাল আটা, টিকে আছে ডাব আর শুকনা মরিচ। রাস্তায় বৃষ্টির অবশিষ্ট জমে আছে। কেনো যেন মনে হলো স্টেশনের উলটা পাশে বাসা হবে। রিকশা হঠাত করেই বামে মোড় নিলো, সামনেই রেল ঘুণটি, সেখানের সিগন্যাল পেরিয়ে একটু আগালেই বামে বড় বাজার মসজিদ।
অবশেষে তার সাথে দেখা হলো। অনেক অনেক দিন পরে, বলা যায় প্রায় ১৫ মাস পরে দেখা হলো তার সাথে। কিছু কিছু মানুষ তার ছায়ার চেয়ে বড় হয়ে যায়। কখনও কখনও ছায়াও লজ্জ্বা পায় পাল্লা দিতে। বর্তমানের সময়ে অচল মানুষ, সব কিছু আবেগের মূল্যে মাপে। টোটালি মিসফিট! আমার অনেক কিছুই বলার ছিলো, অন্তত শুকনো মুখে ক্ষমা প্রার্থনার মতো গম্ভীর কোনো বাক্য বলা উচিত ছিলো। নেহায়েত ঠাট্টা করতে গিয়ে যতটা আহত করেছি সেটাতে নির্লজ্জ আমোদ পেয়েছিলাম একদিন। অবশ্য সবার বয়েস বাড়ে, ভুলগুলো বড় হয়ে ধরা পরে। তবে তার সাথে দেখা হওয়ার পরে বুঝলাম ক্ষমা প্রার্থনার কিছু নেই, অনেক আগেই ক্ষমা পেয়ে গেছি আমি। সারা রাত পরিকল্পনা করে গলায় তুলে নিয়ে আসা কোকিলকণ্ঠি সুভাষণের অপ্রয়োজনীয়তার বিমুঢ় বোধ করি। এরপরে আসলে কিছুই বলবার নেই।
তার সাথে হেঁটে হেঁটে বাসায় যাচ্ছি। পুরোনো লেখার সুত্রে জেনেছিলাম তার বাসায় ঢুকবার মুখেই নৌকা আর লাঙল। মসজিদ পার হয়ে সামনে গিয়ে বামে ঘুরেও কোনো নৌকা দেখলাম না, দেখলাম না লাঙল। পুরোনো বাসা। বাসার সামনে বিশাল উঠান, উঠানের দুই পাশে অনেক রকম গাছ। সামনে বড় ঝাউ গাছ। অন্তত সেটা যে ক্রিসমাস ট্রি এই ধারণা আমার ছিলো না। এখানের সব কিছুর পেছনেই একটা-না-একটা স্মৃতি জড়িত। মূলত আমাদের শুভ ভাই স্মৃতিতাড়িত মানুষ, তার শৈশব তাকে তাড়া করে, তার পরিচিত মানুষের ভালোবাসা তাকে তাড়া করে, মানুষের নির্মমতাও হাসিমুখে ভুলে যান তিনি অতীতের সুন্দর একটা ক্ষণের কথা ভেবে। তবে এই ক্রিসমাস ট্রি আসলেই অন্য রকম, মানে এই ক্রিসমাস ট্রির পেছনের স্মৃতিটুকু। তার জীবনের প্রথম বই লিখে পাওয়া রয়্যালিটির টাকায় একটা নিজসব স্বপ্নের গাছ কিনে সেটা নিজের উঠানে লাগাতে পারা মানেই একটা স্বপ্ন বুনে দেওয়া। সেই গাছ এতদিনে ডালপালা মেলে বড় হয়েছে, উঠানের প্রতিটা গাছেই তার স্মৃতি আর স্পর্শ্ব লেগে আছে।
অনেক দিনের ইচ্ছা ছিলো এখানে আসবো। আসি আসি করেও আসা হয় নি অনেক দিন, আর মাঝে আমার পুরোনো মোবাইল হারিয়ে যাওয়ায় হয়তো চাইলেও আমার সাথে যোগাযোগ রাখা সম্ভব হয়নি। আমিও আসবো আসবো করে অনেক জায়গায় চলে গেছি, তবে এখানে আসবার মতো সঙ্গ পাইনি। বসবার ঘর পেরিয়ে একেবার তার লেখার ঘরে পৌঁছে গিয়ে ভালোই লাগলো। পরিপাটি মানুষ, সবকিছু সাজিয়ে রাখতে ভালোবাসেন। হয়তো কিছুটা পারফেক্টশনিষ্ট। তার প্রতিটা বইয়ের শব্দের ভেতরেও হয়তো সেই পারিপাট্যবোধ আছে। আমরা লেখককে চিনি তার লেখার মাধ্যমে, সেই লেখার পেছনের কষ্ট আর যন্ত্রনার কথা আমাদের কানে পৌঁছায় না। তার না ঘুমানো দমবদ্ধ অনুভুতির সাথে আমাদের পরিচয় নেই, একটা চরিত্র যখন দরজার চৌকাঠে বসে থাকে সারা রাত, লেখককে পাহাড়া দেয়, সেই সময় লেখক নিজেও অসস্তিতে ঘুমাতে পারে না।
তার ঘরদোরবারান্দা জুড়ে লিখিত অলিখিত চরিত্রেরা সার বেধে বসে থাকে, এইসব মানুষকে পাশ কাটিয়ে লেখককে শোবার ঘরে ফিরতে হয়। তবে সেখানেও অলিখিত চরিত্র অভিমানী চোখে তাকিয়ে থাকে। এই হাজার চোখের ভীড়ে লেখক আরো বেশী আত্মসচেতন হয়ে উঠতে পারেন আবার অনেক সময় মাত্রাতিরিক্ত যন্ত্রণার কামড়ে বিরক্ত হতে পারেন। আনুষ্ঠানিক কোনো সাক্ষাতকার না বরং নিজের কিছু অনুযোগ জানাতেই মূলত কথাটা সৌজন্যতার বাইরে লেখকচারিতায় পৌঁছায়।
অনেক শৈশবের উপকরণ তার লেখার ঘরে ছড়ানো ছিটানো। সেই টিনের স্টিমার, সর্ষে তেলের সলতে জ্বালালে ভটভট ভটভট গামলায় খাবি খেতো। বয়েস হয়ে গেলে এক কাত হয়ে পানিতে নিভে যেতো সলতে, আবার মুছে শুকিয়ে একই গল্প প্রতিদিন। ঘোর বর্ষায় উঠানের ছোট সমুদ্রে স্টিমার ভাসিয়ে দেওয়া, আর সলতে নিভে যাওয়ার পরে সেটা তুলে নিয়ে আসা গোড়ালি ভিজিয়ে। টমটম আর সারেঙ্গী, সেই নাচ পুতুল, একবার ঘুরালেই একটা নাচের ভঙ্গিতে স্থির হয়ে থাকতো। ডাঙ্গুলি আর লাটিম, সব স্মৃতি আঁকড়ে ধরে সেই শৈশবে পড়ে থাকা শুভকে অচেনা লাগে না। কিছু কিছু মানুষের শৈশব কাটে না কখনও। অবশ্য শৈশব ছাড়া মানুষের একান্ত আপন আর কি আছে?
একেবারে নির্ভাবনার সময়, কোথাও কোনো উদ্বেগ আর অস্থিরতা নেই। শৈশব নিজের নিয়মেই ছুটে, কোথাও একটু স্থির হওয়ার আগেই হারিয়ে যায়, সবার অগোচরেই, আমাদের সারাজীবন আমাদের সঙ্গে থেকেও অম্লিন থেকে যায়। এখানে ঘুরে ফিরে আসা, এখানেই জীবনযাপন। ঘুড়ি আর লাটাইয়ের শৈশব, ডাঙ্গুলি আর মার্বেলের শৈশব, গাছ দাপিয়ে বেড়ানো শৈশব, থরে থরে সাজানো থাকে শৈশবের মনি-মানিক্য, শুধু একটু ঝুকে কুড়িয়ে নেওয়া।
আমাদের আগে যারা এ পৃথীবিতে কাটিয়ে গেছেন তাদের জটিলতাহীন জীবন এখন আমাকে অবাক করে, হয়তো একটা সময় অনেক পরের কোনো ছেলে অবাক হয়ে প্রশ্ন করবে আচ্ছে এককালে মানুষ হাতে লিখতো, তারা হাতে লিখতো কেমন করে, অদের কি কিবোর্ড ছিলো না। সেখানে একেবারে শ্লেট পেয়ে যাওয়া ভীষণ রকম কিছু। হুমায়ুন আহমেদ, হুমায়ুন আজাদ আর মানুষের গল্পের বাইরে আমাদের নিজসব গল্প আছে। আমরা একটা সময়ে মন্তব্যে পরস্পরকে স্পর্শ্ব করতে পারতাম...হয়তো আমি জানি না, সেই ছোঁয়াগুলো জমিয়ে রেখেছে শুভ। আমি অনেক আগে একবার নতুন দিনের বাংলা গালির অভিধান শুরু করেছিলাম, সেটা মুছে দিয়েছি সেই দিন তবে সেটার স্মৃতি রয়ে গেছে শুভর কাছে। আমাকে অনেক বার এই প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়েছে, পুনরায় একই প্রশ্নের উত্তর দিতে হলো, আমার চেহারা আমার লেখার সাথে যায় না। আমি ভুল মানুষের চেহারা নিয়ে জন্মেছি। তবে আমার জিগীষা তখনও জাগ্রত।
খাচ্ছি, বা বলা যায় খাবি খাচ্ছি আতিথেয়তার চাপে। খাওয়ার ফাঁকেই প্রশ্নটা ছুড়ে দিলাম, এই যে মফস্বল, এখানের পরিবেশ, সবটা তেমন ভাবে ফুটে উঠলো না কেনো লেখায়? আসলে এই প্রশ্নটার উত্তর খুঁজছিলাম আমি নিজেই। আমাদের শহুরে লেখকদের উন্নাসিকতার পালটা জবাব কি এই মফস্বল মুছে ফেলা প্রবণতা? লোকে মফু বলবে, এই রে তোর গায়ে এখনও ভ্যাদভ্যাদে মফস্বলের গন্ধ লেগে আছে, তাই মফস্বল থেকে বড় লেখক হতে আসা ছেলেটা শহুরে বন্দনায় মুখরিত হয়। ওহ সিলি টাউনশীপ স্পেসশীপের মতো কোনো দূর মহাশুন্যে লটকে থাকে, শহরের জমিনে গেড়ে বসবার সাহস পায় না। কাঞচন গ্রাম গ্রামের পটভূমিতে লেখা হলেও সেটা পড়ে তেমন আনন্দ পাই নি। সেখানের গ্রাম কিংবা মফস্বলে আমার পরিচিত মফস্বলের ছবি নেই। আর পরিচিত যাদের লেখাই পড়ছি শহুরে ফরিয়া চোখে মফস্বল আর গ্রাম দেখার চেষ্টা। আন্তরিক গ্রাম আর মফস্বল অনুপস্থিত, কিংবা আমার পঠনসীমায় যে কয়টা উপন্যাস মনে পড়ছে তার কোনোটাই ঠিক সেই অর্থে মফস্বলকে ধারণ করতে পারেনি।
এখানে চিত্রিত মানুষের শহরের অপভ্রংশ। আমাদের শহুরে সাহিত্যিকদের চিত্রিত গ্রাম আর মফস্বল, বাস্তব চিত্রের মিমিক্রি। শুভর তৈরি জবাব ছিলো তার অযোগ্যতার বিবরণ। তবে আমার নিজের প্রশ্ন যে কারণে, পত্রিকায় সংবাদ পড়ে আবেগে আপ্লুত হয়ে চোখ ভিজে আসা লেখা লিখবার মতো অনুভব যার আছে সে কেনো নিজের জীবনযাপনের নিজের নিঃশ্বাস প্রশ্বাসের জায়গাটাকে সচেতন ভাবে অবহেলা করে যাচ্ছে। বরং এটাই সবচেয়ে সহজ সাধ্য বিষয় তার জন্য। অবশ্য এ প্রশ্নের একটা বিকল্প উত্তরও শুভ দিয়েছে। হয়তো তার নিজের নির্জনতা বজায় রাখবার লোভ, একান্ত নিজের করে পাওয়া এই অনুভবকে বাজারের সবার সামনে উন্মুক্ত করে দেবার দ্বিধা।
সময় গড়াতে থাকে ঘড়ি চলে নিজের মাপে, আমাদের মাপে সময়টা আচমকা ফুরিয়ে যায়। তার নিজের হাতে লাগানো কড়ই গাছ আর তার নিজের পরিবারের প্রতি তার মমত্ববোধ, তার দ্বিধা, তার লজ্জা, তার আক্ষেপ সবটুকু মিলিয়ে জীবন্ত একটা শুভ সবসময়ই চোখের সামনে ভেসে উঠে। তার বনসাই গাছের টবে লেখা আছে এই গাছের মৃত্যুতে আমি আনন্দিত। একটা গাছকে নিজের চাহিদা পুরণের জন্য নিয়মিত অনাহারে-অর্ধাহারে রাখা, তার নিয়মিত ডাল-পালা ছেঁটে দেওয়া, তার বিকাশ এবং বৃদ্ধি একটা নিজস্ব মাপের টবে আটকে ফেলার দুরভিসন্ধি কিংবা চক্রান্ত ব্যর্থ হয়ে যাওয়ার একটা আনন্দ আছে। আমাদের চাহিদা মেটাতে তোমাকে আমাদের তৈরি করা ছাঁচের ভেতরেই বেড়ে উঠতে হবে, এই রকম অনায্য আবদার অস্বীকার করলেও আদতে মানুষ আধিপত্যবাদী। মানুষ নিজের চাহিদা চাপিয়ে দিতে চায়। বনসাই আমাদের এই কতৃত্বপরায়নতার প্রতীক। কথা না বললেও এক একটা স্মৃতিচিহ্ন দেখে আমি বুঝতে পারি এর পেছনের অনুভবটুকু। হয়তো পরিবেশ কিংবা এমনটা ভাববার সাযুজ্যতা। ঘড়ি লাফিয়ে লাফিয়ে আগায়।
আমাদের ট্রেনের সময় হয়ে যায়। উঠে আসতেই হবে আর থাকবার উপায় নেই কোনো। আসবো না আসবো না করে শেষ পর্যন্ত স্টেশনে এসে আমাদের ট্রেনে পর্যন্ত তুলে দিয়ে নিশ্চিত চলে যাওয়ার আনন্দ পেতে চাইল হয়তো। জানি না, ট্রেনের জানালায় হাত ধরবার মুহূর্তে আমি জানতাম এটা শেষ না, আমাদের অনেক কথাই বলা হয়নি, অনেক আলোচনাই করা হয়নি, আমাদের বিনিময় অসম্পুর্ণ রয়ে গেলো। এই সময়ের মানুষের নিয়মিত হিসেবের বাইরে কিছু কিছু ভুল মানুষ এখনও বেঁচে আছে যারা অর্থ আর প্রতিষ্ঠার চেয়ে মানুষের হৃদয়কে সত্যি ভেবে জীবনযাপন করে। ইহলৌকিক নিয়মে তাদের প্রতিষ্ঠার হিসেব মেলানো দুস্কর। তারা হৃদয়ের ঐশ্বর্যে ধনী, জাগতিক প্রতিষ্ঠার মোহ তাদের নেই। এমন ভুলভাল মানুষের কাছে গিয়ে নিজেরও সব কিছু ছেড়ে দিয়ে সাধারণ মানুষ হতে ইচ্ছা করে, এই সব অচল মানুষেরাই হয়তো সভ্যতা সচল করে রাখে আবেগে ভালোবাসায়। সেই ভালোবাসা ছুঁয়ে যায় সংশ্লিষ্ট সবাইকে। এমন এক পরিবেশে সময় কাটাতে ইচ্ছা করে যেখানে সবার জন্য একটা চাটাই পাতা আছে, থাকবেন? থাকেন না ভাই। একটা দিন থেকে যান।এই লোভনীয় আহবান রেখে ফিরে আসবার সময়টা স্তব্ধ হয়ে থাকি।
আমার হাতে দারুচিনির ডাল, আমি অল্প অল্প ভাঙি আর মুখে দেই। ভাবতে থাকি মানুষ কতটা অশালীন রকমের প্রতিষ্ঠাকামী লোভী বর্বর, শালারা গাছের ছাল খুলে, তাকে উলঙ্গ করে বাজারে বিক্রী করে গাছের পোশাক। সে পোশাক মানুষ পয়সা দিয়ে কিনে আর উলঙ্গ গাছ দাঁড়িয়ে থাকে সাজানো বাগানে। আর যার সাথে পরিচয় হলো, তাকে বলবার মতো কিছু নেই, আতিথেয়তার উত্তরে সামাজিক প্রত্যুত্তর না দিয়ে বরং তার জন্য এতটুকু বলা যায়। কোনো-কোনো স্পর্শ্ব অনাবিল আনন্দের অনুভুতি দেয়। কোনো-কোনো প্রথম পরিচয়ে অপরিচয়ের সংশয় থাকে না। বরং পরিচিত মানুষটাকে অনেক দিনের চেনা মনে হয়। এইসব মনে হওয়া সম্পর্কের কোনো নাম হয় না। আমিও সম্পর্ককে কোনো নাম দিতে পারিনি, সামাজিক পরিচয়ে ঠিক কি সম্বোধন উপযুক্ত হবে ভেবে পাইনি।
যতদুরেই যাই, কিছু কিছু মানুষ একেবারে হৃদয়ের কাছাকাছি থেকে যায়। অন্য রকম কষ্টবোধে গলা আটকে আসে, ভেতরে কান্না থাকে না, অনিবার্য বিচ্ছেদের বেদনা থাকে। মুখ ফুটে বলা যায় না আসি কিংবা যাই, সমস্ত পথ ফিরে ফিরে তাকাই, যতদুর দেখা যায়। আদর আর আপ্যায়নের ছাপ মেখে চলে আসতে ইচ্ছা করে না। এখানে এসে মনে হলো, আর কোথাও যাওয়ার নেই, এটাই নিশ্চিত নিরাপদ আশ্রয়। তবুও ডানা মেলে উড়ে যেতে হবে। আমাদের সবার গন্তব্য থাকে, কিংবা আপাত গন্তব্য কিংবা ঘরে ফিরে আসবার দায়। তবু মুছে ফেলা যায় না সেই ছাপ। ভালো থাকুক তারা সবাই, সাময়িক আঁধার কেটে আবার সূর্য্যের আলোতে উদ্ভাসিত হোক তাদের জীবন।"
২. কয়েদী, সমালোচনা:
"আত্মপরিচয় নিয়ে সংকট কাটে না কিংবা আত্মপরিচয়ের গ্লানি বহন করা দুঃসাধ্য বলেই নতুন পরিচয় নির্মাণের চেষ্টা করে মানুষ। এই পরিচয় আর ভাবমুর্তি সংকট এড়ানোর কোনো সামাজিক পন্থা নেই। আমরা মুখে গামছা বেঁধে বেশ্যা বাড়ী যাই, দুপুরে পাঞ্জাবী চাপিয়ে গায়ে আতরচর্চিত তুলো কানে গুঁজে যাই খোতবা শুনতে আর বিকালে রাস্তায় দাঁড়িয়ে শাড়ীর ফাঁক গলে উপচে পড়া যৌবন চাটি এবং আমাদের ভাবমুর্তি নির্মাণ করি। সংকটটা ভয়াবহ। নিজের সাথে নিজের দ্বৈরথ, অবশেষে সমাধান আসে, নিজের ভাবমুর্তি নির্মাণের পর ঢাক ঢোল বাজিয়ে সেই ভাবমুর্তি সবাইকে জানানোর কাজটাও নিজেকেই করতে হয়। আমি এলেবেলে কেউ না আমি সেই জন, সেই রকম একজন অতএব আমার কথা শ্রবণ করো তোমরা।
'আবুল হোসেন'নামের একজন কবি বিদ্যমান ছিলো বলেই আমরা আবুল হাসানকে পাই, জন্ম হয় শামসুর রাহমান, শফিক রেহমানের। একটা সিল মোহর লাগানো নামের বানানে কিংবা একটা বিশিষ্ঠতা নিয়ে আসা নামে। জীবনানন্দ দাশগুপ্ত নিজের গোপনীয়তা উন্মোচন করে গুপ্ত বিদ্যা ভুলে জীবনানন্দ দাশ হয়ে উঠার পন্থাটা এরকমই। হয়তো জীবিত মানুষদের ভেতরে বেশী পরিমাণ স্পর্শকাতর হওয়ায় আত্মপরিচয়ের সংকট শিল্পিদের বেশী আক্রান্ত করে, তাই মহনু শাহ, মুজিব ইরম, ব্রাত্য রাইসু বিভিন্ন রকম ভাব ও ভাঁজ ছড়িয়ে সামনে আসেন আমাদের।আমরা নিজেরাও ভাবমুর্তি নির্মাণ করি।
আহ্লাদ করে আমি প্রেমিকাকে বলতাম কুন্তলা, আমার লেখ্য সম্বোধনের আড়ালে কুন্তলার ভাবমূুর্তি নির্মাণে এত ব্যস্ত ছিলাম যখন অবশেষ অবসর আসলো, ক্লান্তি আসলো, চেনা প্রেমিকাকে তার রচিত ভাবমূর্তির সাথে মেলাতে পারলাম না কোনো ভাবেই।নিজের নামকে কেঁটে ছেটে বানানের হেরফেরে ইতর জনের সাথে স্পষ্ট পার্থক্য গড়ে তোলার প্রক্রিয়াটা মোটেও নিন্দনীয় নয়। কারো কারো আবার জুতসই নাম থাকে, খালেদ মইনুদ্দিন কিংবা মাহবুব কায়সার, এমন নামগুলোর ভেতরে একটা আলাদা ভারিক্কি আছে। কিংবা আধুনিক যুগে এটাই রীতি, 2 পর্বের নাম হতে হয়, আবুল কালাম মোহাম্মদমনজুর মোরশেদ নামটা খারাপ না তবে আধুনিক হয়ে উঠতে পারে নি- আধুনিক হতে হলে ম্যাজিক টাচ দিতে হয় নামে।
আহমাদ মোস্তফা কামালের নামাঙ্কন আমাকে আকৃষ্ট করতে পারেনি, এমনকি এখনও আলোচনার সময় ভুলে শামসুর রহমান বলে ফেলি রাহমানের বদলে। আমাদের চোখ চেনা পরিচয় খুঁজে পায় তাই শামসুর রাহমান যে আসলেই রাহমান এটা নিশ্চিত হই যখন গত বছর একজন জানালো তার নামের বানান আসলে রাহমান। একই কারনে আহমাদ শব্দটা চোখে পড়লে সবার শেষে, আমাদের জনাব গল্প লেখক যে মেদ ঝড়িয়ে উন্মাদের উন কামিয়ে ফেলে পুরো মাদ হয়ে আছেন এটা বুঝতে পারি নি।
আজ যে দুজনের কথা লিখবো তারা দুজনেই নামে অস্ত্রোপচার করেছেন। জনাব আলী মাহমেদ( যদিও নিশ্চিত না এটা মোহাম্মদের শিশ্ন ছেড়া রূপ না মাহমুদের শিশ্নের উত্থান) অন্য জন আহ ম্যাড মোস্তফা কামাল।
আলী মাহমেদের বই পড়া হয়েছে ব্লগের সুবাদে। তার বস্ত্র উম্মোচন পর্ব সমাপ্ত হয়েছে এই বইমেলায়। "কয়েদী" নামের বইটির ঘটনাগুলোও অনেকে পড়েছেন, তবে বইটি কেনো হরতাল বিষয়ক অঘটন সংকলন না হয়ে জাগৃতির ভাষ্যমতো "দেশের একমাত্র হরতাল বিরোধী উপন্যাস" হয়ে উঠলো সেই সমাধান খুঁজে পাই নি এখনও। তাই বিজ্ঞাপনের ভাষ্যমোতাবেক এটাকে হরতাল বিরোধী উপন্যাস হিসেবেই চিহ্নিত করা হবে।
ক্ষীণবপু "কয়েদী" উপন্যাস পড়তে সময় লাগলো 40 মিনিট, যারা আরও দ্রুত পঠনে অভ্যস্ত তাদের হয়তো সময় লাগবে 30 মিনিট।42 পাতার এই উপন্যাসে হরতাল বিষয়ক অঘটন জমা হয়েছে 5টা এবং এগুলো আপাতবিচ্ছিন্ন। বিভিন্ন হরতাল দিনের অলৌকিক মিলন বাদ দিলে অন্য কোনো মিলও খুঁজে পাওয়া যাবে না সাদা চোখে। এবং বিজ্ঞাপন দেখার পর খুঁজে দেখলাম ঘটনাগুলোর উপরে কোনো শিরোনাম নেই- অথর্্যাৎ এটা বিচ্ছিন্ন হরটাল বিষয়ক গল্প নয়।
হরতাল নামক অস্ত্রটা বহুল ব্যভারে ভোঁতা হয়ে গেছে সত্য তবে গনঅনাস্থা প্রকাশের জন্য এক চেয়ে বড় কোনো অস্ত্র নেই এখন পর্যন্ত রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে। শহুরে মধ্যবিত্তের কিয়দংশ ছাড়া আসলে এখন তেমন ভাবে হরতাল উদযাপণ করে না কেউই। হরতালের দিনও বাজার বসে, পণ্যের পসরা সাজানো হয়,গার্মেন্টস ফ্যাক্টারী ফুল প্রোডাকশনে যায়, ইপিজেডও বন্ধ থাকে না। এবং কৃষক শ্রমিক কামার কুমার সবাই দোকান খুলেই বসতে পারে, ক্ষেতে যেতে পারে। এর পরও জামিল আহমেদ নামের এক অতিশয় সংবেদনশীল গার্মেন্টস ব্যবসায়ীর অস্তিত্ব খুঁজে পাই উপন্যাসের পাতায়। এটা গল্প উপন্যাসেই সম্ভব। বাস্তবের পোশাক শিল্পের সাথে যুক্ত মানুষগোলো নুন্যতম মজুরি বাড়ালে না খেয়ে মাঠে মরতে হয়ে এবং দাবী দাওয়া নিয়ে দেন দরবার করে এবং সেখানে জামিল আহমেদের অনুপস্থিতি প্রকট ভাবেই ধরা পড়ে।
সেই সংবেদনশীল জামিল আহমেদ কোনো এক হরতালের দিন তার জাপানী ব্যবসায়ী পার্টনারকে আনতে যান এয়ারপোর্টে-সেবার টানা ১৫ দিন হরতাল ছিলো- এ সময়ই সুশীল সমাজীয় মতের দেখা পাই আমরা উপন্যাসে।
বাংলাদেশ সম্ভবনাময় দেশ, সেই সম্ভবনা নিহত হচ্ছে রাজনৈতিক অস্থিরতায়। হবে হয়তো, পেশাদার আমলাতান্ত্রিক দূর্নীতি আর লাল ফিতার দৈরাত্বে যখন বাংলাদেশর পরিচয় এখানে ব্যবসা শুরু করতে সবচেয়ে বেশী সময় লাগে, যখন কোনো রকম রাজনৈতিক অস্থিরতা ছাড়াই দেশের সাম্প্রতিক এডিপি প্রবৃদ্ধি কমে যায়- তখন সুশীল সমাজের এই মত ন্যাংটা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে অধোবদনে। কিংবা এখন রাজনৈতিক অস্থিরতা নেই এর পরও সাধারন মানুষ বাজার থেকে মুলধন সরিয়ে নিচ্ছে , এই সব অহেতুক কারণগুলোতে রাজনীতি বা হরতাল নেই। দেশে আইনের শাসন সুপ্রতিষ্ঠিত করার জন্য মইন উদ দৌলা দেশের আনাচে কানাচে ঘুরে আমাদের সহবত শিষ্ঠাচার আর ন্যায়নীতির পাঠ দিচ্ছেন,মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা ফখরুদ্দিন বাবুর্চির রন্ধনশালায় সুপক্ক উন্নয়ন সেদ্ধ হচ্ছে,দূর্নীতির ভেজালবিহীন বাংলাদেশ সিদ্ধ হচ্ছে, সিদ্ধ হচ্ছে হলি ডে মার্কেট। আর বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিষের দাম বাড়ছে। তেলের দাম, চালের দাম ডালের দাম, সবজীর দাম বাড়ছে এবং বাড়ছে, কোনো সিন্ডিকেট নেই এর পরও মুল্য ঝুলিয়ে দিলেও পাইকারী বাজারে আর খুচরা বাজারে কোথাও সেই দামে জিনিষ পাওয়া যাচ্ছে না।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্ভবনা রাজনৈতিক অস্থিরতা ছাড়াই খাবি খাচ্ছে যখন নোবেল মেডেল ঝুলিয়ে আসলেন ইউনুস। হরতাল না হলে অবশ্যই উন্নয়নের জোয়ারে আমরা ডুবে মারা যাবো।
সংবেদী জামিল সাহেব জাপানী ভাষায় আমার সোনার বাংলা পড়ে কাঁদতে কাঁদতে শেরাটন হোটেল ছাড়লে চিরতরে হারিয়ে যান এই উপন্যাসের পাতা থেকে। তার চিরবিলুপ্তির দুঃখ ঘুচিয়ে দিতে আসেন সাকিব সাহেব। রেলগাড়ী ঝমাঝম না করে দাঁড়িয়ে থাকে রেল লাইনে, ক্ল্যাস্টোফোবিয়ার জন্ম হয়, তিনি মানসিক অস্থিরতায় শেষ পর্যন্ত রাঁচি কিংবা পিজিতে আশ্রয় নিয়েছেন হয়তো।
এর পর দৃশ্যপটে লেখক দাঁড়ান বুক চিতিয়ে। বাংলাদেশের রাজনীতি আর রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের উপর শ্রদ্ধাবোধ নেই তেমন ভাবে। তাই কোনও নির্দেশনা না দিয়েই লেখক তথ্য-প্রমাণ হাজির করেন হরতাল আসলেই খারাপ। গার্মেন্টস, চিংরী, ট্রাক ভর্তি পন্য সবই আটকে আছে, সীমান্ত অতিক্রম করতে পারছে না, তাই হরতাল খারাপ।
এসব পড়ে মনে হয়, সংবাদ পত্রের পাতায় বাংলাদেশ দেখুন শীর্ষক রচনা প্রতিযোগীতা চলছে। ব্যবসায়ী মহলের কথা আসা, এদের সাথে আসে অর্থনীতি এবং উন্নয়নের প্রলাপ। তবে সংবাদ পত্রে বাংলাদেশ দেখার ভেতরের ভিত্তিহীন আবেগটা ন্যাংটা পাগল হয়ে রাস্তায় ঘুরে। মানুষের সংবেদন জাগানো বা মানুষের চিত্তকে হরতালের প্রতি বিষিয়ে তোলার ক্ষমতা নেই বইটার ভেতরে।
হরতাল বিরোধী এই উপন্যাসে আবেগ সংবেদনশীলতা,মমত্ববোধ, অক্ষমতার আক্ষেপ , সব রকম ট্রাজিক উপাদান ঢুকিয়ে দেওয়ার পরও কোনো এক অজানা কারণে এটা উপন্যাসে উত্তির্ণ হতে পারে না।
ব্যর্থতার কারণ অনুসন্ধান করলে বোধ হয় পারস্পর্যহীনতাকে প্রধান খল হিসেবে চিহ্নিত করা যাবে। গঠন শৈলীতে সমসয়া, সমস্যা ঘটনা নির্মাণে। বিষয়টা অদক্ষ হাতের মোজাইক হয়ে যায় হরতাল দিনের ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন অংশ জুড়ে সামগ্রীক কোলাজ হয়ে উঠে না।
হরতাল আধিক্য অন্য একটা কারণ হতে পারে- কিংবা হরতালজনিত বিপত্তি সংকলন না হয়ে দক্ষ রূপায়নে হরটালের ঘটনাগুলোকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ব্যবহার করা যেতো। মূল উপজীব্য হরতালই হতো তবে চরিত্রগুলোকে আরও ছড়িয়ে দিলে ভালো হতো।
যদি আমি লিখতাম একই ঘটনাগুলো নিয়ে তবে জামিল আহমেদ চরিত্রটাকে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত নিয়ে যেটাম, সেখান থেকে কোনো এক সিগন্যালে জামিল আহমেদের সাথে সাক্ষাৎ করিয়ে দিতাম শহীদ সাহেবকে। সেই রেল লাইন ধরে যেটাম সাকিবের কাছে- সাকিবকে ছুঁয়ে আসতাম লেখকের কাছে- একই মাল মশলা ব্যবহার করে বিভিন্ন বিন্যাসে সাজিয়ে হরতালের বিভীষিকা তুলে ধরার চেষ্টা করতাম।
এখানে এক খাবলা রং ওখানে এক খাবলা এমন না করে বিভিন্ন রং এর প্রলেপ দিতাম যত্ন নিয়ে। নির্মাণ সব সময় পিরামিড হওয়া ভালো, বিশাল ভিত্তি নিয়ে শুরু হবে, ধীরে ধীরে সেটা চুড়ান্ত শীর্ষে আরোহন করবে।"
Thursday, 19 August 2010
Wednesday, 18 August 2010
:)
যোগ বিয়োগ শেখা হয়েছে, হয়নি যোগ বিয়োগ ব্যায়াম শেখা। এই সুযোগটাও এসে গেল! কিন্তু যোগ বিয়োগ শেখার যন্ত্রটার নমুনা দেখে ভরসা পাচ্ছি না। এটায় একবার ঢুকলে ফেরত আসব তো!
Tuesday, 17 August 2010
ভাল লাগা- মন্দ লাগা
সালটা ২০০৭। তখন আমি 'শুভ' নিকে একটা ওয়েবসাইটে চুটিয়ে লেখালেখির নামে ব্লগিং করি। ওখানে আমি এমন একটা প্রোফাইল রেখেছিলাম, আমার সম্বন্ধে কেউ অনুমান করতে পারতেন না। আমি চাচ্ছিলামই এটা, যেন যে কেউ আমার সঙ্গে তার ভাবনা ভাগাভাগি করতে পারেন, মন্তব্য করতে গিয়ে অন্যদের মধ্যে আড়ষ্টতা চলে আসুক এটা আমি চাচ্ছিলাম না।
অনেকে তুই-তুই করেও সম্বোধন করতেন, কেউ-কেউ কেমন করে লেখালেখি করা যায় এই নিয়ে বিস্তর উপদেশও দিতেন। আমি উপভোগ করতাম।
সেবার বইমেলায় কয়েকজনের সঙ্গে সেই প্রথম দেখা হয়েছিল, শামুকের খোলস থেকে সেবারই প্রথম বের হওয়া। হাত-পা নাড়িয়ে খুব কথা বলছিলাম সম্ভবত; কোন ফাঁকে সাকিব আল মাহমুদ আমার ছবি তুলেছিলেন খেয়ালও করিনি। ছবিগুলো তিনি আমার অনুমতি না-নিয়েই পোস্টও করে দিয়েছিলেন।
কাজটা তিনি করেছিলেন মমতায় মাখামাখি হয়ে কিন্তু তখন খানিকটা বিরক্তও হয়েছিলাম, কারণ ছবি পোস্ট করার সূত্রে অনেকে জেনে গেলেন, শুভ বাচ্চা একটা ছেলে না। এরপর থেকে অনেকে আমার লেখায় সতর্কতার সঙ্গে মন্তব্য করতেন, এদের মাঝে অনেকখানি আড়ষ্টতা চলে এসেছিল। আমার উদ্দেশ্য পন্ড হয়েছিল।
সাকিবের পোস্ট: http://www.somewhereinblog.net/blog/sakib/28697700
অনেকে তুই-তুই করেও সম্বোধন করতেন, কেউ-কেউ কেমন করে লেখালেখি করা যায় এই নিয়ে বিস্তর উপদেশও দিতেন। আমি উপভোগ করতাম।
সেবার বইমেলায় কয়েকজনের সঙ্গে সেই প্রথম দেখা হয়েছিল, শামুকের খোলস থেকে সেবারই প্রথম বের হওয়া। হাত-পা নাড়িয়ে খুব কথা বলছিলাম সম্ভবত; কোন ফাঁকে সাকিব আল মাহমুদ আমার ছবি তুলেছিলেন খেয়ালও করিনি। ছবিগুলো তিনি আমার অনুমতি না-নিয়েই পোস্টও করে দিয়েছিলেন।
কাজটা তিনি করেছিলেন মমতায় মাখামাখি হয়ে কিন্তু তখন খানিকটা বিরক্তও হয়েছিলাম, কারণ ছবি পোস্ট করার সূত্রে অনেকে জেনে গেলেন, শুভ বাচ্চা একটা ছেলে না। এরপর থেকে অনেকে আমার লেখায় সতর্কতার সঙ্গে মন্তব্য করতেন, এদের মাঝে অনেকখানি আড়ষ্টতা চলে এসেছিল। আমার উদ্দেশ্য পন্ড হয়েছিল।
সাকিবের পোস্ট: http://www.somewhereinblog.net/blog/sakib/28697700
Monday, 16 August 2010
গুরু, তোমায় সালাম
গভীর চিন্তায় আছি। আমার নামের সঙ্গে 'সদ্য জার্মানি ফেরত' এটা জুড়ে দেব কি না? ওয়াল্লা, এটা যে একটা টাইটেল এটা তো জানতুমই না!
অবশ্য এই নিয়ে খানিকটা ধন্ধেও আছি, সদ্য বলতে ঠিক কতটা সময় বোঝায়? হপ্তা, মাস? কতটা সময় পর্যন্ত এই টাইটেলটা ব্যবহার করা যায়? (হ্যায় কোই মায় কা লাল?)
বটে রে, এই সমাধানটা কবি-উপন্যাসিক-গদ্যকার্টুনিস্ট-কলামলেখক-সাংবাদিক-প্রকৌশলী ও সদ্য আমেরিকা ফেরত আনিসুল হক ব্যতীত আর কে দিতে পরবে...?
অবশ্য এই নিয়ে খানিকটা ধন্ধেও আছি, সদ্য বলতে ঠিক কতটা সময় বোঝায়? হপ্তা, মাস? কতটা সময় পর্যন্ত এই টাইটেলটা ব্যবহার করা যায়? (হ্যায় কোই মায় কা লাল?)
বটে রে, এই সমাধানটা কবি-উপন্যাসিক-গদ্যকার্টুনিস্ট-কলামলেখক-সাংবাদিক-প্রকৌশলী ও সদ্য আমেরিকা ফেরত আনিসুল হক ব্যতীত আর কে দিতে পরবে...?
Sunday, 15 August 2010
ডান-বাম
মাহবুব সুমন আমার এখানে এসেছিলেন সম্ভবত ২০০৮-এ। আমি খানিকটা ভয়ে ভয়ে ছিলাম কারণ সঙ্গে তিনি একজন দাঁতের ডাক্তার নিয়ে এসেছিলেন। এমন একজন যুদ্ধংদেহি মানুষ, সঙ্গে আবার দাঁতের ডাক্তার; একেক করে আমার দাঁতগুলো উপড়ে ফেললে আটকাত কে?
মানুষটা আমার সঙ্গে ছবি না উঠিয়ে উঠালেন গিয়ে এর সঙ্গে (যে তার প্যান্ট সামলাতে জানে না, খুলে পড়ে যাচ্ছে)! ছ্যা, কই এ আর কই আমি!
এখন ওয়েবে ছবি দেয়ার হ্যাপাও কম না। ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও দাউদ হায়দারের ছবি দিতে পারিনি। কীসব জটিলতা!
মাহবুব সুমনের অনুমতি ব্যতীত ছবিটা ছাপিয়ে দিলাম তবে তাঁর ওয়েব নিরাপত্তার কারণে ডান পাশেরটা, না বাম পাশেরটা মাহবুব সুমন এই বিষয়ে বিস্তারিত বলা থেকে বিরত রইলাম।
বিঃ দ্র: আমাকে শত লোভ দেখিয়েও লাভ নাই এই তথ্যটা আমি ফাঁস করব না। আর যাই হোক নীতি বিসর্জন দিতে পারব না।
* মানুষগুলো খাবার আর টয়লেট নিয়ে কেন যে ধস্তাধস্তি করে, কে জানে! : http://www.somewhereinblog.net/blog/sumonmahbubsblog/28834380
মানুষটা আমার সঙ্গে ছবি না উঠিয়ে উঠালেন গিয়ে এর সঙ্গে (যে তার প্যান্ট সামলাতে জানে না, খুলে পড়ে যাচ্ছে)! ছ্যা, কই এ আর কই আমি!
এখন ওয়েবে ছবি দেয়ার হ্যাপাও কম না। ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও দাউদ হায়দারের ছবি দিতে পারিনি। কীসব জটিলতা!
মাহবুব সুমনের অনুমতি ব্যতীত ছবিটা ছাপিয়ে দিলাম তবে তাঁর ওয়েব নিরাপত্তার কারণে ডান পাশেরটা, না বাম পাশেরটা মাহবুব সুমন এই বিষয়ে বিস্তারিত বলা থেকে বিরত রইলাম।
বিঃ দ্র: আমাকে শত লোভ দেখিয়েও লাভ নাই এই তথ্যটা আমি ফাঁস করব না। আর যাই হোক নীতি বিসর্জন দিতে পারব না।
* মানুষগুলো খাবার আর টয়লেট নিয়ে কেন যে ধস্তাধস্তি করে, কে জানে! : http://www.somewhereinblog.net/blog/sumonmahbubsblog/28834380
Saturday, 14 August 2010
অবিচার
আমাদের সময়ে, ঈদে নিয়ম করে স্টুডিওতে গিয়ে ছবি উঠানো ভারী আনন্দময় এক ঘটনা ছিল। ...ব্যতীত এই আনন্দ কোথায়?
কিন্তু সেবার আমার আনন্দ মাটি হয়ে গিয়েছিল কারণ এরা আমাকে রেডিওতে হাত রাখতে দেয়নি। এটা কোন দেশের বিচার, এরা দু-জন রেডিওতে হাত রেখে পোজ দেবে, আমি দিতে পারব না? হোয়াই?
কিন্তু সেবার আমার আনন্দ মাটি হয়ে গিয়েছিল কারণ এরা আমাকে রেডিওতে হাত রাখতে দেয়নি। এটা কোন দেশের বিচার, এরা দু-জন রেডিওতে হাত রেখে পোজ দেবে, আমি দিতে পারব না? হোয়াই?
Friday, 13 August 2010
ভাঁড়
একজন লেখক যখন ভাঁড়ের পর্যায়ে নেমে আসেন তখন ধরে নিতে হয়, দেশটা ভাঁড়ামির কারখানা হয়ে যাচ্ছে।
মানুষটার নির্লজ্জতার শেষ নেই। চুল কুচকুচে কালো করে, ফুলে ফুলে সয়লাব মার্কা শার্ট গায়ে দিয়ে গানের অনুষ্ঠানে হাঁটুর সমান বউকে পাশে বসিয়ে জ্ঞান-অজ্ঞান কথা বলা সম্ভবত হুমায়ূন আহমেদের পক্ষেই সম্ভব।
মানুষটার নির্লজ্জতার শেষ নেই। চুল কুচকুচে কালো করে, ফুলে ফুলে সয়লাব মার্কা শার্ট গায়ে দিয়ে গানের অনুষ্ঠানে হাঁটুর সমান বউকে পাশে বসিয়ে জ্ঞান-অজ্ঞান কথা বলা সম্ভবত হুমায়ূন আহমেদের পক্ষেই সম্ভব।
Thursday, 12 August 2010
ছবির সঙ্গে ফাও নাম
এই ছবি উঠিয়ে কি নীচে নাম লিখে দেয়া হয়? আল্লা মালুম, কোত্থেকে এরা এই পর্দাপ্রথা আমদানি করেছে! ধর্ম অনুসারেও এটা অযৌক্তিক।
Tuesday, 10 August 2010
মুনমুনি-ভুনভুনি-ঝুনঝুনি, আমি সরি মামনি
এই দেশের দু-জন দুধর্র্ষ মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে বাচ্চাদের একটা আঁকাআঁকির অনুষ্ঠান করা হয়েছিল [১]। এই অনুষ্ঠানের মূল দায়িত্বে আমি ছিলাম।
আমাকে যখন বলা হয়েছিল, বাচ্চাদের আঁকাআঁকির বিচারক হওয়ার জন্য । আমি সাফ না করে দিয়েছিলাম কারণ আমার দু-বাচ্চা এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহন করেছিল। এরা এখানে না-আসলে সত্যি সত্যি আমি খুশি হতাম। কিন্তু এতে আমার ইচ্ছা-অনিচ্ছা কোন সুযোগ ছিল না। এমন না এরা খুব ভাল আঁকে কিন্তু এদের স্কুলের প্রয়োজনেই স্কুল কর্তৃপক্ষ এদের এখানে এনেছিল।
বাচ্চাদেরকে এখানে আসার আগেই আমি বলে দিয়েছিলাম, খবরদার, ওখানে কিন্তু আমাকে বাবা বলে ডাকবে না। ডাকলেও লাভ নেই আমি কিন্তু তোমাদের চিনব না। এটা কেবল ফান করে বলা হয়েছিল এমন না, কঠিন করেই বলা হয়েছিল। বাচ্চাগুলো বিশেষ করে মেয়েটা খুব মন খারাপ করেছিল। মনে মনে নিশ্চয়ই বলছিল, বাবাটা এমন নিষ্ঠুর কেন? আমি যে ঠিক করে রেখেছিলাম, আমার অমুক অমুক বান্ধবীকে বাবাকে দেখিয়ে দেখিয়ে কত কিছুই না বলব। আমি সরি, বেটি। এটা তুমি এখন বুঝবে না কেন আমি এই নিষ্ঠুর আচরণ করেছিলাম।
আসলে আমি চাচ্ছিলাম না কোন প্রকারেই আমার বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ উঠুক। কোন বাচ্চাকে যেন নাম দিয়ে চেনা না যায় এই কারণে নাম্বার পদ্ধতি এখানে প্রয়োগ করা হয়েছিল।
কাউকে বলা হয়নি তবুও মিডিয়ার কিছু লোকজন এখানে উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের আগ্রহের শেষ ছিল না কারা আমার বাচ্চা? শেষঅবধি এরা খুঁজে বের করতে পারেননি। হা হা হা।
১. মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে আঁকাআঁকির অনুষ্ঠান: http://www.ali-mahmed.com/2010/06/blog-post_4596.html
আমাকে যখন বলা হয়েছিল, বাচ্চাদের আঁকাআঁকির বিচারক হওয়ার জন্য । আমি সাফ না করে দিয়েছিলাম কারণ আমার দু-বাচ্চা এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহন করেছিল। এরা এখানে না-আসলে সত্যি সত্যি আমি খুশি হতাম। কিন্তু এতে আমার ইচ্ছা-অনিচ্ছা কোন সুযোগ ছিল না। এমন না এরা খুব ভাল আঁকে কিন্তু এদের স্কুলের প্রয়োজনেই স্কুল কর্তৃপক্ষ এদের এখানে এনেছিল।
বাচ্চাদেরকে এখানে আসার আগেই আমি বলে দিয়েছিলাম, খবরদার, ওখানে কিন্তু আমাকে বাবা বলে ডাকবে না। ডাকলেও লাভ নেই আমি কিন্তু তোমাদের চিনব না। এটা কেবল ফান করে বলা হয়েছিল এমন না, কঠিন করেই বলা হয়েছিল। বাচ্চাগুলো বিশেষ করে মেয়েটা খুব মন খারাপ করেছিল। মনে মনে নিশ্চয়ই বলছিল, বাবাটা এমন নিষ্ঠুর কেন? আমি যে ঠিক করে রেখেছিলাম, আমার অমুক অমুক বান্ধবীকে বাবাকে দেখিয়ে দেখিয়ে কত কিছুই না বলব। আমি সরি, বেটি। এটা তুমি এখন বুঝবে না কেন আমি এই নিষ্ঠুর আচরণ করেছিলাম।
আসলে আমি চাচ্ছিলাম না কোন প্রকারেই আমার বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ উঠুক। কোন বাচ্চাকে যেন নাম দিয়ে চেনা না যায় এই কারণে নাম্বার পদ্ধতি এখানে প্রয়োগ করা হয়েছিল।
কাউকে বলা হয়নি তবুও মিডিয়ার কিছু লোকজন এখানে উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের আগ্রহের শেষ ছিল না কারা আমার বাচ্চা? শেষঅবধি এরা খুঁজে বের করতে পারেননি। হা হা হা।
১. মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে আঁকাআঁকির অনুষ্ঠান: http://www.ali-mahmed.com/2010/06/blog-post_4596.html
Friday, 6 August 2010
নির্দয়
জার্মানিতে আমি যাদের বাসায় ছিলাম তাঁদের ওখানে কে ছবিটা উঠিয়েছিল আমার মনে নাই কিন্তু কোন কুক্ষণে এই ছবিটা একজনকে দেখাতে গেলাম। মানুষটা নির্দয়ের মত বললেন, দুইজনের মধ্যে তো কোন পার্থক্য দেখছি না।
আমি তর্ক করতে ছাড়ি না। অন্তত একটা অমিল তো আছে। ওর তো একটা চোখ নাই, বাম দিকেরটা।
যথারীতি কথাটা মাটিতে পড়ার যো নাই। উত্তর এসে হাজির, তোমারও বাম দিকের চোখ আছে এমনটা নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না।
শোনো কথা, আমার বাম দিকের চোখ আছে কি নাই এটা কি আমি জানি না!
Thursday, 5 August 2010
পুত্রধনের আঁকাআঁকি
পুত্রধন (এখন বয়স আট) ব্লগ থেকে দূরে [১] সরে যাওয়ায় আমার খানিকটা ক্লেশ ছিল। আমি জার্মানি যাওয়ার জন্য যেদিন ঢাকা রওয়ানা হলাম সেদিন ও ফোন করল, বাবা পত্রিকায় আমার লেখা ছাপা হয়েছে, কিনে দেখবা কিন্তু।
বাচ্চাদের বিভাগে ওর লেখাটা ছাপা হয়েছিল। ও কখন লেখা পাঠিয়েছিল আমি জানতামও না। এই পত্রিকা নিয়ে আমার এলার্জি আছে। নীতিগত কারণে এই পত্রিকার মালিক, সম্পাদককে আমি পছন্দ করি না। কিন্তু এই বিষয়ে ওকে কিছু বলিনি কারণ আমি চাইনি এখনই ও এই সব অন্ধকার দিক নিয়ে বিভ্রান্ত হোক। সময়ে এ নিজেই সিদ্ধান্ত নেবে।
শিশির আমার অসম্ভব পছন্দের, কী অসাধারণ তাঁর স্কেচের হাত। তাঁর স্কেচগুলো নিয়ে একটা বই আছে। এখান থেকে তাঁর আদলে মাঝে-মাঝে স্কেচ করার চেষ্টা করতাম।
পুত্রধন স্কুলে টুকটাক আঁকাআঁকি করত, কিছু প্রাইজ-টাইজও পেয়েছিল। কিন্তু এখান থেকে কিছু স্কেচ করে ও আমাকে চমকে দিল। আমার সন্তান বলে না, এ গাছে ঝুলাঝুলি না করে স্কেচ নিয়ে ঝুলাঝুলি করলে ভাল করবে।
এখন ভাবছি আমি নিজেই স্কেচ করা ছেড়ে দেব।
সহায়ক লিংক:
১. লেখার অপমৃত্যু: http://chobiblog.blogspot.com/2010/08/blog-post.html
বাচ্চাদের বিভাগে ওর লেখাটা ছাপা হয়েছিল। ও কখন লেখা পাঠিয়েছিল আমি জানতামও না। এই পত্রিকা নিয়ে আমার এলার্জি আছে। নীতিগত কারণে এই পত্রিকার মালিক, সম্পাদককে আমি পছন্দ করি না। কিন্তু এই বিষয়ে ওকে কিছু বলিনি কারণ আমি চাইনি এখনই ও এই সব অন্ধকার দিক নিয়ে বিভ্রান্ত হোক। সময়ে এ নিজেই সিদ্ধান্ত নেবে।
শিশির আমার অসম্ভব পছন্দের, কী অসাধারণ তাঁর স্কেচের হাত। তাঁর স্কেচগুলো নিয়ে একটা বই আছে। এখান থেকে তাঁর আদলে মাঝে-মাঝে স্কেচ করার চেষ্টা করতাম।
পুত্রধন স্কুলে টুকটাক আঁকাআঁকি করত, কিছু প্রাইজ-টাইজও পেয়েছিল। কিন্তু এখান থেকে কিছু স্কেচ করে ও আমাকে চমকে দিল। আমার সন্তান বলে না, এ গাছে ঝুলাঝুলি না করে স্কেচ নিয়ে ঝুলাঝুলি করলে ভাল করবে।
এখন ভাবছি আমি নিজেই স্কেচ করা ছেড়ে দেব।
সহায়ক লিংক:
১. লেখার অপমৃত্যু: http://chobiblog.blogspot.com/2010/08/blog-post.html
Tuesday, 3 August 2010
প্রিয় শিক্ষক
সুবুৎ বণিক। আমার প্রিয় শিক্ষক। তিনি আমার হাইস্কুলের শিক্ষক ছিলেন। পড়ায় আমার মন ছিল না, সবাই যখন স্কুলে যায় আমি তখন স্কুলের নাম করে গোয়াল ঘরে বসে বসে বই পড়ি :) [১]। তখনকার ভাষায় আউট বই। তবুও বিচিত্র কারণে তিনি আমাকে অসম্ভব স্নেহ করতেন।
কখনও কখনও তাঁকে রাগাতে চেষ্টা করতাম কিন্তু রাগ করতেন না। তিনি ছিলেন বিজ্ঞানের শিক্ষক। তাঁর শেখাবার ভঙ্গি ছিল অপূর্ব! একবার কি যেন একটা দোলক সম্বন্ধে বলছিলেন। হাতির মাথা যদি একটা সুতায় বেঁধে ঝুলিয়ে দেয়া হয় ইত্যাদি।
আমি নিরীহ মুখ করে বলেছিলাম, স্যার, আস্ত হাতিটা সুতায় বাঁধলে হবে না?
স্যার বলেছিলেন, হাতি লাগব না। আয়, তোকে বেঁধে দেখাই।
স্যারের সঙ্গে অনেক দিন পর দেখা হয়েছিল। মানুষটা কেমন বুড়িয়ে গেছেন। তখন আমার বড়ো দুঃসময়। অনেকেই আমার হাত ছেড়ে দিয়েছেন। স্যার সেই আগের স্নেহভরা গলায় বলেন, তুমি অহন কিতা করো?
আমি বলি।
নিমিষেই তাঁর চোখ জলে ভরে যায়। শীর্ণ হাত আমার মাথায় রেখে আর্দ্র গলায় বলেছিলেন, চিন্তা কইরো না, সব ঠিক হয়া যাইব। আমি চোখ বন্ধ করে ফেলি। মাঝে মাঝে অসহ্য ভালবাসা সহ্য হয় না।
সহায়ক লিংক:
১. অপকিচ্ছা: http://www.ali-mahmed.com/2009/09/blog-post_02.html
কখনও কখনও তাঁকে রাগাতে চেষ্টা করতাম কিন্তু রাগ করতেন না। তিনি ছিলেন বিজ্ঞানের শিক্ষক। তাঁর শেখাবার ভঙ্গি ছিল অপূর্ব! একবার কি যেন একটা দোলক সম্বন্ধে বলছিলেন। হাতির মাথা যদি একটা সুতায় বেঁধে ঝুলিয়ে দেয়া হয় ইত্যাদি।
আমি নিরীহ মুখ করে বলেছিলাম, স্যার, আস্ত হাতিটা সুতায় বাঁধলে হবে না?
স্যার বলেছিলেন, হাতি লাগব না। আয়, তোকে বেঁধে দেখাই।
স্যারের সঙ্গে অনেক দিন পর দেখা হয়েছিল। মানুষটা কেমন বুড়িয়ে গেছেন। তখন আমার বড়ো দুঃসময়। অনেকেই আমার হাত ছেড়ে দিয়েছেন। স্যার সেই আগের স্নেহভরা গলায় বলেন, তুমি অহন কিতা করো?
আমি বলি।
নিমিষেই তাঁর চোখ জলে ভরে যায়। শীর্ণ হাত আমার মাথায় রেখে আর্দ্র গলায় বলেছিলেন, চিন্তা কইরো না, সব ঠিক হয়া যাইব। আমি চোখ বন্ধ করে ফেলি। মাঝে মাঝে অসহ্য ভালবাসা সহ্য হয় না।
সহায়ক লিংক:
১. অপকিচ্ছা: http://www.ali-mahmed.com/2009/09/blog-post_02.html
Monday, 2 August 2010
লেখার অপমৃত্যু!
এই বান্দর লেখা ছেড়ে এখন গাছে গাছে ঝুলে বেড়ায়!
আমার পুত্রধন যখন ব্লগিং শুরু করল তখন ওর বয়স ছয়। আমি ওকে ঈর্ষা করতাম কারণ ব্লগিং দূরের কথা আমি কম্পিউটার হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেখেছিলাম সাতাশ বছর বয়সে, তাও ৩৮৬ একটা মেশিন। তখন এয়ারপোর্টে কেবল ট্যাক্সই দিতে হয়েছিল ১৮ হাজার টাকা!
তো, ও যে সাইটে ব্লগিং করত ওখানে প্রথম পাতার এক্সেস দিচ্ছিল না অথচ ওখানে ওর প্রায় দেড় বছর হয়ে গিয়েছিল। দিনে দিনে ওর উৎসাহ কমে আসছিল। পারতপক্ষে আমি নিজের কারও জন্য সুপারিশ করতে আরাম পাই না কিন্তু কাজটা আমার কাছে একটা ফাজলামি মনে হচ্ছিল। একটা ছয় বছরের বাচ্চাকে মডারেটরদের ভয় পাওয়া কী আছে? এই নিয়ে কঠিন একটা লেখাও লিখেছিলাম [১]।
ছয় বছরের একটা বাচ্চা তো আর মায়াকোভস্কিকে নিয়ে পোস্ট দেবে না। ওর পোস্ট হতো খুবই সাধারণ। একটা পোস্ট দিয়েছিল এমন:
ওর সাইটে একজন মন্তব্য করেছিলেন, বেশি সহজ হয়ে গেছে
অথচ আমি নিশ্চিত এই ভদ্রলোক সবগুলোর উত্তর চট করে পারবেন না। পারলেও একটা ছ-সাত বছরের বাচ্চার পোস্টে এমন নির্দয় মন্তব্য করার কোন অর্থ হয় না। আবার একজন প্রথমেই ঘটা করে মাইনাসও দিলেন, একটা বাচ্চাকে মাইনাস দিয়ে এই 'বীরপুংগব' কি প্রমাণ করতে চাইলেন, কে জানে! সব মিলিয়ে বেচারার লেখার আগ্রহটাই চলে গেল। কে জানে, হয়তো একজন লেখকের অপমৃত্যু হলো!
সহায়ক লিংক:
১. একজন তদ্বিরকারী এবং একচোখা মডারেটর: http://www.ali-mahmed.com/2009/11/blog-post_15.html
আমার পুত্রধন যখন ব্লগিং শুরু করল তখন ওর বয়স ছয়। আমি ওকে ঈর্ষা করতাম কারণ ব্লগিং দূরের কথা আমি কম্পিউটার হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেখেছিলাম সাতাশ বছর বয়সে, তাও ৩৮৬ একটা মেশিন। তখন এয়ারপোর্টে কেবল ট্যাক্সই দিতে হয়েছিল ১৮ হাজার টাকা!
তো, ও যে সাইটে ব্লগিং করত ওখানে প্রথম পাতার এক্সেস দিচ্ছিল না অথচ ওখানে ওর প্রায় দেড় বছর হয়ে গিয়েছিল। দিনে দিনে ওর উৎসাহ কমে আসছিল। পারতপক্ষে আমি নিজের কারও জন্য সুপারিশ করতে আরাম পাই না কিন্তু কাজটা আমার কাছে একটা ফাজলামি মনে হচ্ছিল। একটা ছয় বছরের বাচ্চাকে মডারেটরদের ভয় পাওয়া কী আছে? এই নিয়ে কঠিন একটা লেখাও লিখেছিলাম [১]।
ছয় বছরের একটা বাচ্চা তো আর মায়াকোভস্কিকে নিয়ে পোস্ট দেবে না। ওর পোস্ট হতো খুবই সাধারণ। একটা পোস্ট দিয়েছিল এমন:
সহজ কু্ইজ
১ কোন ব্যাংকে টাকা নাই?
২ কোন কিল,কিল না?
৩ কোন মড়া,মড়া না?
৪ কোন বিল, বিল না?
৫ কোন পানি ,পানি না?
৬ কোন পান ,পান না?
৭ কোন গান ,গান না?
৮ কোন জামা,জামা না?
৯ কোন মা,মা না?
১০ কোন দেশে মাটি নাই?
১১ কোন জল,জল না?
২ কোন কিল,কিল না?
৩ কোন মড়া,মড়া না?
৪ কোন বিল, বিল না?
৫ কোন পানি ,পানি না?
৬ কোন পান ,পান না?
৭ কোন গান ,গান না?
৮ কোন জামা,জামা না?
৯ কোন মা,মা না?
১০ কোন দেশে মাটি নাই?
১১ কোন জল,জল না?
ওর সাইটে একজন মন্তব্য করেছিলেন, বেশি সহজ হয়ে গেছে
অথচ আমি নিশ্চিত এই ভদ্রলোক সবগুলোর উত্তর চট করে পারবেন না। পারলেও একটা ছ-সাত বছরের বাচ্চার পোস্টে এমন নির্দয় মন্তব্য করার কোন অর্থ হয় না। আবার একজন প্রথমেই ঘটা করে মাইনাসও দিলেন, একটা বাচ্চাকে মাইনাস দিয়ে এই 'বীরপুংগব' কি প্রমাণ করতে চাইলেন, কে জানে! সব মিলিয়ে বেচারার লেখার আগ্রহটাই চলে গেল। কে জানে, হয়তো একজন লেখকের অপমৃত্যু হলো!
সহায়ক লিংক:
১. একজন তদ্বিরকারী এবং একচোখা মডারেটর: http://www.ali-mahmed.com/2009/11/blog-post_15.html
Subscribe to:
Posts (Atom)