আমরা যারা নিরাপদ দূরত্বে থাকি তারা সম্প্রতি সড়কে খুন হওয়া নিথর দেহ দেখে দু-কলম লিখে দায় সারি [১], [২] কিন্তু ছোট-ছোট বাচ্চারা রাস্তায় নেমে পড়েছে। তাদের দাবী বড় কিছু না এরা সরকারের কাছে সমুদ্রও চায়নি, স্যাটেলাইটও না কেবল ন্যায় চেয়েছে আর নিরাপদ সড়ক চেয়েছে। ব্যস, এই!
পুলিশকে এরা নিজের টিফিনের টাকাও দিতে চেয়েছে তবুও যেন সড়ক নিরাপদ থাকে।
আমি যতবার এই দুইটা ছবি দেখি ততবার আমার চোখ ভিজে আসে। একজন দুর্বল মানুষ হলে যা হয় আর কী!
এদের উপর দিয়ে ট্রাক চালিয়ে দিয়েছে। এ্টা দেখার সময় আমার দমবন্ধ হয়ে আসছিল। মনে হচ্ছিল কোনও রগরগে ছবির দৃশ্য এটা। যাক, পরে জানা গেছে ছেলেটা জীবিত আছে।
এর মধ্যে আবার চলে এসেছেন বিচিত্রসব মানুষ! নিজেকে বাচ্চাদের কাছে 'ফেসবুক সেলেব্রেটি' হিসাবে পরিচয় করিয়ে দিতে চেয়েছেন। ফেসবুক সেলেব্রেটি- এত নির্বোধ হয় মানুষ! এই লোক তো 'গাতক-ঘাতক' মাহফুজুর রহমানের সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে!
যথারীতি আবর্জনার হাত ধরে চলে আসে এরাও:
অবশেষে আমাদের নৌমন্ত্রী তার বেহুদা মন্তব্যের জন্য দিয়ার পরিবারের কাছে ক্ষমা চান।
গ্রেফতার করা হয় ঘাতক বাসের মালিককেও।
আমরা যারা খানিকটা পোড় খাওয়া তারা অপেক্ষায় ছিলাম 'জামাত জুজুর' কবে আগমণ হয় এটা দেখার জন্য। খুব একটা অপেক্ষা করতে হয়নি! শুরু হয়ে গেছে।
আচ্ছা, একটা বিষয় জানতে চাচ্ছিলাম এই নৌমন্ত্রী মহোদয় মন্ত্রীর পদের শপথ নিয়ে শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি থাকেন কেমন করে ? আইনমন্ত্রী আনিসুল হক কি ইচ্ছা করলেই এখন আইনজীবী হিসাবে কোর্টে যেতে পারবেন। যদি যান তাহলে কী কোর্টকে প্রভাবিত করা হবে না!
সরকার বাহাদুর আজ সমস্ত স্কুল-কলেজ বন্ধ ঘোষণা করেছেন...।
... ... ...
আজকের প্রথম আলোয় (২ আগষ্ট ২০১৮) 'প্রধানমন্ত্রী, সন্তানদের কথা শুনুন', শিরোনামে আনিসুল হক লিখেছেন, "...রক্তমাখা কেডস, রক্তমাখা স্কুল ইউনিফর্ম। নাহ, আর সহ্য করতে পারছি না। প্রার্থনা করি, এসব যেন আপনার চোখে না পড়ে। পড়লে অবধারিত আপনি সহ্য করতে পারবেন না..."।
আহারে-আহারে! লেখাটা পড়ে 'দরদর' করে আমার এক চোখে জল এক চোখে পানি চলে এলো। (এই লোকগুলো কোন কোম্পানির রঙিন চশমা ইয়েতে মানে চোখে দেয় কে জানে!)
পুলিশের হাত থেকে কেউ-কেউ এই বাচ্চাদেরকে চিলের মত ছিনিয়েও নিয়েছেন:
এই বাচ্চাদের মধ্যে অতি উৎসাহি কেউ-কেউ ঢুকে পড়ছে। প্রথম দিকে কিছু বাস ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এমন একজনকে পাওয়া গেছে যার গায়ে ইউনিফর্ম ছিল না। যাই হোক, এই বাচ্চারাই কাঁচের টুকরা সরিয়েছে:
এরা চলাফেরায় অসমর্থ, অসুস্থদেরকে এগিয়ে যাওয়ার পথ করে দিয়েছে। এই দৃশ্য দেখে চোখ ভিজে আসে কেন, মরণ!
বিচ্ছুরা রসিকও কম না:
পুলিশ স্যারকে সঙ্গে নিয়ে এরা গানও গেয়েছে:
অভুক্ত বাচ্চারা সব রাস্তায় মা কী আর বসে থাকে:
এই বাচ্চারা যখন গাড়ির কাগজপত্র দেখা শুরু করে যে চিত্র বের হয়ে আসে তা ভয়াবহ বললে কম বলা হবে।
পুলিশের গাড়ির লাইসেন্স নাই!
বিচারপতির গাড়ির, প্রধানমন্ত্রীর দফতরের গাড়িরও 'ইয়ে' নাই।!
একটা দেশ দাঁড়িয়ে ছিল কীসের উপর! আমাদের বেতনভুক্ত কর্মচারীরা এতো বছরে কী দায়িত্বটা পালন করেছেন?
আমাদের আইনপ্রনেতা সংসদ সদস্য মহোদয়ের লা্ইসেন্স, গাড়ির কাগজপত্র ঠিক নাই। গাড়ি রেখে হেঁটে-হেঁটে যান।
লাইসেন্স ঠিক নাই আমাদের এই মন্ত্রী বাহাদুরের গাড়ির:
এই দেশের ঝানু একজন রাজনীতিবিদ তোফায়েল আহমেদের গাড়ি উল্টো পথে আসার কারণে বাচ্চারা আটকে দেয়। শত অনুরোধেও এরা গাড়ি ছাড়েনি এটা বলে যে আইন সবার জন্য সমান। অথচ তোফায়েল আহমেদ বলেছেন তিনি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলার জন্য উল্টো পথে এসেছেন। লজ্জা-লজ্জা,এই লজ্জা কই রাখি!
আমি একটা বিষয় খেয়াল করলাম। এই প্রজন্ম খুব ভাল করেই জানে এই দেশের জন্য একজন তোফায়েল আহমেদের প্রকৃত অবদান। একটু খেয়াল করে ভিডিওটা দেখলে বোঝা যাবে যে এরা প্রচুর পড়াশোনা করে। এবং যথাযথ সম্মান দেখাতেও কার্পণ্য করেনি, কিন্তু...।
পুলিশ স্যারও লাইসেন্স দেখান। এ এক দৃশ্য বটে!
এই পুলিশ সদস্য কাগজ দেখাতে পারলেও অধিকাংশ পুলিশের গাড়ির কাজ ঠিক ছিল না।
পুলিশ মহোদয় তার মানিব্যাগ বাচ্চারা নিয়ে গেছে বলে হইচই শুরু করলেন- ওটায় নাকি রাজ্যের সব 'টেকাটুকা', প্রয়োজনীয় কাগজপত্র। ওরে, এরা একালের ছেলেপুলে রে বাপ, এরা ঠিকই ভিডিও করে রেখিছিল। পুলিশ স্যার বমাল ধরা!
দেখো দিকি কান্ড, আটক করার পর পোলাপান র্যাবের গাড়িতে বসে সেলফিও তোলে!
কাগজপত্র না-থাকলে গাড়িটাকে চোরাই গাড়ি না-বলে উপায় কী! স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গাড়ির কাগজ নাই!
হা ঈশ্বর- পোলাপানরা ডিবির গাড়িতে গাঁজাও পেল!:
কাগজ ঠিক নাই ডিআইজি মহোদয়ের গাড়িরও:
ডিআইজি মহোদয়ের বিব্রত মুখ দেখে ভাল লাগে:
হায় মিডিয়া- কাগজ ঠিক নাই চ্যাটাং-চ্যাটাং কথা বলা মুন্নি সাহারও:
এই সচিব মহোদয়েরও গাড়ির কাগজ ঠিক নাই। এর উত্তর না-দিয়ে তিনি যে আলাপ শুরু করলেন এটাকে আমরা খাজুরা আলাপ বলি:
আমাদের সেনাবাহিনী- অতি সুশৃঙ্খল প্রতিষ্ঠান। স্যারেরও লাইসেন্স নাই:
এই সব অতি খারাপ খবরের মধ্যে ভাল খবরও ছিল। যেমন এই দয়াবান পুলিশ অফিসার:
এটা এরা যথার্থই বলেছে এদেরকে আসলেই ইশকুলে ভর্তি করাটা অতীব জরুরি:
মন্ত্রী বাহাদুররা নিজেদের জন্য ভিআইপি লেন চেয়েছিলেন। কোন দিন না কেউ 'ভিআইপি কবর' চেয়ে বসেন এই নিয়ে আমি খানিকটা ভয়ে-ভয়ে আছি। যাগগে, বাচ্চারা ঠিকই ভিআইপি লেন চালু করেছে কিন্তু অ্যাম্বুলেন্সের জন্য:
কিছু কলেজের পিতা নামের শিক্ষকরা তাঁদের সন্তানদের পাশে দাঁড়িয়েছেন কিন্তু কিছু কলেজে ছাত্রদের চোখ লাল করে টিসি ধরিয়ে দিতে চাইলে ছাত্রদের সাফ কথা আমাদের সবাইকে টিসি দিয়ে বের করে দাও:
এই বাচ্চাগুলো গুন্ডাদের হাতে মার খেয়েছে:
গুন্ডারা কেবল বাচ্চাদের গায়ে হাত তুলেই স্থির থাকেনি। অপদস্ত করেছে নারীকেও:
রুখে দাঁড়িয়েছে:
*এই লেখা অসমাপ্ত। প্রয়োজনে এখানে আরও তথ্য যোগ হবে...।
সহায়ক সূত্র:
১. খুনের মিছিল: https://www.ali-mahmed.com/2018/07/blog-post_30.html
২. চলমান দানব এক: https://www.ali-mahmed.com/2018/07/blog-post_90.html
No comments:
Post a Comment