গত বৃহস্পতিবারে হুট করেই ঢাকা যেতে হলো। আমার এক প্রিয় মানুষ হাসপাতালে ভর্তি। যথারীতি আমার পাগলা বন্ধু এবং তার ব্ল্যাক স্ট্যালিয়ন, মতান্তরে 'ফাটফাটিয়া' ওরফে মটর সাইকেল। অন্য এক লেখায় বলেছিলাম, এ হাইওয়েতে ১০০ কিলোমিটারের নীচে চালাতে পারে না! পেছনে আমি কোনক্রমে ঝুলে অনবরত বকা দিতে থাকি।
বেশ অনেকটা পথ সামনে একটা এমবুলেন্স ছিল। আমি একে বলি, দেখ, এইবার আর কোন চিন্তা নাই, এমবুলেন্স আছে। দেখ-দেখ, এর গায়ে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিতও লেখা আছে। এমবুলেন্সে ঠান্ডা বাতাস খেতে খেতে যেতে থাকবি। 'জিন্দা অর মুর্দা' সেটা পরের বিষয়। কে শোনে কার কথা!
স্পর্শ কি মানুষকে স্পর্শ করে? আমি জানি না! হাসপাতালে আমি প্রিয় মানুষটার কপালে হাত রেখে স্থির গলায় বলি, আপনি নাকি জনে জনে বলে বেড়াচ্ছেন আপনি নাকি বাঁচবেন না? আমার ছেলের যে বিয়ের দাওয়াত দিয়েছিলাম এর কি হবে? বিয়েটা খাবে কে শুনি!
মানুষটার মুখে পান্ডুর হাসি, নারে, আমার সময় শেষ।
আমি রাগি গলায় বলি, সময় আপনার শেষ, নাকি আমার এটা আপনাকে কে বলল?
মানুষটা এইবার রেগে যান, ফটফট করিস না। বেশী পন্ডিত হয়েছিস, থাপড়াইয়া কানপট্টি ফাটায়া ফেলব! মাথায় তোর হাতটা দিয়ে রাখ। আরাম লাগছে।
মানুষটার ভাগ্য ভাল, দু-দিন পর হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরে গিয়েছিলেন। ফোনে শব্দও পাই, কুচুরমুচুর করে কি যেন খাচ্ছিলেন।
কপাল, ঢাকা থেকে ঠিক আগে আমার এক আর্টিস্ট বন্ধুর সঙ্গে দেখা হয়ে যায়। এর সঙ্গে দেখাদেখি হোক এটা আমি চাচ্ছিলাম না। এ অনেকবার ফোন করেছে, আমি ইচ্ছা করেই ধরিনি। যখন শুনেছিলাম, এ কানাডা চলে যাচ্ছে এরপর থেকে এর সঙ্গে কথা বলতে আমার ভাল লাগছিল না। কারণ দেশে এ ৭৫ হাজার টাকার উপরে বেতন পেত, গাড়িও কিনেছিল। এখন সব ছেড়ে, জমি বিক্রি করে কানাডা যাচ্ছে।
আজ এর সঙ্গে দেখা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বলেছিলাম, 'তোর মত মানুষকে আমি করুণা করি'।
এর ভেজা চোখ দেখে আর কিছু বলতে ইচ্ছা করেনি- আজ একে কেমন শুকনো, ভঙ্কুর লাগে। এটা কি শেকড় ছেঁড়ার কারণে, আমি জানি না! আমি আঁচ করতে পারি আসলে এর যাওয়ার ইচ্ছা নাই, এ যাচ্ছে এর বউয়ের চাপে। এই মহিলা একজন অতি উচ্চাভিলাষী এবং আমার অসম্ভব অপছন্দের মহিলা। যার চোখভরা নাম-যশের লোভ, আমি কানাডা থাকি হ্যান-ত্যান, বা...।
এ বাসাবোতেই থাকে কিন্তু এর বাসায় যেতে আমি আগ্রহ বোধ করি না কারণ এর বউয়ের সঙ্গে দেখা হবে, কথা বলতে হবে- সে বড়ো কষ্টকর কাজ।
বাসাবোর কাছেই আগমনী সিনামা হলের সামনে আমাদের তিনজনের বেদম আড্ডা জমে উঠে। আমরা ফিরে যাই অনেক ক-টা বছর পেছনে। হঠাৎ এ বলে, 'নড়বি না, তোর একটা ছবি উঠাই'।
ভাল, নড়লাম না! পেছনে 'চাচ্চু আমার চাচ্চু', 'নাম্বার ওয়ান শাকিব খান'- সামনে আমি করি হাসার ভান!
ছবি ঋণ: কাউসার আহাম্মদ খান
ডোবার গভীরতা যেমন খুঁজে লাভ নাই, তেমনি এখানেও। ভারী ভারী লেখা লিখে ক্লান্ত লাগে। এখানে হালকা চালের লেখা লিখে চেপে রাখা শ্বাস ফেলতে পারি। মূলত এই সাইটটা আমার নিজের জন্য এবং অল্প কিছু পছন্দের মানুষদের জন্য। বিচিত্র কারণে যারা আমার দোষ খুঁজে পান না...।
Sunday, 26 September 2010
Thursday, 23 September 2010
সময়ই ঠিক করে দেবে
এখন বিভিন্ন হাবিজাবি কাজে পড়ার সময় কমে গেছে। কিন্তু তিনবেলা খাওয়ার সময়টাতে নিয়ম করে কিছু-না-কিছু পড়া হয়ই! এটা আমার দীর্ঘ দিনের কু-অভ্যাস, প্রতিদিনের রুটিন! এই কারণে মার কম বকুনি খাইনি। ভদ্রমহিলা এই নিয়ে হইচই করে করে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। মুরুব্বিদের মধ্যে নানাও ভারী বিরক্ত হন, পারতপক্ষে তাঁর সঙ্গে আমি খেতে বসি না।
তো, খাচ্ছি-পড়ছি, পড়ছি-খাচ্ছি, আমার কোন সমস্যা হয় না। তবে কখনও এমনও হয়েছে তরকারী ঢাকাই রয়ে গেছে, ছুঁয়েও দেখা হয়নি!
জরুরি কাজে একদিনের জন্য বাসার বাইরে ছিলাম। ফিরে এসে সবে খেতে বসেছি, আমার ছ-বছরের মেয়ের চিল চিৎকার, এতো কষ্ট করে আমি, নষ্ট করে দিলে...ইত্যাদি ইত্যাদি।
সর্বনাশ, একি কান্ড! ডাইনিং টেবিলে যে স্বচ্ছ আবরণ দেয়া আছে এই মেয়েটা দেখি এটাকে ক্যানভাস বানিয়ে ফেলেছে! এ আর জায়গা পেল না? তাহলে এখন আমি খাবোটা কোথায়! আমার মেজাজ শরীফ থাকে এটা বুকে হাত দিয়ে বলতে পারি না কারণ মাটিতে বসে খাওয়ার জন্য না, পড়ার ব্যাঘাত হয় বলে।
তখনি মাথায় এটা আসে, মেয়েটা কি একেঁছে তাতে কী আসে যায়! এটা নষ্ট হতে দেয়া চলে না। তাছাড়া টেবিলটাও খাওয়ার উপযোগী করা প্রয়োজন। যত্ম করে এটা তুলে রেখে দেব। এটা মেয়েটার বিয়ের সময় সঙ্গে দিয়ে দেব।
আমি জানি না সময় এই মেয়েটাকে নিয়ে কি খেলা খেলবে কিন্তু এই মেয়েটা বড় হয়ে আমার মত নির্বোধ হলে তখন আকাশ ফাটিয়ে হাউমাউ করে কাঁদবে। অতিরিক্ত চালাক-চতুর হলে ঠোঁট উল্টে বলবে, বাবাটা কেমন কিপটে হয়েছে, ছি!
এটা সময়ই ঠিক করে দেবে...।
তো, খাচ্ছি-পড়ছি, পড়ছি-খাচ্ছি, আমার কোন সমস্যা হয় না। তবে কখনও এমনও হয়েছে তরকারী ঢাকাই রয়ে গেছে, ছুঁয়েও দেখা হয়নি!
জরুরি কাজে একদিনের জন্য বাসার বাইরে ছিলাম। ফিরে এসে সবে খেতে বসেছি, আমার ছ-বছরের মেয়ের চিল চিৎকার, এতো কষ্ট করে আমি, নষ্ট করে দিলে...ইত্যাদি ইত্যাদি।
সর্বনাশ, একি কান্ড! ডাইনিং টেবিলে যে স্বচ্ছ আবরণ দেয়া আছে এই মেয়েটা দেখি এটাকে ক্যানভাস বানিয়ে ফেলেছে! এ আর জায়গা পেল না? তাহলে এখন আমি খাবোটা কোথায়! আমার মেজাজ শরীফ থাকে এটা বুকে হাত দিয়ে বলতে পারি না কারণ মাটিতে বসে খাওয়ার জন্য না, পড়ার ব্যাঘাত হয় বলে।
তখনি মাথায় এটা আসে, মেয়েটা কি একেঁছে তাতে কী আসে যায়! এটা নষ্ট হতে দেয়া চলে না। তাছাড়া টেবিলটাও খাওয়ার উপযোগী করা প্রয়োজন। যত্ম করে এটা তুলে রেখে দেব। এটা মেয়েটার বিয়ের সময় সঙ্গে দিয়ে দেব।
আমি জানি না সময় এই মেয়েটাকে নিয়ে কি খেলা খেলবে কিন্তু এই মেয়েটা বড় হয়ে আমার মত নির্বোধ হলে তখন আকাশ ফাটিয়ে হাউমাউ করে কাঁদবে। অতিরিক্ত চালাক-চতুর হলে ঠোঁট উল্টে বলবে, বাবাটা কেমন কিপটে হয়েছে, ছি!
এটা সময়ই ঠিক করে দেবে...।
Monday, 20 September 2010
মিছিলে আমিও একজন
একটা অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। অনুষ্ঠান-ফনুষ্ঠানে যাওয়ার খুব একটা ইচ্ছা আমার কোন কালেই তেমন ছিল না। এই অনুষ্ঠানে যাওয়ার কিছু কারণ ছিল- এদের অনেকেই তখন আমাকে নিয়ে যথেষ্ঠ আপত্তিকর কথাবার্তা বলছিলেন। তবুও আমন্ত্রণ পাওয়ার পর না-বলতে পারিনি! কিছু মানুষকে লজ্জা দেয়ারও খানিক গোপন ইচ্ছা ছিল। তাছাড়া সবেমাত্র তখন আমার সাইটটি ববস প্রতিযোগীতায় নির্বাচিত হয়েছে- এমন সময়ে না করাটা অহংকার টাইপের একটা কিছু দাঁড়িয়ে যায়। কারও কাছে ফট করে মনে হবে আমার হাতে পাঁচটার জায়গায় ছ-টা আঙুল গজিয়েছে!
তাছাড়া এখানের অনেকের সঙ্গেই আমি দীর্ঘ সময় লেখালেখি করেছি। তাঁদের জোর দাবী অগ্রাহ্য করা তখন সম্ভবপর হয়ে উঠেনি!
তবে এখন মনে হয়, আমার যাওয়ার সিদ্ধান্তটা ভুল ছিল!
অসুস্থ মানুষকে দেখলে আমি করুণা বোধ করি। কেবল মনে হয়, আহারে-আহারে, এদের চিকিৎসা প্রয়োজন। কিন্তু এই গ্রহে কিছু মানুষ (!) আছে যারা চিকিৎসার বাইরে! এদের প্রতি করুণা বোধ করতেও অনীহা প্রকাশ করি।
ওই অনুষ্ঠানে আমার আচরণ অনেকের চক্ষুশূল হয়েছিল। আমি একটা বড় ধরনের অন্যায় করে ফেলেছিলাম। এই অপরাধে পরবর্তীতে আমাকে নিয়ে অতি কুৎসিত ছবি দেয়া হয়েছে, ততোধিক কুৎসিত কথা বলা হয়েছিল! যিনি এই কাজটি করেছিলেন তার কথা হয়তো ভুলে যাব কিন্তু আমার কাছের মানুষরা-সহযোদ্ধারা, যারা গোল হয়ে দাঁড়িয়ে তখন তামাশা দেখেছিলেন তাদের বিস্মৃত হওয়ার গোপন ইচ্ছা আমার নাই।
আমার অপরাধটা ছিল, 'সামহোয়্যার ইন ব্লগ ডট নেট' এই সাইটের কর্ণধারকে মঞ্চে ডেকে নিয়ে বলেছিলাম, (এমন না এই মানুষটাকে অনুষ্ঠানে আমি ডেকে নিয়ে গিয়েছিলাম- তিনি আমার মতই ওখানে আমন্ত্রিত ছিলেন) "আজ আমি যে জায়গায় দাঁড়িয়ে আছি এর পেছনে এই মানুষটারও অনেকখানি ভূমিকা আছে"।
এটা আমি "শুভ'র ব্লগিং" বইয়ের ভূমিকায় লিখিত আকারে পূ্র্বেও বলেছিলাম। ওদিনও বলেছিলাম, আগামীতেও বলব। এতে কে কি মনে করল এতে আমার বয়েই গেছে- সদর্পে বুড়ো আঙ্গুল তুলে বলি, 'ঠেঙ্গা'। সাদাকে সাদা বলব, কালোকে কালো- কেউ ভাল কাজ করলে তাকে স্যালুট করব, মন্দ কাজ করলে গালি; সমস্যাটা কোথায়!
'আরিল' নামের ভীনদেশি এই মানুষটাই প্রথমে আমাদেরকে বাংলায় লেখালেখি করার সুযোগ করে দেন। এটা একটা অভাবনীয় কাজ হয়েছিল! ওসময় যারা বাংলায় লেখালেখি করতেন তারা আমার চেয়ে ভাল বলতে পারবেন। অবশ্য এটা আমার চেয়ে অনেক প্রয়োজন ছিল প্রবাসে যারা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছেন তাদের জন্যে।
যাগ গে, ওখানে যে অভ্রর মেহেদীও আমন্ত্রিত হয়ে এসেছিলেন এটা আমার জানা ছিল না।
জানলাম এবং যখন মানুষটাকে দেখলাম তখন একটা ধাক্কার মত খেলাম! স্পষ্ট মনে আছে, পাশের একজনকে বলেছিলাম, 'এই পিচ্চি ছেলেটাই মেহেদী'! (এই বাক্যটার জন্য মেহেদীর কাছে আমি ক্ষমা চাচ্ছি)। যদিও ছেলেটা মোটেও পিচ্চি না, তিনি এ বছরই এমবিবিএসের পাট চুকিয়ে ফেলেছেন।
বিভ্রান্ত হওয়ার কারণ আছে। তখন বিজয়ের জনাব, জব্বার বনাম অভ্রর মেহেদী, ধুন্ধুমার কান্ড চলছে। সম্ভবত এর ঠিক আগে আমি বিজয়ের জব্বারের বিপক্ষে কঠিন একটা লেখা লিখেছিলাম [১]। ওই লেখার শিরোনাম ছিল, "আমাদের এই বিজয় মিছিলের পুরোধা অভ্র"।
ওই অনুষ্ঠানে মেহেদীকেও নিয়ে আমার উল্লাসের কমতি ছিল না কারণ মেহেদী এবং তাঁর টিমও একটা অভাবনীয় কাজ করে ফেলেছিলেন, ইউনিকোডে আমাদেরকে অতি সহজে বাংলা লেখার ব্যবস্থা করে দেয়া। যে কারণে আমি বারবার যেটা বলে এসেছি, আমার যে অর্জন এটা কেবল আমার নিজের না, মেহেদী, আরিলের মত অসংখ্য মানুষ জড়িয়ে আছেন এর পেছনে- আমি কেবল তাঁদের সঙ্গে আছি, এই যা...।
*ছবি ঋণ: আসাদ আবদুল্লাহ
সহায়ক লিংক:
১. বিজয় মিছিল, অভ্র: http://www.ali-mahmed.com/2010/04/blog-post_29.html
তাছাড়া এখানের অনেকের সঙ্গেই আমি দীর্ঘ সময় লেখালেখি করেছি। তাঁদের জোর দাবী অগ্রাহ্য করা তখন সম্ভবপর হয়ে উঠেনি!
তবে এখন মনে হয়, আমার যাওয়ার সিদ্ধান্তটা ভুল ছিল!
অসুস্থ মানুষকে দেখলে আমি করুণা বোধ করি। কেবল মনে হয়, আহারে-আহারে, এদের চিকিৎসা প্রয়োজন। কিন্তু এই গ্রহে কিছু মানুষ (!) আছে যারা চিকিৎসার বাইরে! এদের প্রতি করুণা বোধ করতেও অনীহা প্রকাশ করি।
ওই অনুষ্ঠানে আমার আচরণ অনেকের চক্ষুশূল হয়েছিল। আমি একটা বড় ধরনের অন্যায় করে ফেলেছিলাম। এই অপরাধে পরবর্তীতে আমাকে নিয়ে অতি কুৎসিত ছবি দেয়া হয়েছে, ততোধিক কুৎসিত কথা বলা হয়েছিল! যিনি এই কাজটি করেছিলেন তার কথা হয়তো ভুলে যাব কিন্তু আমার কাছের মানুষরা-সহযোদ্ধারা, যারা গোল হয়ে দাঁড়িয়ে তখন তামাশা দেখেছিলেন তাদের বিস্মৃত হওয়ার গোপন ইচ্ছা আমার নাই।
আমার অপরাধটা ছিল, 'সামহোয়্যার ইন ব্লগ ডট নেট' এই সাইটের কর্ণধারকে মঞ্চে ডেকে নিয়ে বলেছিলাম, (এমন না এই মানুষটাকে অনুষ্ঠানে আমি ডেকে নিয়ে গিয়েছিলাম- তিনি আমার মতই ওখানে আমন্ত্রিত ছিলেন) "আজ আমি যে জায়গায় দাঁড়িয়ে আছি এর পেছনে এই মানুষটারও অনেকখানি ভূমিকা আছে"।
এটা আমি "শুভ'র ব্লগিং" বইয়ের ভূমিকায় লিখিত আকারে পূ্র্বেও বলেছিলাম। ওদিনও বলেছিলাম, আগামীতেও বলব। এতে কে কি মনে করল এতে আমার বয়েই গেছে- সদর্পে বুড়ো আঙ্গুল তুলে বলি, 'ঠেঙ্গা'। সাদাকে সাদা বলব, কালোকে কালো- কেউ ভাল কাজ করলে তাকে স্যালুট করব, মন্দ কাজ করলে গালি; সমস্যাটা কোথায়!
'আরিল' নামের ভীনদেশি এই মানুষটাই প্রথমে আমাদেরকে বাংলায় লেখালেখি করার সুযোগ করে দেন। এটা একটা অভাবনীয় কাজ হয়েছিল! ওসময় যারা বাংলায় লেখালেখি করতেন তারা আমার চেয়ে ভাল বলতে পারবেন। অবশ্য এটা আমার চেয়ে অনেক প্রয়োজন ছিল প্রবাসে যারা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছেন তাদের জন্যে।
যাগ গে, ওখানে যে অভ্রর মেহেদীও আমন্ত্রিত হয়ে এসেছিলেন এটা আমার জানা ছিল না।
জানলাম এবং যখন মানুষটাকে দেখলাম তখন একটা ধাক্কার মত খেলাম! স্পষ্ট মনে আছে, পাশের একজনকে বলেছিলাম, 'এই পিচ্চি ছেলেটাই মেহেদী'! (এই বাক্যটার জন্য মেহেদীর কাছে আমি ক্ষমা চাচ্ছি)। যদিও ছেলেটা মোটেও পিচ্চি না, তিনি এ বছরই এমবিবিএসের পাট চুকিয়ে ফেলেছেন।
বিভ্রান্ত হওয়ার কারণ আছে। তখন বিজয়ের জনাব, জব্বার বনাম অভ্রর মেহেদী, ধুন্ধুমার কান্ড চলছে। সম্ভবত এর ঠিক আগে আমি বিজয়ের জব্বারের বিপক্ষে কঠিন একটা লেখা লিখেছিলাম [১]। ওই লেখার শিরোনাম ছিল, "আমাদের এই বিজয় মিছিলের পুরোধা অভ্র"।
ওই অনুষ্ঠানে মেহেদীকেও নিয়ে আমার উল্লাসের কমতি ছিল না কারণ মেহেদী এবং তাঁর টিমও একটা অভাবনীয় কাজ করে ফেলেছিলেন, ইউনিকোডে আমাদেরকে অতি সহজে বাংলা লেখার ব্যবস্থা করে দেয়া। যে কারণে আমি বারবার যেটা বলে এসেছি, আমার যে অর্জন এটা কেবল আমার নিজের না, মেহেদী, আরিলের মত অসংখ্য মানুষ জড়িয়ে আছেন এর পেছনে- আমি কেবল তাঁদের সঙ্গে আছি, এই যা...।
*ছবি ঋণ: আসাদ আবদুল্লাহ
সহায়ক লিংক:
১. বিজয় মিছিল, অভ্র: http://www.ali-mahmed.com/2010/04/blog-post_29.html
Friday, 17 September 2010
ফটোসেশন!
কোথাও বেড়াতে যাওয়ার প্রসঙ্গ আসলেই আমার ঘন ঘন হাঁই উঠে। কোত্থেকে যেন একরাশ আলস্য এসে ভর করে।
কিন্তু এবার আর পার পাওয়া গেল না। কোন কুক্ষণে একজনকে বলেছিলাম, কসবার কথা। আমার অসম্ভব পছন্দের একটা জায়গা। স্টেশনটার পেছনেই ভারত। সারি সারি পাহাড়। যেদিকে দু-চোখ যায় সবুজ আর সবুজ। আর যায় কোথায়!
তিনি সেখানে পদধূলি দেবেন। সঙ্গে আমার বাচ্চা-কাচ্চা, এদের মাতাজিকেও যেতে হবে।
কী আর করা! যেতে হয়। বাচ্চা-কাচ্চা এবং তাদের মাতাজির সঙ্গে ওই মানুষটার ছেলেটাকেও ধরে ছবি তুলতে হয়। ছবি তোলার সময় নিয়ম অনুযায়ী দাঁতও বের করতে হয়। :)
কিন্তু এবার আর পার পাওয়া গেল না। কোন কুক্ষণে একজনকে বলেছিলাম, কসবার কথা। আমার অসম্ভব পছন্দের একটা জায়গা। স্টেশনটার পেছনেই ভারত। সারি সারি পাহাড়। যেদিকে দু-চোখ যায় সবুজ আর সবুজ। আর যায় কোথায়!
তিনি সেখানে পদধূলি দেবেন। সঙ্গে আমার বাচ্চা-কাচ্চা, এদের মাতাজিকেও যেতে হবে।
কী আর করা! যেতে হয়। বাচ্চা-কাচ্চা এবং তাদের মাতাজির সঙ্গে ওই মানুষটার ছেলেটাকেও ধরে ছবি তুলতে হয়। ছবি তোলার সময় নিয়ম অনুযায়ী দাঁতও বের করতে হয়। :)
Friday, 10 September 2010
পালাব কোথায়!
বসে লিখছি। থরথর করে আমার লেখার টেবিল কাঁপছে। ভূমিকম্প গোটা বাড়িটা নাড়িয়ে দিয়েছে এটা বুঝতে পেরেছি তখন, যখন বাসার সবাই বাড়ির বাইরে থেকে চিৎকার করছে, আমি যেন দ্রুত বেরিয়ে আসি।
এই বুড়া বাড়িটার বয়স প্রায় ১০০। আমার প্রাণভয় অনুভব হয় না- আমি চুপচাপ বসে থাকি। কেন, আমি জানি না!
হয়তো এমনটা মনে হয়েছিল, এই বুড়া সর্বদা আমাকে আগলে রেখেছে; এই বুড়াকে ছেড়ে যাবো কোথায়! তাছাড়া এমন বিশাল সমাধি জোটার কপালই বা হয় ক-জনার! হা হা হা...।
এই বুড়া বাড়িটার বয়স প্রায় ১০০। আমার প্রাণভয় অনুভব হয় না- আমি চুপচাপ বসে থাকি। কেন, আমি জানি না!
হয়তো এমনটা মনে হয়েছিল, এই বুড়া সর্বদা আমাকে আগলে রেখেছে; এই বুড়াকে ছেড়ে যাবো কোথায়! তাছাড়া এমন বিশাল সমাধি জোটার কপালই বা হয় ক-জনার! হা হা হা...।
নাইটকুইন, গর্ভিত (!) এক ফুল!
পত্রিকার বড়ো প্রিয় মুখ!
পত্রিকায় ঘটা করে এর ছবি ছাপা হতো, সঙ্গে গর্ভিত (!) গৃহকর্তার ছবি। এই জিনিসটার মনে হয় আগের মত আর দবদবা নাই।
আমার বাসায় নাইটকুইন ফুল কখন ফোটে এর খোঁজ পাই না। ব্যাটারা ফাঁকি দিয়ে বেড়ায়। সকালে দেখি ন্যুজ, কুর্নিশের ভঙ্গিতে।
হে-হে-হে, কি যেন বলে না? প্রতি ডুবে শালুক, চোরের ১০ দিন গেরস্তের- আজ ব্যাটাকে পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে...।
পত্রিকায় ঘটা করে এর ছবি ছাপা হতো, সঙ্গে গর্ভিত (!) গৃহকর্তার ছবি। এই জিনিসটার মনে হয় আগের মত আর দবদবা নাই।
আমার বাসায় নাইটকুইন ফুল কখন ফোটে এর খোঁজ পাই না। ব্যাটারা ফাঁকি দিয়ে বেড়ায়। সকালে দেখি ন্যুজ, কুর্নিশের ভঙ্গিতে।
হে-হে-হে, কি যেন বলে না? প্রতি ডুবে শালুক, চোরের ১০ দিন গেরস্তের- আজ ব্যাটাকে পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে...।
Monday, 6 September 2010
হারানো ছবি এবং...
বেশ আগের কথা। কি কারণে যেন আমার মাথা গরম। আমার নিজের লেখার কিছু প্রসঙ্গেই সম্ভবত মস্তিষ্ক উত্তপ্ত! লিখে জনে জনে ব্যাখ্যা দিতে ভাল লাগছিল না। আমি ভাবলাম, প্রোফাইলে কঠিন-কঠিন ভাব আছে এমন একটা ছবি রাখলে সুবিধে হয়।
কঠিন-কঠিন আদলের দূরের কথা তখন আসলে আমার তেমন কোন ছবিই ছিল না। একজনকে বললাম, 'আমার রাফ এন্ড টাফ একটা ছবি তুলে দে'।
সে তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে অবজ্ঞাভরে বলল, 'কানা, তোর পাওয়ারের চশমা দিয়ে কি ছাতাফাতা রাফ ছবি আসবে, একটা ডার্ক গ্লাস যোগাড় কর'।
ব্যাটা বলেই খালাশ, আমি ডার্ক গ্লাস আনব কোত্থেকে? আমার এন্টিক কালেকশনে ১৯৪২ সালের এই জিনিসটা ছিল, তাই সই। ১৯৪২ সালের ট্যাগটা খুলে ফেলার ব্যবস্থা ছিল না। ট্যাগটাসহ ছবি তোলা হলো।
পরে ছবিটা প্রোফাইল থেকে ডিলিট করে দিয়েছিলাম। আমি ভুলেই গিয়েছিলাম কিন্তু ব্যাটা নচ্ছার গুগল ঠিকই সংরক্ষণ করে রেখেছিল!
ডক্টর আইজউদ্দিন নামের একটা নিক এই ছবিটা যোগাড় করে একটা ওয়েবসাইটে আমাকে নিয়ে নিয়ম করে পোস্ট দিয়ে যাচ্ছেন। আফসোস, বেচারা আমার ট্যাগ লাগানো রোদ-চশমা নিয়ে টানাটানি করছেন না, টানাটানি করছেন আমার পা ধরে।
কেউ আমার সমালোচনা করে লেখা দিলে আমি তেমন গা করি না কারণ আমার লেখা সবার ভাল লাগতেই হবে এমন আশা করাটা বাতুলতা মাত্র। মাঝে-মাঝে কেউ কেউ বলেনও, 'বুঝলেন, আপনার লেখা আমার ভাল লাগে না'।
আমি মাথা নাড়ি, 'আলবত, আমারও ভাল লাগে না। জঘন্য!'।
কিন্তু ডক্টর আইজউদ্দিন নামের নিকটার এই সব লেখায় আমি বিরক্ত কারণ এখানে যুক্তির বদলে অসারতাই প্রকট। মানুষ যখন ক্রোধে অন্ধ হয় তখন যুক্তির খেই হায়ে ফেলে। এই মানুষটা যখন ডয়চে ভেলেকে অতি বিকৃত করে লেখেন তখন তার ক্ষোভের উৎস কোথায় এটা একটা শিশুরও বোঝার বাকী থাকে না। এই মানুষটাই ডয়েচে ভেলের সম্মানটা না-নেয়ার জন্য আমার উদ্দেশ্যে ইনিয়ে-বিনিয়ে লিখেছিলেন।
একটা মিডিয়া, ডয়চে ভেলে যখন আলী মাহমেদকে নির্বাচিত করে তখন সেটা 'ডয়েচে বাল' হয়ে যায়; অন্য একটা মিডিয়া বিবিসি যখন কাউকে হাজার বছরের বাঙালি নির্বাচিত করে তখন সেটা তালগাছ হয়ে যায়।
আজব- কত বুদ্ধি ঘটে...! ফাঁকা করেটি দিয়ে যখন হু হু করে বাতাস বয় তখন কি হুপ-হুপ শব্দ হয়?
*ডক্টর আইজউদ্দিন: http://tinyurl.com/3ywgcug
কঠিন-কঠিন আদলের দূরের কথা তখন আসলে আমার তেমন কোন ছবিই ছিল না। একজনকে বললাম, 'আমার রাফ এন্ড টাফ একটা ছবি তুলে দে'।
সে তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে অবজ্ঞাভরে বলল, 'কানা, তোর পাওয়ারের চশমা দিয়ে কি ছাতাফাতা রাফ ছবি আসবে, একটা ডার্ক গ্লাস যোগাড় কর'।
ব্যাটা বলেই খালাশ, আমি ডার্ক গ্লাস আনব কোত্থেকে? আমার এন্টিক কালেকশনে ১৯৪২ সালের এই জিনিসটা ছিল, তাই সই। ১৯৪২ সালের ট্যাগটা খুলে ফেলার ব্যবস্থা ছিল না। ট্যাগটাসহ ছবি তোলা হলো।
পরে ছবিটা প্রোফাইল থেকে ডিলিট করে দিয়েছিলাম। আমি ভুলেই গিয়েছিলাম কিন্তু ব্যাটা নচ্ছার গুগল ঠিকই সংরক্ষণ করে রেখেছিল!
ডক্টর আইজউদ্দিন নামের একটা নিক এই ছবিটা যোগাড় করে একটা ওয়েবসাইটে আমাকে নিয়ে নিয়ম করে পোস্ট দিয়ে যাচ্ছেন। আফসোস, বেচারা আমার ট্যাগ লাগানো রোদ-চশমা নিয়ে টানাটানি করছেন না, টানাটানি করছেন আমার পা ধরে।
কেউ আমার সমালোচনা করে লেখা দিলে আমি তেমন গা করি না কারণ আমার লেখা সবার ভাল লাগতেই হবে এমন আশা করাটা বাতুলতা মাত্র। মাঝে-মাঝে কেউ কেউ বলেনও, 'বুঝলেন, আপনার লেখা আমার ভাল লাগে না'।
আমি মাথা নাড়ি, 'আলবত, আমারও ভাল লাগে না। জঘন্য!'।
কিন্তু ডক্টর আইজউদ্দিন নামের নিকটার এই সব লেখায় আমি বিরক্ত কারণ এখানে যুক্তির বদলে অসারতাই প্রকট। মানুষ যখন ক্রোধে অন্ধ হয় তখন যুক্তির খেই হায়ে ফেলে। এই মানুষটা যখন ডয়চে ভেলেকে অতি বিকৃত করে লেখেন তখন তার ক্ষোভের উৎস কোথায় এটা একটা শিশুরও বোঝার বাকী থাকে না। এই মানুষটাই ডয়েচে ভেলের সম্মানটা না-নেয়ার জন্য আমার উদ্দেশ্যে ইনিয়ে-বিনিয়ে লিখেছিলেন।
একটা মিডিয়া, ডয়চে ভেলে যখন আলী মাহমেদকে নির্বাচিত করে তখন সেটা 'ডয়েচে বাল' হয়ে যায়; অন্য একটা মিডিয়া বিবিসি যখন কাউকে হাজার বছরের বাঙালি নির্বাচিত করে তখন সেটা তালগাছ হয়ে যায়।
আজব- কত বুদ্ধি ঘটে...! ফাঁকা করেটি দিয়ে যখন হু হু করে বাতাস বয় তখন কি হুপ-হুপ শব্দ হয়?
*ডক্টর আইজউদ্দিন: http://tinyurl.com/3ywgcug
Thursday, 2 September 2010
আমার স্কুল
প্রাইমারিতে পড়ার সময় আমার স্কুল ছিল 'রাধানগর ফ্রি প্রাইমারি স্কুল'।
আমাদের সময় স্কুলটা ছিল একতলা। আমরা প্রাইমারিতে সরকারি স্কুলে পড়েছি কোন সমস্যা হয়নি কিন্তু এখনকার বাচ্চাদের কিন্ডার গার্টেন নামের রোবট বানাবার কারখানায় না-পড়লে পেটের ফাস্টফুড হজম হয় না!
লজ্জার মাথা খেয়ে এও বলতে হয়, আমার সন্তানরাও পড়ে কিন্ডার গার্টেনে। প্রথমদিকে আমার তীব্র আপত্তি ছিল। এখন নাই কারণ আপত্তি করে লাভ নাই। আমার আপত্তির মুখে আমাকে যেটা বলা হতো, তুমি যে লেখাপড়া করেছো এখন এইসবের দাম নাই। নায্য কথা! কারণ আমি কিছুই হতে পারিনি, জজ-ব্যারিস্টার-চাপরাসি।
প্রাইমারিতে পড়াশোনার সময়কার বেশ কিছু স্মৃতি আছে। 'লুড্ডু স্যার' নামে আমার একজন টিচার ছিলেন তাঁর ভাল নাম কালের গর্ভে হারিয়ে গিয়েছিল। তাঁর এই বিচিত্র নামকরণের কারণটাও বিচিত্র। তাঁর নাকি লাড্ডুম গাছের নীচে বাসা তাই এই নাম চালু হয়ে গিয়েছিল। লাড্ডুম থেকে লুড্ডু!
তো, স্যার 'পিটাপিটি'-র জন্য কুখ্যাত ছিলেন, মোটামুটি স্কুলের ত্রাস! তাঁর পছন্দের কিছু হুমকি ছিল, 'পিঠে জালি বেত ভাঙ্গুম, পিঠের চামড়া দিয়া গুড্ডি উড়ামু' ইত্যাদি।
একদিনের কথা। সেদিন তাঁর ক্লাশ নাই কিন্তু শিক্ষকদের বসার রুম থেকে বেরিয়ে এলেন, হাতে জালি বেত। আমাদের ক্লাশে এসে ঘনঘন বেতটাকে বাঁকা করছেন আর মুখে বলছেন, 'তোরার খবর আছে, বুঝলি, হুম, বুঝলি...'।
ঠাস করে বেতটা ভেঙ্গে গেল। তিনি হতভম্ব হয়ে বেতটার দিকে তাকিয়ে আছেন। আমরা অতি কষ্টে বেদম হাসি চেপে স্যারের ভাঙ্গাচোরা মুখটা উপভোগ করছি।
স্যার অহেতুক কাশি কাশতে কাশতে শিক্ষকদের রুমে অর্ন্তধান হলেন। এবার আমাদের হাসি আটকায় কে!
Subscribe to:
Posts (Atom)