Sunday, 26 September 2010

তোমায় করুণা করি

গত বৃহস্পতিবারে হুট করেই ঢাকা যেতে হলো। আমার এক প্রিয় মানুষ হাসপাতালে ভর্তি। যথারীতি আমার পাগলা বন্ধু এবং তার ব্ল্যাক স্ট্যালিয়ন, মতান্তরে 'ফাটফাটিয়া' ওরফে মটর সাইকেল। অন্য এক লেখায় বলেছিলাম, এ হাইওয়েতে ১০০ কিলোমিটারের নীচে চালাতে পারে না! পেছনে আমি কোনক্রমে ঝুলে অনবরত বকা দিতে থাকি।
বেশ অনেকটা পথ সামনে একটা এমবুলেন্স ছিল। আমি একে বলি, দেখ, এইবার আর কোন চিন্তা নাই, এমবুলেন্স আছে। দেখ-দেখ, এর গায়ে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিতও লেখা আছে। এমবুলেন্সে ঠান্ডা বাতাস খেতে খেতে যেতে থাকবি। 'জিন্দা অর মুর্দা' সেটা পরের বিষয়। কে শোনে কার কথা!

স্পর্শ কি মানুষকে স্পর্শ করে? আমি জানি না! হাসপাতালে আমি প্রিয় মানুষটার কপালে হাত রেখে স্থির গলায় বলি, আপনি নাকি জনে জনে বলে বেড়াচ্ছেন আপনি নাকি বাঁচবেন না? আমার ছেলের যে বিয়ের দাওয়াত দিয়েছিলাম এর কি হবে? বিয়েটা খাবে কে শুনি!
মানুষটার মুখে পান্ডুর হাসি, নারে, আমার সময় শেষ।
আমি রাগি গলায় বলি, সময় আপনার শেষ, নাকি আমার এটা আপনাকে কে বলল?
মানুষটা এইবার রেগে যান, ফটফট করিস না। বেশী পন্ডিত হয়েছিস, থাপড়াইয়া কানপট্টি ফাটায়া ফেলব! মাথায় তোর হাতটা দিয়ে রাখ। আরাম লাগছে।
মানুষটার ভাগ্য ভাল, দু-দিন পর হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরে গিয়েছিলেন। ফোনে শব্দও পাই, কুচুরমুচুর করে কি যেন খাচ্ছিলেন।

কপাল, ঢাকা থেকে ঠিক আগে আমার এক আর্টিস্ট বন্ধুর সঙ্গে দেখা হয়ে যায়। এর সঙ্গে দেখাদেখি হোক এটা আমি চাচ্ছিলাম না। এ অনেকবার ফোন করেছে, আমি ইচ্ছা করেই ধরিনি। যখন শুনেছিলাম, এ কানাডা চলে যাচ্ছে এরপর থেকে এর সঙ্গে কথা বলতে আমার ভাল লাগছিল না। কারণ দেশে এ ৭৫ হাজার টাকার উপরে বেতন পেত, গাড়িও কিনেছিল। এখন সব ছেড়ে, জমি বিক্রি করে কানাডা যাচ্ছে। 
আজ এর সঙ্গে দেখা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বলেছিলাম, 'তোর মত মানুষকে আমি করুণা করি'।

এর ভেজা চোখ দেখে আর কিছু বলতে ইচ্ছা করেনি- আজ একে কেমন শুকনো, ভঙ্কুর লাগে। এটা কি শেকড় ছেঁড়ার কারণে, আমি জানি না! আমি আঁচ করতে পারি আসলে এর যাওয়ার ইচ্ছা নাই, এ যাচ্ছে এর বউয়ের চাপে। এই মহিলা একজন অতি উচ্চাভিলাষী এবং আমার অসম্ভব অপছন্দের মহিলা। যার চোখভরা নাম-যশের লোভ, আমি কানাডা থাকি হ্যান-ত্যান, বা...।

এ বাসাবোতেই থাকে কিন্তু এর বাসায় যেতে আমি আগ্রহ বোধ করি না কারণ এর বউয়ের সঙ্গে দেখা হবে, কথা বলতে হবে- সে বড়ো কষ্টকর কাজ।
বাসাবোর কাছেই আগমনী সিনামা হলের সামনে আমাদের তিনজনের বেদম আড্ডা জমে উঠে। আমরা ফিরে যাই অনেক ক-টা বছর পেছনে। হঠাৎ এ বলে, 'নড়বি না, তোর একটা ছবি উঠাই'।

ভাল, নড়লাম না! পেছনে 'চাচ্চু আমার চাচ্চু', 'নাম্বার ওয়ান শাকিব খান'- সামনে আমি করি হাসার ভান!


ছবি ঋণ: কাউসার আহাম্মদ খান 

No comments: