Monday 20 September 2010

মিছিলে আমিও একজন

একটা অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। অনুষ্ঠান-ফনুষ্ঠানে যাওয়ার খুব একটা ইচ্ছা আমার কোন কালেই তেমন ছিল না। এই অনুষ্ঠানে যাওয়ার কিছু কারণ ছিল- এদের অনেকেই তখন আমাকে নিয়ে যথেষ্ঠ আপত্তিকর কথাবার্তা বলছিলেন। তবুও আমন্ত্রণ পাওয়ার পর না-বলতে পারিনি! কিছু মানুষকে লজ্জা দেয়ারও খানিক গোপন ইচ্ছা ছিল। তাছাড়া সবেমাত্র তখন আমার সাইটটি ববস প্রতিযোগীতায় নির্বাচিত হয়েছে- এমন সময়ে না করাটা অহংকার টাইপের একটা কিছু দাঁড়িয়ে যায়। কারও কাছে ফট করে মনে হবে আমার হাতে পাঁচটার জায়গায় ছ-টা আঙুল গজিয়েছে!
তাছাড়া এখানের অনেকের সঙ্গেই আমি দীর্ঘ সময় লেখালেখি করেছি। তাঁদের জোর দাবী অগ্রাহ্য করা তখন সম্ভবপর হয়ে উঠেনি!

তবে এখন মনে হয়, আমার যাওয়ার সিদ্ধান্তটা ভুল ছিল!
অসুস্থ মানুষকে দেখলে আমি করুণা বোধ করি। কেবল মনে হয়, আহারে-আহারে, এদের চিকিৎসা প্রয়োজন। কিন্তু এই গ্রহে কিছু মানুষ (!) আছে যারা চিকিৎসার বাইরে! এদের প্রতি করুণা বোধ করতেও অনীহা প্রকাশ করি।
ওই অনুষ্ঠানে আমার আচরণ অনেকের চক্ষুশূল হয়েছিল। আমি একটা বড় ধরনের অন্যায় করে ফেলেছিলাম। এই অপরাধে পরবর্তীতে আমাকে নিয়ে অতি কুৎসিত ছবি দেয়া হয়েছে, ততোধিক কুৎসিত কথা বলা হয়েছিল! যিনি এই কাজটি করেছিলেন তার কথা হয়তো ভুলে যাব কিন্তু আমার কাছের মানুষরা-সহযোদ্ধারা, যারা গোল হয়ে দাঁড়িয়ে তখন তামাশা দেখেছিলেন তাদের বিস্মৃত হওয়ার গোপন ইচ্ছা আমার নাই।

আমার অপরাধটা ছিল, 'সামহোয়্যার ইন ব্লগ ডট নেট' এই সাইটের কর্ণধারকে মঞ্চে ডেকে নিয়ে বলেছিলাম, (এমন না এই মানুষটাকে অনুষ্ঠানে আমি ডেকে নিয়ে গিয়েছিলাম- তিনি আমার মতই ওখানে আমন্ত্রিত ছিলেন) "আজ আমি যে জায়গায় দাঁড়িয়ে আছি এর পেছনে এই মানুষটারও অনেকখানি ভূমিকা আছে"।

এটা আমি "শুভ'র ব্লগিং" বইয়ের ভূমিকায় লিখিত আকারে পূ্র্বেও বলেছিলাম। ওদিনও বলেছিলাম, আগামীতেও বলব। এতে কে কি মনে করল এতে আমার বয়েই গেছে- সদর্পে বুড়ো আঙ্গুল তুলে বলি, 'ঠেঙ্গা'। সাদাকে সাদা বলব, কালোকে কালো- কেউ ভাল কাজ করলে তাকে স্যালুট করব, মন্দ কাজ করলে গালি; সমস্যাটা কোথায়!
'আরিল' নামের ভীনদেশি এই মানুষটাই প্রথমে আমাদেরকে বাংলায় লেখালেখি করার সুযোগ করে দেন। এটা একটা অভাবনীয় কাজ হয়েছিল! ওসময় যারা বাংলায় লেখালেখি করতেন তারা আমার চেয়ে ভাল বলতে পারবেন। অবশ্য এটা আমার চেয়ে অনেক প্রয়োজন ছিল প্রবাসে যারা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছেন তাদের জন্যে।

যাগ গে, ওখানে যে অভ্রর মেহেদীও আমন্ত্রিত হয়ে এসেছিলেন এটা আমার জানা ছিল না।

জানলাম এবং যখন মানুষটাকে দেখলাম তখন একটা ধাক্কার মত খেলাম! স্পষ্ট মনে আছে, পাশের একজনকে বলেছিলাম, 'এই পিচ্চি ছেলেটাই মেহেদী'! (এই বাক্যটার জন্য মেহেদীর কাছে আমি ক্ষমা চাচ্ছি)। যদিও ছেলেটা মোটেও পিচ্চি না, তিনি এ বছরই এমবিবিএসের পাট চুকিয়ে ফেলেছেন।
বিভ্রান্ত হওয়ার কারণ আছে। তখন বিজয়ের জনাব, জব্বার বনাম অভ্রর মেহেদী, ধুন্ধুমার কান্ড চলছে। সম্ভবত এর ঠিক আগে আমি বিজয়ের জব্বারের বিপক্ষে কঠিন একটা লেখা লিখেছিলাম [১]। ওই লেখার শিরোনাম ছিল, "আমাদের এই বিজয় মিছিলের পুরোধা অভ্র"।


ওই অনুষ্ঠানে মেহেদীকেও নিয়ে আমার উল্লাসের কমতি ছিল না কারণ মেহেদী এবং তাঁর টিমও একটা অভাবনীয় কাজ করে ফেলেছিলেন, ইউনিকোডে আমাদেরকে অতি সহজে বাংলা লেখার ব্যবস্থা করে দেয়া। যে কারণে আমি বারবার যেটা বলে এসেছি, আমার যে অর্জন এটা কেবল আমার নিজের না, মেহেদী, আরিলের মত অসংখ্য মানুষ জড়িয়ে আছেন এর পেছনে- আমি কেবল তাঁদের সঙ্গে আছি, এই যা...।

*ছবি ঋণ: আসাদ আবদুল্লাহ

সহায়ক লিংক:
১. বিজয় মিছিল, অভ্র: http://www.ali-mahmed.com/2010/04/blog-post_29.html

No comments: