Tuesday 19 October 2010

শৈশব ফিরে আসে, বারবার

কিছু লোকজন এসেছেন আমার এখানে বেড়াতে। স্কুল দেখাটাও এই বেড়াবার সঙ্গে যুক্ত। এদের একজন হচ্ছেন, 'স্বরহীন'। একটা ওয়েব সাইটে আমি যখন 'শুভ' নামে লেখালেখি করতাম ওখানে এই ভদ্রমহিলার নিক ছিল স্বরহীন। আমি ফাজলামী করে বলতাম, স্বরহীন দিদির গলায় স্বর নাই, চিঁ চিঁ করে কি বলেন কিছুই তো বুঝি না!
সম্প্রতি ইনি পিএইচডি করে আমেরিকা থেকে ফিরেছেন। সুখের বিষয় হচ্ছে, দেশেই থিতু হবেন বলে স্থির করেছেন। পুরনো দিনের হাবিজাবি কথায় দিন পার হয়। এক ফাঁকে এখানে আসা হয়!

আমার শৈশবের একটা বড়ো অংশ কেটেছে এই জায়গাটায়, বছরের-পর-বছর। অজস্র স্মৃতিতে মাখামাখি হয়ে আছে জায়গাটা। হায় স্মৃতি, এই স্মৃতিই একজন মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে নইলে মানুষ কবে মরে ভূত হয়ে যেত!

এটা খাদ্য গুদামের একটা বাংলো। এখন এখানে কেউ থাকে না। আমার বাসা থেকে খুব একটা দূরে না কিন্ত আসা হয়নি বহু বছর! আজ এদের কল্যাণে আসা হলো, কত বছর পর! কেবলই মনে হচ্ছিল শৈশবটাকে হাত বাড়ালেই যেন ছুঁতে পারি...। 

Friday 15 October 2010

ছাত্র আছে, শিক্ষক আছে- স্কুল নাই!

স্কুলে ভর্তি হওয়ার জন্য যে কেউ আসলে আমি না করি না। বাচ্চার মা মদ বিক্রি করে নাকি আলকাতরার হালুয়া তাতে আমার কী আসে যায়! 
স্টেশনের স্কুলটায় নিয়ম করে আমার থাকা হয়। একে দেখি সুড় সুড় করে স্কুলে ঢুকছে। আহা, বেচারা বড়ো আশা নিয়ে এসেছে কিন্তু একে শেখাবার মত জ্ঞান আমার নাই।

ব্লগ-ভুবনে স্বঘোষিত এমন বেশ কিছু ডাক্তার টাইপের লোকজন আছেন যাদেরকে আমি প্রকৃত জ্ঞানী মনে করি। ওইসব স্যাররা শেখান কে কেমন করে হাঁটবে, কে কেমন নাচবে ইত্যাদি। এরা আবার ভয়ে কাত হন না যদি জ্ঞান গড়িয়ে পড়ে।
স্যাররা যেদিন এদের জন্য স্কুল খুলবেন সেদিন এই বেচারাকে ওখানে পড়তে বলব। এই মুহূর্তে একে না বলতে খানিকটা দুঃখিতই হলাম...।  

Thursday 14 October 2010

ব্ল্যাকবোর্ড!

আমি পূর্বের এক লেখায় লিখেছিলাম, স্কুল-বেলায় ব্ল্যাকবোর্ড [১] আমার জন্য কেমন ভীতিকর ছিল। আমার সাবকনশাস মাইন্ডে এর ছাপ রয়ে গিয়েছিল কি না আমি জানি না, বাসায় কয়েকটা জায়গায় ব্ল্যাকবোর্ড লাগিয়ে রেখেছি। দস্তুরমতো চক-ডাস্টার সবই থাকে। আমার নিজেরটা এখন অন্য কাজে ব্যবহার হয়, পিন দিয়ে জরুরি কাগজ-টাগজ ঝোলাই।

বাচ্চাদেরটায় এরা স্কুলের লেখা লিখতে এখন আর আগ্রহ বোধ করে না। মেয়েটা এক কাঠি সরেস, এ আঁক না কষে আঁকাআঁকি করে। সচরাচর ছয় বছরের বাচ্চাদের আঁকার বিষয় থাকে ছাতা-আম-গ্রামের দৃশ্য। এ এর ধারেকাছেও নেই। এ আঁকে জটিল ডিজাইন, অন্তত এর বয়স বিচার করলে। পরে এটা নাকি কাপড়ে ব্লক-প্রিন্ট করবে।

আমাদের কারও কোন সমস্যা নাই, সমস্যা বাচ্চাদের মাতাজির। বাসায় ব্ল্যাকবোর্ড লাগানো দেখে তিনি চিড়বিড় করে বলেছিলেন, বাসাটা আর বাসা থাকল না। ব্ল্যাকবোর্ডে বাচ্চারা আঁকে, লাফায় আর বাচ্চাদের মাতাজি হিসহিস করেন, নিজে উচ্ছন্নে গেছে এখন বাচ্চাদেরও...।

*ব্ল্যাকবোর্ড: http://www.ali-mahmed.com/2010/10/blog-post_13.html

Friday 8 October 2010

নৌকা ডুবে যায়, আমাকে ভাসিয়ে

আজ সকাল থেকেই ঝুম বৃষ্টি। সকাল থেকে বৃষ্টি, কথাটা খানিক ভুল বললাম, রাতভর, দিনভর- মনে হচ্ছে আকাশ ফুটো হয়ে গেছে!
আগেও লিখেছিল, এমন বৃষ্টির দিনে আমি কোথাও যেতে চাই না, এমন কি মরতেও চাই না [১]। কাদায় মাখামাখি হয়ে শব নিয়ে টানাটানি বড়ো বিচ্ছিরি, ছি!
লেখক-টেখকরা বৃষ্টি নিয়ে অনেক কেরামতি করেন। আমাদের হুমায়ূন আহমেদ সাহেবের একটা লেখা ক-দিন আগে পড়লাম, বৃষ্টি হচ্ছে অথচ তিনি বৃষ্টিতে ভিজছেন না এমনটা নাকি অচিন্তনীয়! এমন কি তিনি নাকি বসে বসে বজ্রপাতও দেখেন! মাগো!
যাগ গে, লেখকদের লেখক হওয়ার অনেক হ্যাপা। তারা বৃষ্টি গুলে সরবত বানিয়ে খাক এতে আমার কী!

বৃষ্টি আমার জন্য বড়ো যন্ত্রণার! আকাশ ক্রমশ অন্ধকার হয়, তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ে আমার অস্থিরতা! প্রকৃতির প্রভাব তার এই দুর্বল সন্তানের উপর দানবীয়! কী কান্ড, পুরুষ মানুষ কী একটা কুত্তা যে ভেউ ভেউ করে কাঁদবে? পাগল!

উঁচু রেললাইন থেকে বিপুল পানি নেমে উঠোনটা দেখি পানিতে ছয়লাব- ছোটখাটো একটা পুকুর হয়ে আছে। আমি হাতে কিল মেরে আমার দু-সন্তানকে বলি, চল, কাগজের নৌকা বানিয়ে ভাসাই।
আমার উল্লাস এদের তেমন স্পর্শ করে না। বড়োটা বলে, নাহ, থাক। ছোটটারও অগ্রজের মত অবিকল ভঙ্গি, নাহ...।
কাগজের নৌকা বানাতে গিয়ে দেখি এখনও ভুলিনি! আমার নিজের মস্তিষ্ক নামের জিনিসটার প্রতি তেমন একটা ভক্তি নাই! আশ্চর্য, কত প্রয়োজনীয় তথ্য হারামজাদা মনে রাখতে পারে না অথচ এই অপ্রয়োজনীয় জিনিসটা ঠিকই মনে রেখেছে! মানে কী এর? মস্তিষ্ক নামের জিনিসটা কী হাবিজাবি-গার্বেজ সব জমিয়ে রেখেছে?

আমার এই সব নিয়ে ভাবার সময় কোথায়, আমার নৌকা যে তরতর করে এগিয়ে যাচ্ছে- সটান, ঋজু। আমি দিব্য চোখে দেখতে পাচ্ছি, আমার সন্তানরা চোখ বড় বড় করে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে, বাবা নামের এমন একজন এমনটা করছে কেন? কাগজের নৌকা নিয়ে এতোটা উল্লসিত হওয়ার কী আছে! ব্যাটাদের এই সব বুঝিয়ে বলতে বয়েই গেছে আমার। বড় হয়ে পারলে বুঝবে, না পারলে বুঝবে না।

সহসাই আমার নৌকার আয়ু ফুরিয়ে আসে। ডুবে যায়, আমার আয়ু বাড়িয়ে দিয়ে...।

*ছবি স্বত্ব: সংরক্ষিত

সহায়ক লিংক:
১. আমি কোথাও...: http://www.ali-mahmed.com/2009/07/blog-post.html   

Friday 1 October 2010

কাটাকাটি-কাটাকুটি

বাসার লোকজনরা আমার উপর বিরক্ত কারণ কোন দিন কোন পত্রিকা রাখব এটা আমি নিজেও আগাম জানি না। যেটায় মনে হয় আমার কাজের খবর আছে সেটাই সচরাচর আনা হয়। আমার কাজের খবর দিয়ে অন্যদের কাজ কী!
এবং রাতের মধ্যে কেউ পত্রিকা না-পড়ে থাকলে সেই পত্রিকা পরের দিন পড়ার কোন যো থাকে না। কেবল এক পাতারই নমুনা দাঁড়ায় অনেকটা এই রকম:

আমার অনেক বছরের অভ্যাস, দরকারী খবরটা কেটে রেখে দেই, কখনও চোখ বুলিয়ে, কখনও-বা মনোযোগ সহকারে পড়ে। যা আমার জানার জন্য বা লেখালেখির জন্য কাজে লাগে।
যেদিন কাটাকাটি করার জন্যে একটা খবরও থাকে না সেদিন সরোষে পত্রিকাটা ছুঁড়ে ফেলি, অনেকটা, 'হাওয়া মে উড়তা যায়ে...'।

এখনও লেখা হয়নি এমন পেপার কাটিংয়ের বস্তা জমে গেছে। এগুলো দেখে দেখে প্রায়শ বুক থেকে চাপা কষ্ট উঠে আসে, আহ, হাত আর দু-চারটা থাকলে মন্দ হতো না। আসলে হাতের দোহাই দিয়ে লাভ নাই- মানুষটাই আমি অনেকটা অলস প্রকৃতির।